রমজান ঘিরে বাজার স্থিতিশীল রাখতে রোজার আগেই ভারত থেকে চিনি ও পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এ দুই পণ্য আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজরের পেঁয়াজ আমদনিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তনি করবে, সেটা আমরাও শুনেছি। তিনি জানান, পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন রপ্তানি করবে ভারত। তবে ভারতের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রজ্ঞাপন এখনো হয়নি। প্রজ্ঞাপন হলে আমরা পুরোপুরি জানতে পারব।
এদিকে হিলি স্থলবন্দরে উদ্ভিদ গণনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি রমজানের আগেই আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রমজানে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা এ তথ্য শোনার পর সোমবার সকাল থেকেই ভারতীয় আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করছেন। তিনি বলেন, খুব স্বল্পসময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা এলসি খুলে এ দুটি পণ্য ভারত থেকে আমদানি শুরু করবে।
দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ হারুন জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা এ দুটি পণ্য আমদানি করে দেশের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অবৈধ মজুত রেখে বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল করছে। এ কারণেই ভারত থেকে পণ্য দুটি আমদানি করে বাজার দর সহনশীল রাখতে আমদানিকারকরা সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশেও সরকারিভাবে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সোমবার দেশটির ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সেখানে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতির বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নয়াদিল্লি। দেশটির সরকার কী পরিমাণ পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য ওই কর্মকর্তা জানাতে পারেননি বলে জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস।
প্রসঙ্গত, পবিত্র রমজানে দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ ও চিনি রপ্তানি করতে ভারতের সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লেখে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের ডিসেম্বরে স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় দফায় আগামী মার্চ পযন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় দেশটি। রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে দেশটির সরকার প্রথমে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তারপরও আশানুরূপ ফল না মেলায় পেঁয়াজের রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ভারত।