ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্লোগান ঘিরে লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লেখা তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছে। ‘অসমাপ্ত’ সেই লেখাটি সামনে আসার পর তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
লেখাটি সাদাসিধে কথা নামে তার নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘কোটা’ শিরোনামে লেখাটা শুরু করলেও তা শেষ করেননি জাফর ইকবাল। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, লেখার মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে দাবি করেছে বলে জানতে পারেন। তখন তিনি লেখাটি সেখানেই শেষ করে দেন।শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে স্লোগান দিয়েছেন জানার পর জাফর ইকবালের লেখার গতিপথও ভিন্নদিকে গেছে। সেখান থেকে নিচের অংশে তিনি লিখেছেন, ‘ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবী করেছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না। এটি কী সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবী করতে পারে? শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান?’তিনি আরও লেখেন, ‘এই ছাত্র-ছাত্রীরা কী জানে, চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতেই থাকার অধিকার নেই।’একটু জায়গা রেখে তার নিচের প্যারা জাফর ইকবাল লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবো না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’
কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না। মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা মেধাবী না, যত সব রাজাকারের নাতি-পুতিরা মেধাবী?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ঘিরে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘তুমি কে, আমি কে; রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে; স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এরপর থেকেই স্লোগানটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শুরু।