জানা গেছে, ঢাকার বাসাবোতে ১৯ মায়াকাননে ভারটেক্স শখের মহল বাড়িতে ৫ম তলায় রয়েছে দেড় কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। বনশ্রীতে রয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি। রয়েছে ৩৭ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেটকার। যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ ১৬-৮১৩১।
গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায় রয়েছে ১০০ বিঘার উপর জমি। এছাড়াও রোকনুজ্জামানের নিজ, স্ত্রী ও সন্তানের নামে বেনামে সম্পদ। এমন আলাদিনের চেরাগের গল্পের মত বদলে গেছে রোকনের জীবন হাল।কোটিপতি বনে যাওয়া রোকনুজ্জামান পাসপোর্ট অফিসে সরকারি চাকুরীতে প্রবেশ করার পর থেকে শুরু সম্পদ বানানোর নেশা।
প্রতিদিন ৫০০-৬০০ আবেদন জমা পড়ে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। আর ওইসব আবেদন গ্রহণ করে স্বাক্ষর করে দেন পরে তা বায়োমেট্রিকের জন্য পাঠানো হয়। আর প্রতিটি আবেদন থেকে পাসপোর্ট অফিস পায় ১২শ’ টাকা।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি আবেদন দালালদের নামে ইমেইল আইডি থাকে। নিদিষ্ট কোন দালালের ইমেইল না থাকলে তা ছলছাতুরি করে ফেরত দিয়ে দেন। এই আবেদন পুনরায় দালালের মাধ্যমে আসলে তা গ্রহণ করা হয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত চলছে পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ বাণিজ্য।
পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক লোক জানান, ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে হয় ৬-৭ হাজার টাকায়। আর ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে হয় ৯-১০ হাজার টাকায়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে না আসলে আবেদন গ্রহণ করেন না। ফলে বাধ্য হয়ে দালালদের মাধ্যমেই আবেদন করতে হয়। অফিস চলাকালীন পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে বাইরে কমপক্ষে ২০-৩০ জন দালালের আনাগোনা করতে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট অফিসে প্রায় রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করার গোপন তথ্য পাওয়া যায়। গত ১৪ জুলাই রবিবার একটি রোহিঙ্গা মেয়ে রাবেয়া বসরি নামে পাসপোর্ট করতে আসলে তার ভুয়া এনআইডি কার্ড হওয়ায় ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু পাসপোর্টের অফিসের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে অথবা পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। দিনব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে। এক পর্যায়ে চিহ্নিত হয় যে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন করে তার নাম। অবশেষে রোহিঙ্গা মেয়েটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে জনতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় রাফী, নয়ন, ইমরান, ইব্রাহিম, বরকত সহ বেশ কয়েকজনের একটি দালাল চক্র বিভিন্ন জেলার ঠিকানা দিয়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড বানিয়ে রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করে দেয়। আর এসব দুর্নীতির মূল হোতা উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান। এই রোকনুজ্জামান ৩-৪ লাখ টাকা কন্টাক্ট করে রোহিঙ্গাদের এনে পাসপোর্ট করে দেন। এমনি করে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে রাজি হননি নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী রোকনুজ্জামান।