রোকনুজ্জামানের হাতে যেন সোনার কলম। স্বাক্ষর করলেই ১২০০ টাকা পেয়ে যান। রূপকথার গল্পের মত মনে হলেও তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।
এভাবেই প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ স্বাক্ষরে ৫-৬ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করছেন উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করার মত দূর্নীতিতেও তুঙ্গে তারা। দূর্নীতি ঘুষ বাণিজ্য লাগামহীন হয়ে পড়েছে। উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হক এবং উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামানের এই ঘুষ বাণিজ্যের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন শত শত পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৫০০-৬০০ আবেদন জমা পড়ে। প্রতিটি আবেদন থেকে ১২শ’ টাকা করে নেওয়া হয়। টাকা না দিলে আবেদন ফেরত দিয়ে নানান ভাবে হয়ারানি করে পাসপোর্ট কর্মকর্তারা। সে হিসেবে প্রতিদিন ৫-৬ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য চলছেই। এর আগে বহুবার দূর্নীতি দমন কমিশন অভিযান করলেও থামছে তাদের দূর্নীতি। সম্প্রতি দূর্নীতির সংবাদ প্রচার করায় পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ করেছিলেন উপপরিচালক। এ নিয়েও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
এবার জানা যাক কিভাবে আবেদন জমা পড়ে, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের ছত্রছায়ায় ২০-৩০ জন দালাল কাজ করে। প্রতিটি আবেদনে প্রত্যেক দালালের ইমেইল যুক্ত থাকে। নিদিষ্ট দালালদের ইমেইল না থাকলে ওই ফাইলে স্বাক্ষর না করেন আবেদনটি ফেরত দিয়ে দেন উপসহকারী রোকনুজ্জামান। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়ছে চরমে।
পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক লোক জানান, ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে হয় ৬-৭ হাজার টাকায়। আর ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে হয় ৯-১০ হাজার টাকায়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে না আসলে আবেদন গ্রহণ করেন না। ফলে বাধ্য হয়ে দালালদের মাধ্যমেই আবেদন করতে হয়। অফিস চলাকালীন পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে বাইরে কমপক্ষে ২০-৩০ জন দালালের আনাগোনা করতে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট অফিসে প্রায় রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করার গোপন তথ্য পাওয়া যায়। ১৪ জুলাই রবিবার একটি রোহিঙ্গা মেয়ে রাবেয়া বসরি নামে পাসপোর্ট করতে আসলে তার ভুয়া এনআইডি কার্ড হওয়ায় ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু পাসপোর্টের অফিসের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে অথবা পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। দিনব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে। এক পর্যায়ে চিহ্নিত হয় যে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন করে তার নাম। অবশেষে রোহিঙ্গা মেয়েটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে জনতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় রাফী, নয়ন, ইমরান, ইব্রাহিম, বরকত সহ বেশ কয়েকজনের একটি দালাল চক্র বিভিন্ন জেলার ঠিকানা দিয়ে ভুয়া এনআইডি কার্ড বানিয়ে রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করে দেয়। আর এসব দুর্নীতির মূল হোতা উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান। এই রোকনুজ্জামান ৩-৪ লাখ টাকা কন্টাক্ট করে রোহিঙ্গাদের এনে পাসপোর্ট করে দেন। এমনি করে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। পরবর্তী প্রতিবেদনে রোকনুজ্জামানের অবৈধ সম্পদ তুলে ধরা হবে।