যথাযথ মর্যাদার সাথে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস। এ উপলক্ষে বুধবার কলকাতা বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়।
এরপর কলকাতার ৩, সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রের সামনে থেকে প্রভাতফেরি বের হয়। হাতে নানা বর্ণের পোস্টার, ফুলের মালাসহ প্রভাতফেরিতে হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ছাড়াও অসংখ্য মানুষ অংশ নেয়। প্রভাতফেরি কলকাতার পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড ধরে পৌঁছায় উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে।
এরপরে মিশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে সালাম-বরকত-জব্বারদের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন, প্রথম সচিব (বাণিজ্য) শামসুল আরীফ, প্রথম সচিব (ভিসা) আলমাস হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা। সেই সাথে মিশন প্রাঙ্গণে ‘মুজিব মঞ্চে’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের পাশপাশি আলাদা আলাদাভাবে শহীদ বেদীতে ফুল দিয় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব, কলকাতা প্রেসক্লাব, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি, বাংলাদেশ বিমান, সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
পরে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রেরিত এক বাণী পাঠ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় মিশন প্রাঙ্গণে। এদিন বিকালে মিশন প্রাঙ্গণে একটি সেমিনার ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন কলকাতাস্থ বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন ‘বাংলা আমার তৃষ্ণার জল’।
এদিন বিকালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার সারা রাতব্যাপী অনুষ্ঠান করেছে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। মঙ্গলবার বিকাল থেকেই কলকাতার রবীন্দ্রসদন লাগোয়া একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে রাণুছায়া মঞ্চে শুরু হওয়া সারা রাতব্যাপী বাংলা ভাষা উৎসবে নাটক, বাউল, লোক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহারের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পীরাও যোগদান করেন। বুধবার সকালে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে সেই অনুষ্ঠানের শেষ হয়।
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের অন্যতম স্থলবন্দর পেট্রাপোল-বেনাপোলের জিরো পয়েন্টে। সেখানেও বনগাঁ পৌরসভার উদ্যোগে পেট্রাপোল বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে শহীদদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন দু’দেশের প্রতিনিধি ও ভাষা প্রেমীরা।
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও ভারত বাংলাদেশসহ অন্যা দেশের অন্য ভাষাভাষি শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে বাংলা ভাষার গান গেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি সম্পন্ন করে। বিশেষ এই দিনটিকে মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের জেলা ও মহুকুমাগুলোতে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে ‘অমর একুশে’। এ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাব, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ মর্যাদার সহিত এই বিশেষ দিনটি পালন করা হচ্ছে।