‘আমার ৭টা গরু আছে। সেগুলো পানিতে ভেসে আছে। এর শেষ কি তা আমি জানি না। আল্লাহ রাখলে রাখব, না রাখলে কি করুম।’
সোমবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ছয়টায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চল চরকলাতলীয় বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন নিজের গরুগুলোর বিষয়ে এমনটাই জানান।
মো. লোকমান হোসেন জানান, আমাদের ঘরে রোববার দুপুর থেকে পানি। এতে পরিবারের সদস্যরা ঘরের পাটাতনে আশ্রয় নিয়ে আছেন। শেষ রাতের দিকে পানি একটু কমে আসলেও সকাল ৯-১০টার দিকে জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন নি কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তবে লোক অনুপাতে অত্যান্ত অপ্রতুল।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে মুঠোফোনের চার্জ হারিয়ে অনেকে হয়ে পড়েছেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঢাকা থেকে গ্রামে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পাড়ার কথাও জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র রোববার রাত ৮টার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সদরের বাসিন্দা ছানাউল্লাহ ভোর সাড়ে চারটায় জানান, সেখানে ভোররাত ৪টা থেকে প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সবার ঘরের নিচতলায় খাল ও নদীর পানি প্রবেশ করেছে। তিনি এর এর আগে কখনো এই এলাকায় এ ধরনের বন্যার পানি দেখেননি।
আবহাওয়া অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল উপকূলে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এতে কলাপাড়া, খেপুপাড়া, রাঙ্গাবালি, বরগুনা, পাথরঘাটা, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখানসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও তা ৬ থেকে ৭ ফুট ওপর দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে।
পটুয়াখালীর খপুপাড়া রাডার স্টেশনের ইনচার্জ আব্দুল জব্বার শরীফ জানিয়েছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল হয়ে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি ৫-৬ ঘণ্টা উপকূলে থাকতে পারে। যা জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিবায়ু উপকূলবাসীকে ক্ষতির মুখে ফেলবে।’
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে বিভাগের ছয় জেলায় তিন লাখের মতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদী উপজেলা নদী তীরবর্তী হওয়ায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কালীন ও পরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় পানির উচ্চতা আরো বেড়েছে।’