বাবা ফেরি করে সবজি বিক্রি করতেন বাসায় বাসায় ঘুরে। আট সদস্যের বিশাল পরিবার। সবার মুখে আহার তুলে দিতে বাবা প্রতিদিন হাড়-কাঁপানো পরিশ্রম করতেন। বাবার এই পরিশ্রমেও যখন সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যেত, তখন মা আড়ালে বসে কান্না করতেন।
এরপর মা বিভিন্ন বাসবাড়িতে কাজ করেছেন দুমুঠো খাবার ও কিছু টাকার বিনিময়ে। মা অন্যের বাসা থেকে যে খাবার পেতেন, সেটা না খেয়ে কাপড়ের আঁচলে লুকিয়ে আমাদের জন্য নিয়ে আসতেন।
বড় দুই বোনের বিয়ে হলো। ভাইয়েরা সংসারে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করত।
২০১০ সালের দিকে মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমি রণে ভঙ্গ দিলাম। বাবা প্রতিদিন বিকেলে হাটে গিয়ে শাক-সবজি কিনে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন। আমি বাবার সঙ্গে ডালায় করে সবজি বিক্রি করতাম।
মা বলতেন ‘পড়াশোনাটা কর, বাবা।
কষ্ট হলেও তোর পড়াশোনা চালিয়ে নেব।’ নুন আনতে পান্তা ফুরায় পরিবারে। মন বসল না আর পড়াশোনায়। বাবার সঙ্গে আমিও শহরে ফেরি করে সবজি বিক্রি করতে লাগলাম। কিন্তু হেঁটে হেঁটে সবজি বিক্রি করেও সংসারে আর তেমন উন্নতি হচ্ছিল না।
পরে একটি ভাতের হোটেলে কাজ নিলাম তিন বেলা খাওয়া ও ৫০ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু বছরখানেক পর সে কাজ ছেড়ে দিই। পরে একই হোটেলের সামনে একটি চায়ের স্টল নিলাম ভাড়ায়। মা চেয়েছিলেন, আমি যেন পড়াশোনাটা চালিয়ে যাই। একসময় জানলাম, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আছে। পরে সেখানে ভর্তি হলাম। তত দিনে বড় দুই ভাই বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছে। চা বিক্রি করতে করতেই মায়ের ইচ্ছা পূরণে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করলাম। এখন ডিগ্রিতে ভর্তি হব। ছোট বোনও ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত।
২০২৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাবা মৃত্যুবরণ করে। তখন থেকে মা আর ছোট বোনকে নিয়ে আছি। মাকে কখনো বলা হয়নি—‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার সঙ্গে বাকিটা জীবন সুখে-শান্তিতে কাটাতে চাই।’