বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে গ্রাহকেরা। রিচার্জ করার সময় তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে ১২ গুণ দীর্ঘ ডিজিট চাপতে হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে ভুল হচ্ছে। তিনবার ভুল হলেই মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে এ সমস্যা বেশি। এছাড়া মাঝে মধ্যে সার্ভার জটিলতার কারণে মিটারে রিচার্জ করা যাচ্ছে না। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তারা। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে তাদের।
ওজোপাডিকো রাজবাড়ী অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পিডিবি) গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক সংখ্যা ৬৮ হাজার। এই ৬৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছে ৩১ হাজার গ্রাহক। বাকি গ্রাহকগুলো এনালগ মিটার দিয়েই চলছে। বর্তমানে প্রিপেইড মিটার না থাকায় নতুন গ্রাহকদের এনালগ মিটারগুলো দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত রোববার (৩১ মার্চ) রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা মিটার রিচার্জ করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। সকাল ৯টার পর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ বন্ধ ছিল। এতে অনেক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছিল। মিটার রিচার্জ না করতে পারাই অনেকের বাসাবাড়ি ও অফিস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর বিনোদপুর ঘাস বাজার এলাকায় অবস্থিত ওজোপাডিকোর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই থেকে তিনশ গ্রাহকের সিরিয়াল। সবাই প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করতে এসেছেন। কেউ এসেছে আবার টোকেন নম্বর নিতে। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদ থেকে তারা মিটার রিচার্জ করতে না পেরে কোনো উপায় না পেয়ে তারা ওজোপাডিকোর অফিসে এসে রিচার্জ করছে। এর মধ্যে অনেক গ্রাহকের বাড়িতে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের মিটার রিচার্জ করতে হয়েছে।
রাজবাড়ী বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন বিষ্ণু বলেন, আমার মিটারে টাকা শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পরবর্তী নিজের বিকাশ একাউন্ট থেকে রিচার্জ করতে গিয়ে দেখি টাকা রিজার্জ হচ্ছে না। পরে বাজারের মধ্যে একটি বিকাশ এজেন্টে গিয়ে রিজার্জ করতে গেলে তারা বলে যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্জ হচ্ছে না সার্ভারে সমস্যা দেখাচ্ছে। পরে আমি ঘাস বাজার ওজোপাডিকোর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে ১ ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মিটারে রিচার্জ করেছি। ততক্ষণে আমার দোকান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। রিচার্জ করার পর বিদ্যুৎ আসে।
রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আগে বিদ্যুতের রিচার্জ করতে গেলে ২০টি সংখ্যা আসত। ওই সংখ্যা সহজে রিচার্জ করা যেত। এখন ১০০টি সংখ্যা আসছে। সবকটি লিখে রিচার্জ করতে হচ্ছে। এতে ভুল হচ্ছে, মিটারও লক হয়ে যাচ্ছে। রিচার্জেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর এক কর্মকর্তা প্রিপেইড গ্রাহকদের ভোগান্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে এই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ সমস্যা সাধারণত একবার হয়। মিটার লক বা অন্য কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানালেই ঠিক করে দেয়া হবে।
রাজবাড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-অর-রশিদ বলেন, অনেক সময় সার্ভার জটিলতার কারণে মিটারে রিচার্জ করা যায় না। এটা বিকাশ/রকেট/নগদের সমস্যা হতে পারে আবার আমাদের সার্ভার ইস্যুও হতে পারে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে রিচার্জ না করা গেলে আমাদের ওজোপাডিকোর অফিসে গিয়ে করা যাবে। এছাড়া প্রিপেইড মিটারের যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলো দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।