নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের শিমরাইলের চিটাগাং রোড এলাকায় মহাসড়ক ও মার্কেটের সামনে ফুটপাত এবং সরকারি জায়গা দখল করে চাঁদা তোলে মাসুদ নামের এক চাঁদাবাজ। স্থানীয় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজ মাসুদ নামে পরিচিত হলেও তিনি একজন জনপ্রতিনিধির ভাতিজা। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আঁতাত করে লুটে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর ভুক্তভুগী হচ্ছে ব্যবসায়ী ও পথচারীসহ যাত্রী সাধারণ।
চিটাগাং রোড এলাকায় সরেজমিনে জানা গেছে, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আনোয়ার হোসেনের ভাতিজা মাসুদের বিরুদ্ধে ফুটপাতের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মাসুদের নেতৃত্বে দোকান প্রতি দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত এই চাঁদা আদায় করে লাইনম্যান সাদ্দাম ও নাইম। ৫ শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক ৫০ হাজার টাকার অধিক চাঁদা আদায় করা হয়। কাউন্সিলরের ভাতিজা হওয়ায় মাসুদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। চাচার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে হাট-ঘাট-মাঠ, ভুমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজি সব কিছুই তার দখলে নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। মাদকের অঙ্গরাজ্য রয়েছে তার নেতৃত্বে।
স্থানীয় সুত্রে জানায়, চিটাগাংরোড-শিমরাইল বাস স্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে রাস্তার উপরে জামা-কাপড়ের দোকান, ফলের দোকান, পানের দোকান, চায়ের দোকান, জুতার দোকান সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের অন্তত ৫-৬শ ভাসমান দোকানপাট বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে। মাসুদকে টাকা না দিলে ফুটপাতে দোকান বসানো যাবে না। মাসুদ কাউন্সিলরের ভাতিজা হওয়ায় সবাই আতঙ্কে থাকে। তাছাড়া থানা পুলিশের সাথে রয়েছে তাদের গভীর সখ্যতা। যে কারনে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ছোট দোকানের জন্য ১০০ টাকা এবং বড় দোকান হলে চাঁদার পরিমান ২০০ টাকা। রোদ-বৃষ্টি যাই হউক না কেন মাসুদকে চাঁদা দিতেই হবে। ৫শ’ দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়ে থাকে। মাসে ১৫ লাখ, বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। আর এই টাকার ভাগ স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া তেমন কাউকেই দিতে হয় না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সুত্র।
জুতার দোকানদার সোহাগ বলেন, মাসুদ ভাইয়ের লাইনম্যান সাদ্দাম ও নাইমকে প্রতিদিন ২০০টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এই টাকা না দিলে এখানে দোকান বসানো যাবে না। কারেন্ট বিল সহ প্রতিদিন ৩ গ্রুপের কাছে সাড়ে ৩শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। টাকা না দিলে মারধর করে। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে জামালের চাঁদাবাজি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় টিআই শরফুদ্দিন আহম্মেদ ফুটপাতের একটি অংশের শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা যানজটমুক্ত করে দিয়েছে। বিষয়টি জনসাধারন কাছে প্রশংসণীয় হলেও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য বড় বিপদ হয়ে দাড়িয়েছে। দোকানপাট চালাতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে। দোকানপাট উচ্ছেদ না করে চাঁদাবাজদের উচ্ছেদ করা দরকার।
এই মাসুদ কিছুদিন আগেও হিরাঝিলে একটি এনজিওতে চাকরি করতো। গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকে মাসুদ। প্রায় ৩ বছর আবার এলাকায় প্রবেশ করেই শুরু করে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা এবং মাদক কারবারি। তার এসব অপকর্মের কারণে হুমকিতে রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর হাজী আনোয়ার হোসেনের ভাতিজা মাসুদ চাঁদা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, পূর্বে এই চাঁদা আদায়ের সাথে জড়িত থাকলেও এখন আমি এসবের সাথে জড়িত নই। আমি এগুলো ছেড়ে দিয়েছি।