অনলাইন আর অফলাইন—এই দুইয়ের মধ্যে অনেকে অনলাইনেই এখন সময় কাটান বেশি। অফলাইনের পৃথিবীর স্বাদ কেমন—ক্রমেই তা অচেনা হয়ে উঠছে অনেকের কাছে। ধরুন আপনাকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হলো, আগামী এক সপ্তাহ কোনো ফোন চালাতে পারবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সান্নিধ্য ছাড়া কাটাতে হবে এক সপ্তাহ। সম্ভব আপনার পক্ষে বেঁচে থাকা? প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করা সম্ভব নয়। সেখানে পুরো সপ্তাহ ফোন ছাড়া কাটিয়ে দেওয়া বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই অসম্ভব। ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া ছেড়ে বাস্তবের দুনিয়ায় পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার এই পদ্ধতিকে বলে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’।
ডিজিটাল ডিটক্স কী?
ডিজিটাল ডিটক্স হলো ডিজিটাল গ্যাজেট, স্ক্রিন বা ইন্টারনেট থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া। বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখা এই ডিজিটাল গ্যাজেট থেকে বিরতি নিয়ে বাস্তব জগতে সময় দেওয়াই ডিজিটাল ডিটক্স। এরও বেশ কিছু প্রকারভেদ আছে। কারও কাছে ডিজিটাল ডিটক্স মানে গ্যাজেট ও স্ক্রিন থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া। আবার কারও কারও কাছে ডিজিটাল ডিটক্সের অর্থ ভার্চ্যুয়াল জগত থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যাওয়া।
কেন দরকার ডিজিটাল ডিটক্স
ডিজিটাল ডিটক্সের উপকারিতা নির্ভর করে আপনার নিজের ওপর। মানুষভেদে উপকারিতার পরিমাণে হেরফের থাকলেও ডিজিটাল ডিটক্স আপনাকে বাস্তব জীবনে ফেরত আনবে। চারকোনা স্ক্রিনের জগত থেকে আবার নতুন করে নিজেকে বাস্তব জগতে আবিষ্কার করবেন।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হওয়া
সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় আমরা আটকে থাকি ডিজিটাল দুনিয়ায়। ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট’ (ফোবো) অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর ছুটে যাওয়ার ভয় থেকে সারাক্ষণই ডিজিটাল দুনিয়ায় ঘুরাফেরা করতে থাকি আমরা। ডিজিটাল ডিটক্সে গেলে বদভ্যাস থেকে বিরতি পাওয়া যায়।
অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা থেকে দূরে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা প্রত্যেকেই যেন এক অসম প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী। অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষা, তাঁদের মতো হতে চাওয়া, সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা তৈরি করে আমাদের মধ্যে। ডিজিটাল ডিটক্সের সেই প্রতিযোগিতা থেকে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ঘুম ভালো হয়
ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ডিজিটাল গ্যাজেট আমাদের সঙ্গী। সারা দিনের স্ক্রিনের সামনে থাকা শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে বাধাগ্রস্থ করে। ডিজিটাল ডিটক্স করলে ঘুমের আগে ফোন চালানো অনেকাংশেই কমে আসে। ফলে ঘুমও তুলনামূলক অনেক ভালো হয়।
পুরাতন শখকে নতুন করে আবিষ্কার করা
ডিজিটাল ডিটক্সের কল্যাণে আবারও পুনর্জীবিত হতে পারে পুরাতন কোন শখ। হতে পারে সেটা ছবি আঁকা, বই পড়া, বাগান করা কিংবা পোস্টকার্ড জমানো। জীবনকে আরও রোমাঞ্চময় করে তুলতে পারে এই ছোট ছোট শখ।
ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করবেন কীভাবে?
হুট করে কাউকে না জানিয়ে হারিয়ে যাবেন, ডিজিটাল ডিটক্সের অর্থ কিন্তু এটা নয়। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধন থেকে দূরে গিয়ে বাস্তব জীবনে মনোযোগ দেওয়াই হলো ডিজিটাল ডিটক্সের মূল লক্ষ্য। তাই ডিজিটাল ডিটক্সে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা জরুরি।
কাছের মানুষকে জানানো
আপনি যে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন, কাছের মানুষদের তা জানিয়ে রাখুন। এতে করে জরুরি প্রয়োজনে তাঁরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিলে অন্য কোন উপায়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন, সেটি জানান।
লক্ষ্য ঠিক করুন
ডিটক্স শুরু করার আগে লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। আপনি কি ডিজিটাল লাইফ থেকে পুরোপুরি বিরতিতে যাচ্ছেন, নাকি সময় কমিয়ে ফেলছেন, এই লক্ষ্য ঠিক করে কাজ শুরু করুন। লক্ষ্য ঠিক থাকলে ডিটক্স করতে সুবিধা হবে, তেমনই জরুরি প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারেও অন্যান্য মানুষজনও সতর্ক হবে।
এই যুগে ডিজিটাল ডিটক্স কি আদৌ সম্ভব?
উত্তর হলো, অবশ্যই সম্ভব।
বর্তমান যুগে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের আগলে রয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস। এই সময়ে এসে সত্যিই কি ডিজিটাল ডিটক্স করা সম্ভব? শুরু করলেও তা কি ধরে রাখা যায়? উত্তরটা লুকিয়ে আছে আপনার মাঝেই। চাইলে কোনো কিছুই অসম্ভব না। চলতে-ফিরতে, দৈনন্দিন কাজে ফোন আমাদের সঙ্গী। বিশেষ করে কোভিডের পর থেকে ফোনের ওপর নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছে অনেকগুণ। যে কারণে পুরোপুরি ডিটক্সে যাওয়া হয়তো সম্ভব না। কিন্তু ছোট থেকেই শুরু হোক না? এক সপ্তাহ না হোক, একদিন অন্তত ফোন ছাড়া থেকে দেখুন, বাস্তব জীবন কতটা উপভোগ্য!