ঢাকা ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুরে গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার, স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা “নির্মাতা অমিতাভ রেজা আবার বিয়ে করলেন” “২০১৪, ’১৮ ও ’২৪–এর মতো নির্বাচন হলে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা: গোলাম পরওয়ার” ২৬ টুকরায় উদ্ধার হওয়া আশরাফুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লালমনিরহাটে ইএসডিও ও ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান রাজধানীতে অস্থিরতা: বাড্ডা-শাহজাদপুরে দুই বাসে আগুন, ধানমন্ডিতে ককটেল বিস্ফোরণ মোহাম্মদপুরে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাকিস্তানে ফের আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ১২

হাজারো প্রাথমিক শিক্ষক শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে

  • NEWS21 staff Musabbir khan
  • আপডেট সময় : ০৪:১৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

হাজারো প্রাথমিক শিক্ষক শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দূর্গাপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতমা শবনম এসেছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তিনি দশম গ্রেডে বেতন চান। সমকালের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‌‘বেতন তুলতে প্রতিমাসে যেতে হয় উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। সেখানে অফিস সহকারী বেতন পান ১২তম গ্রেডে। আর আমি শিক্ষক হয়ে বেতন পাই ১৩তম গ্রেডে। যে কারণে অফিস সহকারীরাও আমাদের সম্মান দেন না। এখন আমি গ্রাজুয়েট শিক্ষক হয়ে কি একজন অফিস সহকারীকে গিয়ে স্যার সম্বোধন করবো?’

এই শিক্ষক বলেন, ‘অসম্মানের প্রতিবাদে দাবি জানাতে শহীদ মিনারে এসেছি। একজন রিকশাওয়ালার চেয়ে আমাদের আয় কম। বাজারে গিয়ে একটা ভালো মাছ কিনতে পারি না। দুই ঈদে যে বোনাস দেওয়া হয়, তা দিয়ে ঈদও হয় না। কোরবানি তো দেওয়াই যায় না।’

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পূর্ব পুনাইখারকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইয়াছিন মিয়া বললেন, ‘সরকারি গাড়িচালকরা পান ১২তম গ্রেডে বেতন। আর আমরা শিক্ষকরা পাই ১৩তম গ্রেডে। চালকদের চেয়েও এ দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কম। অথচ দেশের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পুরো কেবিনেট, সচিব সবাই প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করেই আজ এতদূর গিয়েছেন। আমরাই তাদের পড়িয়েছি।’

শিক্ষক ফাতেমা শবনম ও ইয়াছিন আলীর মত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে তারা শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

 

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এ আন্দোলন পরিচালনা করছে। সংগঠনগুলো হলো—বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি সমকালকে জানান, ‘হাজার হাজার শিক্ষক এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের দাবি স্পষ্ট—দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বহুবার আলোচনায় গিয়েছি, কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।’

সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন।

শিক্ষিকা ফাতেমা শবনম বলেন, আমরা কত কষ্টে আছি দুনিয়ায় কেউ জানে না। আমাদের শিক্ষকদের প্রতিদিন মাত্র ৬ টাকা টিফিন ভাতা দেওয়া হয়। ৬ টাকায় এক কাপ চা তো দূরের কথা, বিষ কিনেও খাওয়া যায় না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।

NEW21
NEW21

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, এমনকি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েই ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি সিএনএড, বিপিএড ও বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে রয়েছি। এটি বৈষম্য। তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।’

অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি না মানা হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুরে গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার, স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

হাজারো প্রাথমিক শিক্ষক শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে

আপডেট সময় : ০৪:১৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দূর্গাপুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতমা শবনম এসেছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তিনি দশম গ্রেডে বেতন চান। সমকালের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‌‘বেতন তুলতে প্রতিমাসে যেতে হয় উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। সেখানে অফিস সহকারী বেতন পান ১২তম গ্রেডে। আর আমি শিক্ষক হয়ে বেতন পাই ১৩তম গ্রেডে। যে কারণে অফিস সহকারীরাও আমাদের সম্মান দেন না। এখন আমি গ্রাজুয়েট শিক্ষক হয়ে কি একজন অফিস সহকারীকে গিয়ে স্যার সম্বোধন করবো?’

এই শিক্ষক বলেন, ‘অসম্মানের প্রতিবাদে দাবি জানাতে শহীদ মিনারে এসেছি। একজন রিকশাওয়ালার চেয়ে আমাদের আয় কম। বাজারে গিয়ে একটা ভালো মাছ কিনতে পারি না। দুই ঈদে যে বোনাস দেওয়া হয়, তা দিয়ে ঈদও হয় না। কোরবানি তো দেওয়াই যায় না।’

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পূর্ব পুনাইখারকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইয়াছিন মিয়া বললেন, ‘সরকারি গাড়িচালকরা পান ১২তম গ্রেডে বেতন। আর আমরা শিক্ষকরা পাই ১৩তম গ্রেডে। চালকদের চেয়েও এ দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কম। অথচ দেশের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পুরো কেবিনেট, সচিব সবাই প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করেই আজ এতদূর গিয়েছেন। আমরাই তাদের পড়িয়েছি।’

শিক্ষক ফাতেমা শবনম ও ইয়াছিন আলীর মত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে তারা শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

 

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এ আন্দোলন পরিচালনা করছে। সংগঠনগুলো হলো—বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি সমকালকে জানান, ‘হাজার হাজার শিক্ষক এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের দাবি স্পষ্ট—দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বহুবার আলোচনায় গিয়েছি, কিন্তু কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।’

সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন।

শিক্ষিকা ফাতেমা শবনম বলেন, আমরা কত কষ্টে আছি দুনিয়ায় কেউ জানে না। আমাদের শিক্ষকদের প্রতিদিন মাত্র ৬ টাকা টিফিন ভাতা দেওয়া হয়। ৬ টাকায় এক কাপ চা তো দূরের কথা, বিষ কিনেও খাওয়া যায় না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা।

NEW21
NEW21

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, এমনকি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েই ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি সিএনএড, বিপিএড ও বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে রয়েছি। এটি বৈষম্য। তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।’

অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি না মানা হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।