জুলাই জাতীয় সনদ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শুক্রবার সই এ সনদ সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। অতীতের যেকোনো বন্দোবস্তের চেয়ে এটি স্বচ্ছ, সুগঠিত ও সুনির্দিষ্ট। এটি এক সময় আইনে রূপান্তরিত হবে। এই সনদ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা ভীরু কাপুরুষের উপমা হয়ে থাকব।
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘গণতন্ত্র সুরক্ষায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ ছায়া সংসদের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে থাকবে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, এই সনদ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা থেকে উত্তরণ সম্ভব। জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এটি কোরআন বা বাইবেল নয় যে, পরিবর্তন করা যাবে না। জুলাইয়ের কোনো পরাজিত শক্তি ও মানবতাবিরোধীরা রাজনৈতিক শক্তির বন্দোবস্ত হতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ৭২-এর সংবিধানকে অনেক কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার আইনের শাসন ব্যাহত করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। জুলাই হত্যার বিচারও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে। এই বিচারকাজ কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না। জুলাইয়ে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে যদি জুলাই সনদ বানচাল করা হয়, তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্টদের গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচারের সব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বেশ কয়েকটি মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন যুক্তিতর্ক চলছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর বিচারকরা রায় দেবেন। জুলাই চেতনার অঙ্গীকারই এই বিচারের মূল ভিত্তি।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই সনদ জাতির এক ঐতিহাসিক দলিল। এর বাস্তবায়নের ওপরই আগামীর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। জুলাই সনদ ব্যর্থ হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পড়বে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে, আইনশৃঙ্খলার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, এই দলিলে দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা- ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতিফলন ঘটেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ ঘটবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথরেখা আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।
‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে’ শীর্ষক এই ছায়া সংসদে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক হাসান জাবেদ, মনিরুজ্জামান মিশন ও মাইদুর রহমান রুবেল। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর হাতে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন অতিথিরা।