পবিত্র ইসলাম ধর্মের মৌলিক কাজ পাঁচটি। ইমান, নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ। যার মধ্যে এই পাঁচটি বিষয় পাওয়া যাবে তিনি মুসলমান। ইমান হলো ইসলামের প্রথম কাজ। যার মধ্যে ইমান নেই, তিনি মুসলমানই নন। ইমানের দাবি হলো, আল্লাহকে এক স্বীকার করা ও কাজকর্মে তা প্রমাণ করা। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে শেষ নবী স্বীকার করা ও জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করা। ইমানের পর নামাজের গুরুত্ব বেশি। এক হাদিসের মর্মানুসারে মুসলমান এবং অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য নামাজের। হাশরের ময়দানে আল্লাহর পাওনা হিসেবে নামাজের বিচার কার্যক্রম হবে সর্বপ্রথম। রসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকালের আগে উম্মতের প্রতি সর্বশেষ অছিয়ত হিসেবে বলেন, নামাজ, নামাজ এবং শ্রমিকের প্রতি সদাচরণ কর। মুসলমানদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। যাদের যথেষ্ট ও সংগতি সম্পদ আছে, তাদের জাকাত প্রদান করা এবং পবিত্র হজ পালন করা ফরজ।
ভালোমন্দ সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া ইহকাল ও পরকালে কেউ কারও কোনো ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করা এবং কাজকর্মে তা বাস্তবায়ন করা প্রতিটি মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব।
মুসলমানদের ওপর কোরআন এবং হাদিসের বিধান পালন করা বাধ্যতামূলক। কোরআন-হাদিসে নেই এমন কোনো বিধান অথবা কোরআন-হাদিসের বিপক্ষে কোনো বিষয়ে যে বা যারাই বলে, তা পালন করা মুসলমানের জন্য অবৈধ।
ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্য করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য ইবাদত করা অথবা কাউকে দেখানোর নিয়তে ইবাদত করা শিরক বা অমার্জনীয় মহাপাপ। অতএব আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভক্তি করা, আল্লাহ ছাড়া কারও জন্য কোনো স্থানে যে কোনো ধরনের মানত ও ইবাদত করা হারাম।
আল্লাহর পর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা। তাঁকে ভালোবাসা ইমানের অংশ। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ থেকে মহান অথবা সমান সাব্যস্ত করা মহাপাপ। জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ (সা.)-কে অনুসরণ করা এবং তাঁর আদর্শে জীবন গড়া, তাঁকে সত্যিকার ভালোবাসার পরিচয় বহন করে। যার মধ্যে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ নেই, তার জন্য রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসার দাবি করা অবাস্তব।
ইসলামি শরিয়তে প্রমাণিত নয় এমন কিছু করা অথবা শরিয়তের কোনো কিছু বাড়িয়ে কমিয়ে আমল করা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। অতএব যারা কোরআন-হাদিস ও ইসলামি শরিয়তে নেই এমন কোনো কাজ করবেন, তারা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুপারিশ পাবেন না। নবীজির হাতে তারা কাউছার ঝরনার পানিও পাবেন না। পরকালে তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মহান পভু ঘোষণা করেন, ‘হে রসুল বলুন, আমি কী তোমাদের ওই সব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ওরাই সেই লোক, যাদের আমল এই জীবনেই পণ্ড হয়। যদিও তারা মনে করে তারা সৎকর্মই করেছে’ (সুরা আল কাহাফ-১০৩/১০৪)।
হানাহানি, মারামারি, প্রতিশোধপ্রবণতা, গালমন্দ করা, কুধারণা করা, অন্যের দোষ চর্চা করা মহাপাপ। ঝগড়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত দাবিও ছেড়ে দেবে তাকে আল্লাহ বেহেশতের উত্তম স্থান প্রদান করবেন (তাবরানি)। বিবাদ সৃষ্টি করা মুনাফিক এবং ইবলিশ শয়তানের কাজ।
অন্যের দোষ খোঁজা মহাপাপ। তাই অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি না করে নিজের দোষ খোঁজা এবং তা সংশোধন করা ইসলামের বিধান। বর্তমান যুগ, সংস্কার ও দিনবদলের। সবাই নিজেকে সংস্কারের দিকে এগিয়ে এলে গোটা সমাজ স্বাভাবিকভাবে বদলে যাবে। অতএব নিজেকে সংস্কার করা ও নিজের প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করাই হবে আমাদের প্রথম কাজ (সুরা মায়িদাহ-১০৫)।
নামাজ, রোজা পালন করা ফরজ ও মহৎ কাজ। নামাজ রোজার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতের কাজ হলো ঝগড়াবিবাদ ও তর্কবিতর্ক পরিহার করে পরস্পর মিলেমিশে চলা (আবু দাউদ)।
মহিলাদের জন্য চারটি কাজ অতিগুরুত্বপূর্ণ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, নিজের সতীত্ব সংরক্ষণ করবে আর স্বামীর অনুগত হবে, তাকে বলা হবে ‘বেহেশতের যে দরজা দ্বারা ইচ্ছা তুমি বেহেশতে প্রবেশ কর’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)।
পর্দা লঙ্ঘন করা মহাপাপ। মহিলাদের গলার স্বর এবং চলার শব্দ উচ্চ করাও ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। যারা এসব মানে না, তারা ইসলামকে অমান্য করল।
হারাম খাবারে যে শরীর গঠিত হবে, তা বেহেশতে যাবে না। অতএব দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ, মাদক, জুয়া, লটারি, ক্যাসিনো এবং অবৈধ ও প্রতারণামূলক লেনদেনের সঙ্গে কোনো মুসলমান সম্পৃক্ত হতে পারে না (আহমদ)।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা