‘তাহলে কী করণীয়’-একজন জানতে চায়।
‘সমাজে রটিয়ে দাও মুহাম্মদ পাগল হয়ে গেছে।’ আরেকজন বলল।
‘কিন্তু সে তো পাগল না।’
‘তাহলে বল সে গণক।’
‘সে তো গণক না।’
‘বল, মুহাম্মদ জাদুকর।’
‘সে তো জাদুও দেখায় না।’
একে একে সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়। হওয়ারই কথা। রসুল (সা.) তো বাইরে থেকে আসা কোনো মানুষ নন। তিনি কুরাইশদেরই সন্তান। তাঁর অনুপম চারিত্রিক মাধুর্যের সাক্ষ্য এতকাল তারাই দিয়েছে। হঠাৎ কীভাবে পরম সত্যবাদী মানুষটিকে তারা পাগল-গণক-জাদুকর বলে! সেদিনের মতো সভা শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই সভার কার্যবিবরণী কীভাবে যেন নবীজি জেনে ফেলেন। কদিন হলো দাওয়াতি মিশন শুরু হয়েছে। যে কুরাইশদের সঙ্গে কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে, তারাই থামিয়ে দিতে চাইছে! মনে মনে নবীজি কিছুটা দমে গেলেন। দূরের মানুষ বিরোধিতা করলে কাছের মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু কাছের মানুষ যদি বিরোধিতা করে তখন কোথাও আর যাওয়ার থাকে না। রসুল (সা.) মন খারাপ করে চাদর মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রইলেন।
নবীজির মন খারাপ হয়েছে কাছের মানুষরা তাঁকে দূরে ঠেলে দিয়েছে বলে। আসলে আল্লাহর খেলা অন্যরকম। কাছের মানুষ যাকে দূরে ঠেলে দেয় আল্লাহ তাঁকে বুকে টেনে নেয়। ঘুমিয়ে থাকা সন্তানের কপালে মা যেমন চুমু এঁকে মায়াভরা কণ্ঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য ডেকে তুলেন, আল্লাহও নবীজিকে পরম মমতায় ডাক দিলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল মুজাম্মিল। কুমিল্লায়লা ইল্লা কালিলা।’ হে চাদর জড়ানো নবী! রাত যত গভীর হোক, ভয় পেয়ো না। দাঁড়াও।’ (তাফসিরে মাজহারি, ১০ খণ্ড, ১০২ পৃষ্ঠা)।