বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালের পাতা, নারিকেলের পাতা ও সুপারির পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা অনেকটা বিলীন হতে চলেছে। ঘনবসতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাবুই পাখির বসবাস। এতে বিপন্ন হচ্ছে এই শিল্পী পাখি বাবুই।
আজ থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের গুনগুন আর কিচির মিচির শব্দে মাঠ-ঘাটের তালগাছে দেখা যেত এদের বাসা। বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।
ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেড়া কষ্টকর। প্রতিটি তালগাছে ৫০ থেকে ৬০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না।
পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সাথী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। চমৎকার বাসা বুনে বসবাসের জন্য এ পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া।
সাঝের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।
ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের লিটন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের গ্রামে ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বাবুই পাখি তালগাছে বাসা বাঁধতো কিন্তু এখন আর বেশি দেখা যায় না। কদাচিৎ চোখে পড়ে মাত্র।
ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙে।’
ফেনী জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হক বলেন, বৈরি আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুই পাখিসহ সকল শ্রেণির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি ও কীট-পতঙ্গ পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।