সহবাস, স্বপ্নদোষ, ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত ও নারীদের হায়েজ-নেফাসের পর গোসল করা ফরজ। এসব কারণে কারও শরীর অপবিত্র হলে যত দ্রুত পারা যায় গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উচিত। কারণ, রাব্বুল আলামিন পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মানুষদের ভালোবাসেন। কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা : ১০৮)
আমাদের অনেকে ফরজ গোসল করতে গিয়ে এখনো ভুল করে থাকেন। এতে নামাজসহ তাদের অন্য আমলগুলো বিশুদ্ধ হয় না। চলুন তাহলে এখনই ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি জেনে নিই—
রাজধানীর জামিয়া ইকরার ফাজিল মুফতি ইয়াহইয়া শহিদ কালবেলাকে বলেন, গোসলের আগে প্রস্রাব-পায়খানা সেরে নেবে। এতে বীর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়। তারপর বিসমিল্লাহ বলে প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করবে।
এবার বাঁ হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলবে। তারপর অজু করবে (অবশ্য অজুর মধ্যে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত হলেও ফরজ গোসলের পূর্বে যে অজু করা হয়, সেই অজুতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া ফরজ), তবে পা ধৌত করবে না। অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে, তারপর তিনবার বাঁয়ে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোমও শুকনা না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হেদায়া ১/৩০)
নিচে গোসলের শিষ্টাচার বর্ণনা করা হলো—
১. উঁচু স্থানে বসে গোসল করবে, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় করবে না। বসে বসে গোসল করবে।
২. লোকসমাগমের স্থানে গোসল করবে না। পবিত্র জায়গায় গোসল করবে। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার : ১/৯৪)
৩. বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি : ১/৫১০)
৪. নেইলপলিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি, অন্যথায় গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৩)
৫. ফরজ গোসলে পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়াসহ সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে। নারীদের চুল বাঁধা থাকলে খোলা ছাড়া যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলে শুধু গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর যদি চুল খোলা থাকে তাহলে পুরুষের মতো সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার : ১/১৪২)
৬. অনুরূপ ফরজ গোসলে নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহীতুল বুরহানি : ১/৮০)
৭. কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।
৮. বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকের দাঁতে এমনভাবে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, যার দরুন কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না এবং তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়, আর যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। (রদ্দুল মুহতার : ১/১৫৪, আহসানুল ফাতাওয়া : ২/৩২)
উল্লেখ্য, গোসল ফরজ অবস্থায় নারী-পুরুষের জন্য কিছু কাজ নিষিদ্ধ। সেগুলো হলো—
১. নামাজ আদায় করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাত আদায় করো না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা বুঝতে পারো যে, তোমরা নামাজে কী বলছো। তাছাড়া বড় নাপাকি হয়ে গেলে গোসল না করে সালাত আদায় করো না।’ (সুরা নিসা : ৪৩)
২. কোরআন স্পর্শ করা
অপবিত্র শরীর নিয়ে কোরআন স্পর্শ করা যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না’ (সুরা ওয়াকিয়া : ৭৯)। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন যে, ‘পবিত্র না হয়ে কোরআন কারিম স্পর্শ করবে না।’ (দারে কুতনী)
৩. কোরআন তিলাওয়াত করা
আলী (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় আমাদের কোরআন পড়িয়েছেন, তবে যখন বড় নাপাকি অবস্থায় থাকতেন সে সময় ছাড়া।’ (তিরমিজি )
৪. মসজিদে অবস্থান করা
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হায়েজ হয়েছে এমন নারী ও গোসল ফরজ এমন অপবিত্র ব্যক্তির জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ করি না।’ (আবু দাউদ)
৫. কাবা ঘর তাওয়াফ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ঘর কাবায় তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের সমান। তাই গোসল ফরজ অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না। (নাসাঈ)