ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফরজ গোসলের নিয়ম জানেন তো? জেনে নিন ইসলাম অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা আবারও বাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক কি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠছে? উঠছে প্রশ্ন চাদর না দিয়ে ঘুমানো কঠিন কেন? কারণটি জানলে অবাক হবেন! সরকারি কর্মীদের মূল্যায়নে নতুন পথ, এপিএর বদলে জিপিএমএস চালু আসরানির মৃত্যু, অক্ষয়ের স্মৃতিতে ভাসছে এক সপ্তাহ আগের শুটিং মুহূর্ত স্পিনেই ৫০ ওভার! ওয়ানডে ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা, রেকর্ড ভাঙার পথে ম্যাচ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেফতার ১৩১ জন চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, ৪ জনের মরদেহ উত্তোলন তেলাপোকা মারতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল পুরো অ্যাপার্টমেন্ট

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে নজর রাজনৈতিক দলগুলোর

  • NEWS21 staff Musabbir khan
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে নজর রাজনৈতিক দলগুলোর

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হলেও সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে, গণভোট কখন হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কী হবে—মোটাদাগে এই তিন বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য কাটেনি। এখন সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছে দলগুলো। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দীর্ঘ আলোচনার অভিজ্ঞতায় কমিশন মনে করছে, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তারা যে সুপারিশই দিক না কেন, তাতে কোনো কোনো পক্ষ বা দল অসন্তুষ্ট হবে। তবে সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগপর্যন্ত কমিশন দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নে সরকারকেই শক্ত ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছেন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদে গত শুক্রবার ২৪টি দল ও জোট সই করেছে। সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়টি নির্ধারিত না হওয়ায় এখনো সই করেনি এনসিপি। এ ছাড়া বামধারার আরও চারটি দলও সনদে সই করেনি।

জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে একটি বিশেষ আদেশ জারি করে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করার পথে এগোচ্ছে কমিশন। বিশেষ আদেশের ভিত্তি, আদেশে কী থাকবে, তা ঠিক করে একটি খসড়া তৈরির কাজ করছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনের মেয়াদ আছে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। কমিশন আশা করে, এ সময়ের মধ্যে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে। এ জন্য সরকার যাতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় পায়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।

দলগুলো যা বলছে

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ করার বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মপরিধিতে ছিল না। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথপদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। কমিশনের সুপারিশ শেষ পর্যন্ত সব দল মানবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আগে এ বিষয়ে কথা বলা সমীচীন হবে না বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব বক্তব্য ছিল, প্রস্তাব ছিল, পরামর্শ ছিল—এগুলো সংকলন করে তাঁরা একটা পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেবেন। হয়তো তাতে বিকল্প প্রস্তাবও থাকবে। এরপর যদি আমাদের কথা বলতে হয় সেটার ওপরে, তখন দেখা যাবে। সুপারিশ দেওয়ার আগে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।’

এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা সাতটি দল সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি শুরু করেছে। তারা অপেক্ষায় আছে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের দিকে। কথা বলে জানা গেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি মনঃপূত না হলে দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি আরও জোরদার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি গণভোট হবে আগে এবং সেটার যুক্তিও তুলে ধরেছি। অতীতে ১৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে গণভোট আয়োজনের নজির আছে। তাহলে গণভোট করার সময় আছে, সুযোগ আছে, নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত। তাহলে গণভোট আগে হতে অসুবিধা কোথায়? এখানেই প্রশ্ন আসে, যারা গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে চায়, তারা আসলে সংস্কার কার্যকর হোক, সেটা চায় কি না।’

এখনো জুলাই জাতীয় সনদে সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে না। তারা শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা নির্ভর করছে বাস্তবায়ন নিয়ে কী সুপারিশ আসে তার ওপর।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দেওয়ার পর সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটা স্পষ্ট হবে। কমিশনের মেয়াদও বেড়েছে। এর মধ্যেই আমরা কিছু আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেব। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা স্বাক্ষর করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

চার দলের স্মারকলিপি

সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। গতকাল সোমবার এ চার দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সংবিধানে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার এবং ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা অনুল্লেখ থাকা এমন কোনো সনদে ভিন্নমত দিয়ে তারা স্বাক্ষর করতে পারে না।

যে উপায় ভাবছে কমিশন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী আদেশটির নাম হতে পারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’। এটি সংবিধান ও অন্যান্য আইনের পরিপূরক হবে। এ আদেশের ভিত্তি হবে গণ–অভ্যুত্থান অর্থাৎ গণ–অভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ আদেশ জারি করা হবে। আদেশের পরিশিষ্টে থাকবে জুলাই জাতীয় সনদ। এ আদেশের ওপর হবে গণভোট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি সনদে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গত রোববার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে বাস্তবায়িত না হলে সংস্কারের মাধ্যমে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।

সূত্র জানায়, ভিন্নমত বাস্তবায়নের বিষয়টিও আদেশে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটি কীভাবে রাখা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এ রকম প্রশ্ন গণভোটে রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট। এর বিকল্প হিসেবে উচ্চকক্ষে পিআর, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মতো কয়কেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট দেওয়া হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশনের বিবেচনার দিক হচ্ছে এটাকে বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরজ গোসলের নিয়ম জানেন তো? জেনে নিন ইসলাম অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে নজর রাজনৈতিক দলগুলোর

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হলেও সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে, গণভোট কখন হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কী হবে—মোটাদাগে এই তিন বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য কাটেনি। এখন সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছে দলগুলো। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সনদ বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দীর্ঘ আলোচনার অভিজ্ঞতায় কমিশন মনে করছে, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তারা যে সুপারিশই দিক না কেন, তাতে কোনো কোনো পক্ষ বা দল অসন্তুষ্ট হবে। তবে সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগপর্যন্ত কমিশন দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নে সরকারকেই শক্ত ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করছেন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদে গত শুক্রবার ২৪টি দল ও জোট সই করেছে। সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়টি নির্ধারিত না হওয়ায় এখনো সই করেনি এনসিপি। এ ছাড়া বামধারার আরও চারটি দলও সনদে সই করেনি।

জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে একটি বিশেষ আদেশ জারি করে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করার পথে এগোচ্ছে কমিশন। বিশেষ আদেশের ভিত্তি, আদেশে কী থাকবে, তা ঠিক করে একটি খসড়া তৈরির কাজ করছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ ২৪ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনের মেয়াদ আছে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। কমিশন আশা করে, এ সময়ের মধ্যে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে। এ জন্য সরকার যাতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় পায়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।

দলগুলো যা বলছে

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ করার বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মপরিধিতে ছিল না। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের পরে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। ৯ অক্টোবর এই আলোচনা শেষ হয়। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথপদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। কমিশনের সুপারিশ শেষ পর্যন্ত সব দল মানবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আগে এ বিষয়ে কথা বলা সমীচীন হবে না বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব বক্তব্য ছিল, প্রস্তাব ছিল, পরামর্শ ছিল—এগুলো সংকলন করে তাঁরা একটা পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেবেন। হয়তো তাতে বিকল্প প্রস্তাবও থাকবে। এরপর যদি আমাদের কথা বলতে হয় সেটার ওপরে, তখন দেখা যাবে। সুপারিশ দেওয়ার আগে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।’

এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা সাতটি দল সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি শুরু করেছে। তারা অপেক্ষায় আছে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের দিকে। কথা বলে জানা গেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি মনঃপূত না হলে দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি আরও জোরদার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি গণভোট হবে আগে এবং সেটার যুক্তিও তুলে ধরেছি। অতীতে ১৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে গণভোট আয়োজনের নজির আছে। তাহলে গণভোট করার সময় আছে, সুযোগ আছে, নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত। তাহলে গণভোট আগে হতে অসুবিধা কোথায়? এখানেই প্রশ্ন আসে, যারা গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে চায়, তারা আসলে সংস্কার কার্যকর হোক, সেটা চায় কি না।’

এখনো জুলাই জাতীয় সনদে সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে না। তারা শেষ পর্যন্ত সনদে সই করবে কি না, তা নির্ভর করছে বাস্তবায়ন নিয়ে কী সুপারিশ আসে তার ওপর।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দেওয়ার পর সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটা স্পষ্ট হবে। কমিশনের মেয়াদও বেড়েছে। এর মধ্যেই আমরা কিছু আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেব। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা স্বাক্ষর করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

চার দলের স্মারকলিপি

সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। গতকাল সোমবার এ চার দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সংবিধানে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন বিষয়ে অঙ্গীকার এবং ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা অনুল্লেখ থাকা এমন কোনো সনদে ভিন্নমত দিয়ে তারা স্বাক্ষর করতে পারে না।

যে উপায় ভাবছে কমিশন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী আদেশটির নাম হতে পারে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’। এটি সংবিধান ও অন্যান্য আইনের পরিপূরক হবে। এ আদেশের ভিত্তি হবে গণ–অভ্যুত্থান অর্থাৎ গণ–অভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ আদেশ জারি করা হবে। আদেশের পরিশিষ্টে থাকবে জুলাই জাতীয় সনদ। এ আদেশের ওপর হবে গণভোট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি সনদে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গত রোববার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে বাস্তবায়িত না হলে সংস্কারের মাধ্যমে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।

সূত্র জানায়, ভিন্নমত বাস্তবায়নের বিষয়টিও আদেশে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটি কীভাবে রাখা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এ রকম প্রশ্ন গণভোটে রাখা হতে পারে। আরেকটি হতে পারে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট। এর বিকল্প হিসেবে উচ্চকক্ষে পিআর, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মতো কয়কেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট দেওয়া হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ তৈরি করবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশনের বিবেচনার দিক হচ্ছে এটাকে বাস্তবায়নে সরকারের দিক থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।