নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বুধুরিয়া ডাংগাপাড়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত এবং অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে এবং গ্রামজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নিহতদের দুইজন বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর ধরে একটি জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল আফসার আলীর পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের লালচানের পরিবারের। ওই জমিতে লাগানো একটি মেহগনি গাছ কেটে ফেলাকে কেন্দ্র করে ১০ এপ্রিল সকালে এ সংঘর্ষের সূচনা ঘটে। নিহত শরিফুল ইসলাম (৫২), যিনি স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত।রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় (আওয়ামী লীগ সমর্থক লালচান) ও তার ভাইয়েরা তাকে হামলা করেন। খবর পেয়ে শরিফুলের আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় সমর্থকরা ছুটে এলে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই শরিফুল ইসলাম নিহত হন। এবং গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আজিজুল (৫৫), যিনি বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে নিহতদের পরিবারের দাবি, সংঘর্ষ পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। শরিফুলের পরিবার অভিযোগ করেছে, স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগপন্থী একটি গোষ্ঠী ও বিএনপির শহিদুল গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল। গ্রামবাসীদের অনেকে জানিয়েছেন, শহিদুল ও তার ভাইয়েরা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুরো গ্রামটিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ১১ এপ্রিল সকালে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিয়ামতপুর থানা গেটে বিক্ষোভ করেন। তারা আসামিদের দের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে।
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, লালচাঁনের ফাঁসি চাই।
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, শহীদুলের ফাঁসি চাই।
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, সকল আসামীর ফাঁসি চাই।
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, জোড়া খুনের চাই ফাঁসি’—এই একদফা দাবিতে তারা থানা ঘেরাও করে স্লোগান দেন।
এলাকাজুড়ে শোক ও ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে নতুন করে কোনো সংঘর্ষের আশঙ্কায়। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেনাবাহিনীর টহল ও জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।