ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশ খেলেছে ৬১ শতাংশ ডট বল জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড, দর্শকদের ছোঁয়ার সুযোগ সংসদের ২৫৫ পদে একটিও না পাওয়া ছাত্রদল, জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির ২৩৪ পদে জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত: আসিফ মাহমুদ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার জুলাই থেকে দ্রুততর হবে শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন, উৎস কার্গো ভিলেজে শৈলকূপায় জিয়া সাইবার ফোর্স এর আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সহকারী এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রনভীরের উদ্যোগে মসজিদ নির্মান সুন্দরগঞ্জে মালতোলা হিলফুল ফুজুল সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঘর উপহার গাজীপুরে বিএসটিআই ও র‍্যাবের যৌথ অভিযানে ৫ লক্ষ্য টাকা জরিমানা

জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড, দর্শকদের ছোঁয়ার সুযোগ

  • NEWS21 Staff Musabbir
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড, দর্শকদের ছোঁয়ার সুযোগ

‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ প্রতিপাদ্যে জাপানে টানা ছয় মাস ধরে চলল ওসাকা এক্সপো–২০২৫। গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ মহা আয়োজনের পর্দা নেমেছে ১৩ অক্টোবর। ভবিষ্যতের নানা ধারণা নিয়ে এতে হাজির হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বড় বড় কোম্পানিগুলো। তারা দিয়েছিল আকর্ষণীয় সব প্যাভিলিয়ন। আয়োজক দেশ জাপানের প্যাভিলিয়নটিই ছিল সবচেয়ে বড়।

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল—মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা!

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা।

প্যাভিলিয়ন কেমন ছিল

মূলত মানবজাতির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ চক্রাকার জীবনের ধারণাকে তুলে ধরেছিল এটি। থরে থরে সাজানো অসংখ্য জাপানি সিডারগাছের পাটাতনের বিশাল বৃত্তাকার এ প্যাভিলিয়ন। ক্রস–ল্যামিনেটেড কাঠ (সিএলটি) দিয়ে তৈরি এ পাটাতনগুলো। এক্সপো শেষ হওয়ার পরে জাপানজুড়ে বিভিন্ন ভবনে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে নকশা করা হয় এটি। বিখ্যাত জাপানি কোম্পানি নিকেন সেক্কেই লিমিটেড এর নকশাকার।

প্যাভিলিয়নটি তিনটি জোনে বিভক্ত ছিল—প্ল্যান্ট বা প্রক্রিয়াকরণ, ফার্ম বা খামার ও ফ্যাক্টরি বা কারখানা এলাকা। প্ল্যান্ট জোনে বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। ফার্ম এলাকায় পানি পদার্থে পরিণত হয় এবং কারখানায় পদার্থ পণ্যে পরিণত হয়। এ চক্র নিয়ত চলমান। এটি একটি জীবন্ত প্যাভিলিয়ন। কারণ, সেখানে ঘটমান সবকিছু কেবল প্রদর্শনী নয়, বাস্তবও বটে। যেমন প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় রয়েছে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এক্সপোর সব বর্জ্য যেখানে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন অণুজীবের (মাইক্রোবিয়াল) ক্রিয়ায় সেই আবর্জনা পচে বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত হয়।

এ বায়োগ্যাস থেকেই প্ল্যান্টটিকে চালানোর শক্তির জোগান দেওয়া হয়। অন্যদিকে এ পচনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহারযোগ্য। যে কার্বন ডাই–অক্সাইড ছিল এত দিন পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে মূল মাথাব্যথা, সেটিই এখন সম্পদে রূপান্তরিত করার একটি অভিনব উপায় তুলে ধরা হয়েছে এ প্যাভিলিয়নে। খাদ্যবর্জ্যের অণুজীবগত পচনের সময় উৎপাদিত কার্বন ডাই–অক্সাইডকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক পচনযোগ্য (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিক, যা দিয়ে নির্মাণ করা যাবে বিভিন্ন জিনিস। এ রকমের একটি পাত্র প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে। আবার সেটি কীভাবে ভেঙে পানিতে মিশে যাচ্ছে, তারও একটি নমুনা আছে সেখানে।

অর্থাৎ খাদ্যবর্জ্য থেকে প্রথমে উৎপন্ন হচ্ছে কার্বন ডাই–অক্সাইড। এরপর সেটি পরিণত হচ্ছে প্লাস্টিকে। প্রয়োজন শেষে তা আবার ফিরে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এ পুরো প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হাইড্রোজেন জারণকারী (হাইড্রোজেন অক্সিডাইজিং) ব্যাকটেরিয়া অণুজীব। পুষ্টির উৎস হিসেবে যা কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে।

এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জাপানি গবেষকদেরই উদ্ভাবন, যাঁরা এই ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রেন মাটিতে আবিষ্কার করেছিলেন। এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো। অদূর ভবিষ্যতে এ উপাদানে নির্মাণ করা উপকরণগুলো দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ অংশ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। পরিবেশদূষণ ঠেকাতে জোর ভূমিকা রাখবে এটি।

ভবিষ্যতের ত্রাণকর্তা কি শৈবাল

প্যাভিলিয়নের ফার্ম বা খামার অংশে গিয়ে দেখা যায়, নানা আকৃতির সবুজাভ কিছু ট্যাংক। আপাতদৃষ্টে পানি মনে হলেও এর ভেতরে নীরবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এলজি বা শৈবাল। আকারে এক মিলিমিটারের কম। ‘বোট্রিওকোক্কাস’ নামের সবুজ এ শৈবাল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। সারা বিশ্বে সহজলভ্য এই বোট্রিওকোক্কাসকে এখন পেট্রোলিয়ামের একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কীভাবে এটি ঘটে? বোট্রিওকোক্কাসের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোকার্বন উৎপাদন করে, যা পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো এখন এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

এ শৈবাল নিজেদের বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে। প্রসঙ্গত, বলা যায় যে শুরুতে শৈবালই মূলত বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড শুষে নিয়ে বিশ্বকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছিল।

ক্রমেই চাষ করা যেতে পারে বলে এগুলো কখনো ফুরিয়ে যাবে না। তাই এটিকে একটি কার্যকর শক্তির উৎস হিসেবে বৃদ্ধি করতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান বা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা হ্রাসে এটি নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করতে পারে। এ শৈবাল বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। মাইক্রোস্টেরিয়াস ও ক্লোরেলার মতো আণুবীক্ষণিক প্রজাতি থেকে শুরু করে জাপানের খাবারের প্লেটে দেখা যাওয়া ওয়াকামে ও হিজিকির মতো খাওয়ার উপযোগী জাত পর্যন্ত।

কী কী উপকারে আসতে পারে এ শৈবাল? উদ্ভিদ ও অন্যান্য খাদ্য উৎসের সঙ্গে তুলনা করলেই সেটি বের হয়ে আসবে। যেমন প্রোটিন উৎপাদনে সয়াবিনের চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি কার্যকর এটি। তেল উৎপাদনে সূর্যমুখীর চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে জাপানি সিডারগাছের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। যখন পানির ব্যবহারের কথা আসবে, তখন শৈবাল একই পরিমাণ পানি ব্যবহার করে গরুর মাংসের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি প্রোটিন উৎপাদন করতে পারে। সুতরাং ভবিষ্যতের জন্য শৈবালের বিপুল সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এর বাইরে রয়েছে শৈবালটির অসাধারণ সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা। সালোকসংশ্লেষণে এটি অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বেশি কার্যকর। শৈবাল বায়োগ্যাস উৎপাদনে অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ হওয়ায় সৌরশক্তি উৎপাদনেও এটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে স্বচ্ছ টিউবের ভেতরে বাড়তে থাকা অগণিত শৈবাল, যা ভবিষ্যতের অরণ্যের স্বরূপকে চিহ্নিত করে।

ভবিষ্যতের পণ্য

প্যাভিলিয়নের পরের ধাপ—ভবিষ্যতের কারখানায়। এটি একটি সৃজনশীল ল্যাব, যেখানে চক্রাকার উপকরণ ও স্মার্ট ডিজাইনের মিলন ঘটেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটিও প্রদর্শনী নয়, প্যাভিলিয়নে ব্যবহৃত পণ্যই এখানে উৎপাদন করা হয়। এখানে ফার্ম বা খামার অংশে চাষ করা এলজি বা শৈবালের সঙ্গে উদ্ভিদভিত্তিক প্লাস্টিক মিশ্রিত হয়। দুটি রোবোটিক বাহু মসৃণ নির্ভুলতার সঙ্গে থ্রিডি প্রিন্টিং করে, যা শৈবালকে বায়োপ্লাস্টিকের সঙ্গে মিশ্রিত করে তৈরি করছে টুল। প্যাভিলিয়নজুড়ে এসব টুল দেখা গেছে। চাইলেই এতে বসতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা।

উল্লেখ্য, ন্যূনতম বর্জ্য উৎপাদন ও কম ধাপের প্রয়োজন হওয়ায় থ্রিডি প্রিন্টিং নিজেই এক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।

কাজেই একাধারে কার্বন শোষণ, জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, আসবাব কিংবা সালোকসংশ্লেষণে ভূমিকা রেখে পরিবেশ সচেতন সমাজ তৈরির মূল চাবিকাঠিতে পরিণত হতে পারে এসব শৈবাল। জাপানি প্যাভিলিয়ন যেন দর্শনার্থীদের সেই বার্তাই দিয়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও পরিবেশ সচেতন সমাজ নির্মাণে এলজি বা শৈবাল হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

প্যাভিলিয়নের এ অংশে হালকা ও নরম নকশার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টোকিও স্কাইট্রির মতো সুউচ্চ স্থাপনা থেকে শুরু করে বায়ুহীন ফুটবল রয়েছে এখানে। এমন ফুটবল রাখা হয়েছে, যেটিতে বায়ু নেই। কিন্তু এটি ব্যবহারের অনুভূতি একই। এর কোনো ক্ষয় হলে সহজেই মেরামত করা যাবে, ফেলে দিতে হবে না।

একটি চন্দ্রযানের রেপ্লিকাও এখানে ছিল। সবচেয়ে হালকা উপাদান দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনো গ্রহের ভূমি স্পর্শ করার সময় সেটি চাপ সামলে নিতে পারে। তবে এটি রেপ্লিকা হলেও প্যাভিলিয়নে রাখা কিছু মহাজাগতিক নিদর্শন ছিল একবারে খাঁটি।

মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ড, হায়াবুসার নমুনা

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা! এই প্রতিবেদকেরও মহাজাগতিক বস্তু স্পর্শ করার সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে।

জাপানি অ্যান্টার্কটিক গবেষণা অনুসন্ধান দল ২০০০ সালের নভেম্বরে শোওয়া স্টেশন থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইয়ামাতো পর্বতমালার কাছে এ অসাধারণ উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পায়। প্রথম আবিষ্কার করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পোলার রিসার্চের (এনআইপিআর) অধ্যাপক নাওইয়া ইমায়ে। প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার চওড়া ও সাড়ে ১৭ সেন্টিমিটার উঁচু রাগবি বলের মতো এ উল্কাপিণ্ডের রং সবুজ।

এটি যে মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছিল, তা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে তিনটি বিষয়। প্রথমত, এর খনিজের মহাজাগতিক গঠন। দ্বিতীয়ত, এর বয়স। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বছর আগের। তৃতীয়ত, আর সবচেয়ে নির্ধারক কারণ ছিল, এর ভেতরে আটকে থাকা বাতাস। মঙ্গল গ্রহের শিলাটি যখন তৈরি হয়েছিল, তখন সেখানকার বাতাস এর ভেতরে থেকে যায়। এর গঠন ১৯৭৫ সালে মঙ্গল গ্রহে অবতরণের সময় নাসার ভাইকিং মহাকাশযানের পর্যবেক্ষণ করা বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়।

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডটি বিশ্বের বৃহত্তম উল্কাপিণ্ডগুলোর মধ্যে একটি হওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য এটি কাছ থেকে দেখা ছিল একটি বিরল সুযোগ। তাই তাঁদের একটি করে কার্ড দিয়ে সেই স্বীকৃতিও দিয়েছে প্যাভিলিয়ন। এই লেখকের ভাগ্যেও জুটেছে এমন একটি কার্ড।

৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌরজগতের জন্ম কীভাবে হয়েছিল? আমরা কোথা থেকে এসেছি? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে এ উল্কাপিণ্ড নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। আর প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত উল্কাপিণ্ডটি থেকে মঙ্গল গ্রহেও পানির অস্তিত্ব থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেছে।

এখানেই শেষ নয়, প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশযানটি এ নমুনা পৃথিবীতে আনে।

এসব গ্রহাণু বিজ্ঞানীদের সৌরজগৎ কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং পরবর্তী সময় কীভাবে জীবনের উদ্ভব হয়েছিল, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করতে পারে। কারণ, মহাজাগতিক সেই রহস্যের সমাধান আমাদের জাগতিক ভবিষ্যতের যাত্রাকে আরও বেগবান করতে পারে।

সেই হিসেবে ওসাকা–কানসাই এক্সপোর ‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ থিমের সঙ্গেও রয়েছে এর গভীর সম্পর্ক। চক্রাকার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জগৎ থেকে মহাজগতে নিয়ে যাওয়া জাপান প্যাভিলিয়ন ছিল এবারের এক্সপোর অন্যতম আকর্ষণ।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ খেলেছে ৬১ শতাংশ ডট বল

জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড, দর্শকদের ছোঁয়ার সুযোগ

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ প্রতিপাদ্যে জাপানে টানা ছয় মাস ধরে চলল ওসাকা এক্সপো–২০২৫। গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ মহা আয়োজনের পর্দা নেমেছে ১৩ অক্টোবর। ভবিষ্যতের নানা ধারণা নিয়ে এতে হাজির হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বড় বড় কোম্পানিগুলো। তারা দিয়েছিল আকর্ষণীয় সব প্যাভিলিয়ন। আয়োজক দেশ জাপানের প্যাভিলিয়নটিই ছিল সবচেয়ে বড়।

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল—মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা!

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা।

প্যাভিলিয়ন কেমন ছিল

মূলত মানবজাতির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ চক্রাকার জীবনের ধারণাকে তুলে ধরেছিল এটি। থরে থরে সাজানো অসংখ্য জাপানি সিডারগাছের পাটাতনের বিশাল বৃত্তাকার এ প্যাভিলিয়ন। ক্রস–ল্যামিনেটেড কাঠ (সিএলটি) দিয়ে তৈরি এ পাটাতনগুলো। এক্সপো শেষ হওয়ার পরে জাপানজুড়ে বিভিন্ন ভবনে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে নকশা করা হয় এটি। বিখ্যাত জাপানি কোম্পানি নিকেন সেক্কেই লিমিটেড এর নকশাকার।

প্যাভিলিয়নটি তিনটি জোনে বিভক্ত ছিল—প্ল্যান্ট বা প্রক্রিয়াকরণ, ফার্ম বা খামার ও ফ্যাক্টরি বা কারখানা এলাকা। প্ল্যান্ট জোনে বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। ফার্ম এলাকায় পানি পদার্থে পরিণত হয় এবং কারখানায় পদার্থ পণ্যে পরিণত হয়। এ চক্র নিয়ত চলমান। এটি একটি জীবন্ত প্যাভিলিয়ন। কারণ, সেখানে ঘটমান সবকিছু কেবল প্রদর্শনী নয়, বাস্তবও বটে। যেমন প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় রয়েছে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এক্সপোর সব বর্জ্য যেখানে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন অণুজীবের (মাইক্রোবিয়াল) ক্রিয়ায় সেই আবর্জনা পচে বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত হয়।

এ বায়োগ্যাস থেকেই প্ল্যান্টটিকে চালানোর শক্তির জোগান দেওয়া হয়। অন্যদিকে এ পচনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহারযোগ্য। যে কার্বন ডাই–অক্সাইড ছিল এত দিন পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে মূল মাথাব্যথা, সেটিই এখন সম্পদে রূপান্তরিত করার একটি অভিনব উপায় তুলে ধরা হয়েছে এ প্যাভিলিয়নে। খাদ্যবর্জ্যের অণুজীবগত পচনের সময় উৎপাদিত কার্বন ডাই–অক্সাইডকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক পচনযোগ্য (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিক, যা দিয়ে নির্মাণ করা যাবে বিভিন্ন জিনিস। এ রকমের একটি পাত্র প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে। আবার সেটি কীভাবে ভেঙে পানিতে মিশে যাচ্ছে, তারও একটি নমুনা আছে সেখানে।

অর্থাৎ খাদ্যবর্জ্য থেকে প্রথমে উৎপন্ন হচ্ছে কার্বন ডাই–অক্সাইড। এরপর সেটি পরিণত হচ্ছে প্লাস্টিকে। প্রয়োজন শেষে তা আবার ফিরে যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এ পুরো প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হাইড্রোজেন জারণকারী (হাইড্রোজেন অক্সিডাইজিং) ব্যাকটেরিয়া অণুজীব। পুষ্টির উৎস হিসেবে যা কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে।

এ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জাপানি গবেষকদেরই উদ্ভাবন, যাঁরা এই ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রেন মাটিতে আবিষ্কার করেছিলেন। এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার, যা একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো। অদূর ভবিষ্যতে এ উপাদানে নির্মাণ করা উপকরণগুলো দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ অংশ হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। পরিবেশদূষণ ঠেকাতে জোর ভূমিকা রাখবে এটি।

ভবিষ্যতের ত্রাণকর্তা কি শৈবাল

প্যাভিলিয়নের ফার্ম বা খামার অংশে গিয়ে দেখা যায়, নানা আকৃতির সবুজাভ কিছু ট্যাংক। আপাতদৃষ্টে পানি মনে হলেও এর ভেতরে নীরবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এলজি বা শৈবাল। আকারে এক মিলিমিটারের কম। ‘বোট্রিওকোক্কাস’ নামের সবুজ এ শৈবাল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। সারা বিশ্বে সহজলভ্য এই বোট্রিওকোক্কাসকে এখন পেট্রোলিয়ামের একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কীভাবে এটি ঘটে? বোট্রিওকোক্কাসের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোকার্বন উৎপাদন করে, যা পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলো এখন এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছে।

এ শৈবাল নিজেদের বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে। প্রসঙ্গত, বলা যায় যে শুরুতে শৈবালই মূলত বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড শুষে নিয়ে বিশ্বকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছিল।

ক্রমেই চাষ করা যেতে পারে বলে এগুলো কখনো ফুরিয়ে যাবে না। তাই এটিকে একটি কার্যকর শক্তির উৎস হিসেবে বৃদ্ধি করতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান বা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা হ্রাসে এটি নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করতে পারে। এ শৈবাল বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। মাইক্রোস্টেরিয়াস ও ক্লোরেলার মতো আণুবীক্ষণিক প্রজাতি থেকে শুরু করে জাপানের খাবারের প্লেটে দেখা যাওয়া ওয়াকামে ও হিজিকির মতো খাওয়ার উপযোগী জাত পর্যন্ত।

কী কী উপকারে আসতে পারে এ শৈবাল? উদ্ভিদ ও অন্যান্য খাদ্য উৎসের সঙ্গে তুলনা করলেই সেটি বের হয়ে আসবে। যেমন প্রোটিন উৎপাদনে সয়াবিনের চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি কার্যকর এটি। তেল উৎপাদনে সূর্যমুখীর চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে জাপানি সিডারগাছের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। যখন পানির ব্যবহারের কথা আসবে, তখন শৈবাল একই পরিমাণ পানি ব্যবহার করে গরুর মাংসের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি প্রোটিন উৎপাদন করতে পারে। সুতরাং ভবিষ্যতের জন্য শৈবালের বিপুল সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এর বাইরে রয়েছে শৈবালটির অসাধারণ সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা। সালোকসংশ্লেষণে এটি অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বেশি কার্যকর। শৈবাল বায়োগ্যাস উৎপাদনে অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ হওয়ায় সৌরশক্তি উৎপাদনেও এটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে স্বচ্ছ টিউবের ভেতরে বাড়তে থাকা অগণিত শৈবাল, যা ভবিষ্যতের অরণ্যের স্বরূপকে চিহ্নিত করে।

ভবিষ্যতের পণ্য

প্যাভিলিয়নের পরের ধাপ—ভবিষ্যতের কারখানায়। এটি একটি সৃজনশীল ল্যাব, যেখানে চক্রাকার উপকরণ ও স্মার্ট ডিজাইনের মিলন ঘটেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটিও প্রদর্শনী নয়, প্যাভিলিয়নে ব্যবহৃত পণ্যই এখানে উৎপাদন করা হয়। এখানে ফার্ম বা খামার অংশে চাষ করা এলজি বা শৈবালের সঙ্গে উদ্ভিদভিত্তিক প্লাস্টিক মিশ্রিত হয়। দুটি রোবোটিক বাহু মসৃণ নির্ভুলতার সঙ্গে থ্রিডি প্রিন্টিং করে, যা শৈবালকে বায়োপ্লাস্টিকের সঙ্গে মিশ্রিত করে তৈরি করছে টুল। প্যাভিলিয়নজুড়ে এসব টুল দেখা গেছে। চাইলেই এতে বসতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা।

উল্লেখ্য, ন্যূনতম বর্জ্য উৎপাদন ও কম ধাপের প্রয়োজন হওয়ায় থ্রিডি প্রিন্টিং নিজেই এক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।

কাজেই একাধারে কার্বন শোষণ, জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, আসবাব কিংবা সালোকসংশ্লেষণে ভূমিকা রেখে পরিবেশ সচেতন সমাজ তৈরির মূল চাবিকাঠিতে পরিণত হতে পারে এসব শৈবাল। জাপানি প্যাভিলিয়ন যেন দর্শনার্থীদের সেই বার্তাই দিয়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও পরিবেশ সচেতন সমাজ নির্মাণে এলজি বা শৈবাল হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

প্যাভিলিয়নের এ অংশে হালকা ও নরম নকশার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টোকিও স্কাইট্রির মতো সুউচ্চ স্থাপনা থেকে শুরু করে বায়ুহীন ফুটবল রয়েছে এখানে। এমন ফুটবল রাখা হয়েছে, যেটিতে বায়ু নেই। কিন্তু এটি ব্যবহারের অনুভূতি একই। এর কোনো ক্ষয় হলে সহজেই মেরামত করা যাবে, ফেলে দিতে হবে না।

একটি চন্দ্রযানের রেপ্লিকাও এখানে ছিল। সবচেয়ে হালকা উপাদান দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনো গ্রহের ভূমি স্পর্শ করার সময় সেটি চাপ সামলে নিতে পারে। তবে এটি রেপ্লিকা হলেও প্যাভিলিয়নে রাখা কিছু মহাজাগতিক নিদর্শন ছিল একবারে খাঁটি।

মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ড, হায়াবুসার নমুনা

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা! এই প্রতিবেদকেরও মহাজাগতিক বস্তু স্পর্শ করার সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছে।

জাপানি অ্যান্টার্কটিক গবেষণা অনুসন্ধান দল ২০০০ সালের নভেম্বরে শোওয়া স্টেশন থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইয়ামাতো পর্বতমালার কাছে এ অসাধারণ উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পায়। প্রথম আবিষ্কার করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পোলার রিসার্চের (এনআইপিআর) অধ্যাপক নাওইয়া ইমায়ে। প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার চওড়া ও সাড়ে ১৭ সেন্টিমিটার উঁচু রাগবি বলের মতো এ উল্কাপিণ্ডের রং সবুজ।

এটি যে মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছিল, তা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে তিনটি বিষয়। প্রথমত, এর খনিজের মহাজাগতিক গঠন। দ্বিতীয়ত, এর বয়স। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বছর আগের। তৃতীয়ত, আর সবচেয়ে নির্ধারক কারণ ছিল, এর ভেতরে আটকে থাকা বাতাস। মঙ্গল গ্রহের শিলাটি যখন তৈরি হয়েছিল, তখন সেখানকার বাতাস এর ভেতরে থেকে যায়। এর গঠন ১৯৭৫ সালে মঙ্গল গ্রহে অবতরণের সময় নাসার ভাইকিং মহাকাশযানের পর্যবেক্ষণ করা বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়।

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডটি বিশ্বের বৃহত্তম উল্কাপিণ্ডগুলোর মধ্যে একটি হওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য এটি কাছ থেকে দেখা ছিল একটি বিরল সুযোগ। তাই তাঁদের একটি করে কার্ড দিয়ে সেই স্বীকৃতিও দিয়েছে প্যাভিলিয়ন। এই লেখকের ভাগ্যেও জুটেছে এমন একটি কার্ড।

৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌরজগতের জন্ম কীভাবে হয়েছিল? আমরা কোথা থেকে এসেছি? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে এ উল্কাপিণ্ড নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। আর প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত উল্কাপিণ্ডটি থেকে মঙ্গল গ্রহেও পানির অস্তিত্ব থাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেছে।

এখানেই শেষ নয়, প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশযানটি এ নমুনা পৃথিবীতে আনে।

এসব গ্রহাণু বিজ্ঞানীদের সৌরজগৎ কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং পরবর্তী সময় কীভাবে জীবনের উদ্ভব হয়েছিল, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করতে পারে। কারণ, মহাজাগতিক সেই রহস্যের সমাধান আমাদের জাগতিক ভবিষ্যতের যাত্রাকে আরও বেগবান করতে পারে।

সেই হিসেবে ওসাকা–কানসাই এক্সপোর ‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ থিমের সঙ্গেও রয়েছে এর গভীর সম্পর্ক। চক্রাকার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জগৎ থেকে মহাজগতে নিয়ে যাওয়া জাপান প্যাভিলিয়ন ছিল এবারের এক্সপোর অন্যতম আকর্ষণ।