ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দেয়ালে শিশুর আঁকা মুছার ৪টি সহজ এবং কার্যকর উপায় স্পাউস ভিসার মাধ্যমে নারীদের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা সাংবাদিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিলেন শ্রমিকলীগ নেতা কিস্তির টাকা তুলে ইজিবাইক কিনে শেষ সম্বল ইজিবাইক হারিয়ে আজ নিঃস্ব হান্নান বিশ্বাস সেলেনার স্বামী বেনি ব্ল্যাঙ্কোর বাড়িতে ডলার ভর্তি ব্যাগ, পাউরুটির চেয়ার ও গোপন সিঁড়ি ছাড়াও আরও কী আছে? কঙ্গনা বললেন, রাজনীতি হলো সবচেয়ে কম বেতনের চাকরি বিকাশ, নগদ ও রকেটে টাকা পাঠানোর ফি কত? পণ্য পরিবহনে নতুন করে আদায় হচ্ছে অতিরিক্ত বন্দর ফি মাত্র ৩০০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ পরবর্তী সিরিজে ভালো করার উপায় খুঁজছেন মিরাজ

কীভাবে জেন–জিরা ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে

  • Musabbir Khan
  • আপডেট সময় : ০৫:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে

কীভাবে জেন–জিরা ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে

একসময় চাকরি মানে ছিল, জীবনের নিশ্চয়তা। ভালো একটা অফিস, ধীরে ধীরে পদোন্নতি আর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লম্বা সম্পর্ক—এই ছিল কর্মজীবনের চেনা ছক। এখন সেই ধারণা বদলে গেছে। বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম, যাদের বলা হয় জেন–জি (Gen Z)। তারা চাকরিকে জীবনের কেন্দ্র নয়; বরং জীবনের একটি অংশ হিসেবে দেখে। কাজের মানে এখন কেবল আয় নয়, শেখা, আত্মতৃপ্তি ও স্বাধীনতা উপভোগ করা।

রাজধানীর উত্তরার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহজাবিন রহমান বলেন, ‘আমি এমন কোনো চাকরি করতে চাই না, যেখানে প্রতিদিন একই রকম কাজ করতে হবে। আমি এমন কিছু করতে চাই, যেখান থেকে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে পারব, নিজেকে গড়তে পারব। আর আমি মনে করি, আমার কাজের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষতা অর্জন করতে পারলে পুরো বিশ্বের দ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত।’

‘নিশ্চয়তার’ ধারণা পাল্টে যাচ্ছে

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মা–বাবারা সাধারণত সন্তানদের বলে থাকেন, এমন একটা চাকরি করো, যাতে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটানো যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। জেন–জিরা বিশ্বাস করে, চাকরিতে দীর্ঘকালীন নিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অটোমেশনের হাত ধরে এই পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই তরুণেরা খুঁজে নিচ্ছেন এমন পেশা, যেখানে পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত তাল মেলানো যায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেশাগত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, তরুণ কর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে নতুন কোনো দক্ষতা শেখার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশেও অনেকেই দিনের কাজের পাশাপাশি রাতে অনলাইন কোর্সে অংশ নিচ্ছেন বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের জেন–জিরা কী ভাবছে

বাংলাদেশের জেন–জিরাও দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নয়; বরং কর্মক্ষেত্রে দ্রুত নতুন কিছু শিখতে চায়। তারা বুঝতে পারছে, একটা দক্ষতা সারা জীবন কাজে লাগবে না। তাই তারা শিখছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের পরীক্ষা করছে। তবে ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যারিয়ারের ভাবনা নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের পার্থক্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জেন–জিদের মধ্যে পেশাসংক্রান্ত ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে। ঢাকার বাইরে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁরা এখনো নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সরকারি চাকরিকে প্রাধান্য দেন। ঢাকার বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়ারা সরকারি চাকরির প্রতি ততটা আগ্রহী নয়, তারা করপোরেট বা পেশাভিত্তিক কাজের দিকে ঝুঁকছে। আর ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়াদের মধ্যে আমি দেখেছি একেবারেই ভিন্ন আগ্রহ—কনটেন্ট রাইটিং, ব্লগিং, সৃজনশীল লেখা, এমনকি পোষা প্রাণীর চিকিৎসার মতো পেশায়ও তারা আগ্রহী।’

অধ্যাপক রিদওয়ানুল হকের মতে, দেশের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জেন–জি প্রজন্ম পেশাগত জায়গায় শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। তারা দক্ষতা অর্জন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে চায়। তাদের অনেকের মধ্যেই এখন ‘গ্লোবাল সিটিজেনশিপ’–এর ভাবনা গড়ে উঠছে।

একাধিক কাজে অভ্যস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম

এই প্রজন্মের বড় শক্তি হলো, নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা। ইউটিউব, অনলাইন কোর্স, পডকাস্ট কিংবা স্বেচ্ছাসেবী কাজ—সব জায়গায়ই তারা নতুন কিছু শিখছে। একাধিক কাজে অভ্যস্ত হচ্ছে। কেউ দিনভর অফিসে কাজ করে, রাতে অনলাইনে কনটেন্ট বানায়, কেউ আবার চাকরির পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন বা অনুবাদের কাজ করে।

রাজশাহীর এক তরুণ ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি দিনে ব্যাংকের কাজ করি, ছুটির দিনে ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসেবে খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) কাজ করি।’ তিনি জানান, ভিডিও এডিটরের কাজটা শুধু বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য করি না। ব্যাংকের একঘেয়েমি কাজ থেকে মুক্তি পেতে ভিডিও এডিটরের কাজটা টনিকের মতো কাজ করে।

তাই জেন–জিদের কাছে খণ্ডকালীন কাজ শুধু বাড়তি আয়ের উপায় নয়, এর মাধ্যমে তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করছে, যা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার বদলের পথ খুলে দিচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে নেতৃত্বের ধারণা

একসময় মনে করা হতো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বা পরিচালক (ম্যানেজার বা ডিরেক্টর) হওয়াই সাফল্যের চূড়া। এখনকার তরুণেরা নেতৃত্বকে দেখেন ভিন্নভাবে। তাঁরা নির্দেশ দেওয়ার চেয়ে সহযোগিতা, নমনীয়তা আর ভারসাম্যের ওপর বেশি জোর দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ ব্যবস্থাপকেরা এখন দলীয় কাজ, পারস্পরিক আস্থা ও নমনীয় সময়কে অগ্রাধিকার দেন। কাজের সময় নয়, ফলাফলই তাঁদের কাছে মুখ্য। বেশির ভাগ তরুণ তিন থেকে চার বছর একই জায়গায় থাকেন না। কেউ ভাবতে পারেন, এটা অস্থিরতা। কিন্তু তাঁরা এটাকে দেখেন উন্নতির কৌশল হিসেবে। এক জায়গায় আটকে না থেকে তাঁরা নতুন অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন এবং নতুন দক্ষতা গড়ে তুলছেন। এতে তাঁরা শুধু ভালো কর্মী নন; বরং পেশাজীবনে বহুমাত্রিক দক্ষতা অর্জন করছেন।

ভবিষ্যতের কর্মজগৎ

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের এই সময়ে জেন–জিরা নিজেদের মতো করে পথ খুঁজছে। তারা হয়তো ঐতিহ্যগত চাকরির নিয়ম মানছে না, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রস্তুতি অনেক বেশি। তরুণ পেশাজীবী উদয় রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম হয়তো স্থায়ী কিছু খোঁজে না, কিন্তু পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে। তাই আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা শঙ্কিত নই।’

সম্ভবত এটাই আগামী দিনের কর্মজগতের নতুন বাস্তবতা, যেখানে সাফল্যের মাপকাঠি কেবল পদোন্নতি বা চাকরির দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নয়; বরং পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে দ্রুত খাপ খাওয়ানো।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেয়ালে শিশুর আঁকা মুছার ৪টি সহজ এবং কার্যকর উপায়

কীভাবে জেন–জিরা ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে

আপডেট সময় : ০৫:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

একসময় চাকরি মানে ছিল, জীবনের নিশ্চয়তা। ভালো একটা অফিস, ধীরে ধীরে পদোন্নতি আর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লম্বা সম্পর্ক—এই ছিল কর্মজীবনের চেনা ছক। এখন সেই ধারণা বদলে গেছে। বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম, যাদের বলা হয় জেন–জি (Gen Z)। তারা চাকরিকে জীবনের কেন্দ্র নয়; বরং জীবনের একটি অংশ হিসেবে দেখে। কাজের মানে এখন কেবল আয় নয়, শেখা, আত্মতৃপ্তি ও স্বাধীনতা উপভোগ করা।

রাজধানীর উত্তরার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহজাবিন রহমান বলেন, ‘আমি এমন কোনো চাকরি করতে চাই না, যেখানে প্রতিদিন একই রকম কাজ করতে হবে। আমি এমন কিছু করতে চাই, যেখান থেকে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে পারব, নিজেকে গড়তে পারব। আর আমি মনে করি, আমার কাজের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষতা অর্জন করতে পারলে পুরো বিশ্বের দ্বার আমার জন্য উন্মুক্ত।’

‘নিশ্চয়তার’ ধারণা পাল্টে যাচ্ছে

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মা–বাবারা সাধারণত সন্তানদের বলে থাকেন, এমন একটা চাকরি করো, যাতে বাকি জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটানো যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। জেন–জিরা বিশ্বাস করে, চাকরিতে দীর্ঘকালীন নিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অটোমেশনের হাত ধরে এই পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই তরুণেরা খুঁজে নিচ্ছেন এমন পেশা, যেখানে পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত তাল মেলানো যায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেশাগত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, তরুণ কর্মীদের প্রায় ৭০ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে নতুন কোনো দক্ষতা শেখার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশেও অনেকেই দিনের কাজের পাশাপাশি রাতে অনলাইন কোর্সে অংশ নিচ্ছেন বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের জেন–জিরা কী ভাবছে

বাংলাদেশের জেন–জিরাও দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নয়; বরং কর্মক্ষেত্রে দ্রুত নতুন কিছু শিখতে চায়। তারা বুঝতে পারছে, একটা দক্ষতা সারা জীবন কাজে লাগবে না। তাই তারা শিখছে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের পরীক্ষা করছে। তবে ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যারিয়ারের ভাবনা নিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের পার্থক্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জেন–জিদের মধ্যে পেশাসংক্রান্ত ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের তরুণদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য আছে। ঢাকার বাইরে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁরা এখনো নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সরকারি চাকরিকে প্রাধান্য দেন। ঢাকার বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়ারা সরকারি চাকরির প্রতি ততটা আগ্রহী নয়, তারা করপোরেট বা পেশাভিত্তিক কাজের দিকে ঝুঁকছে। আর ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়াদের মধ্যে আমি দেখেছি একেবারেই ভিন্ন আগ্রহ—কনটেন্ট রাইটিং, ব্লগিং, সৃজনশীল লেখা, এমনকি পোষা প্রাণীর চিকিৎসার মতো পেশায়ও তারা আগ্রহী।’

অধ্যাপক রিদওয়ানুল হকের মতে, দেশের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জেন–জি প্রজন্ম পেশাগত জায়গায় শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। তারা দক্ষতা অর্জন করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে চায়। তাদের অনেকের মধ্যেই এখন ‘গ্লোবাল সিটিজেনশিপ’–এর ভাবনা গড়ে উঠছে।

একাধিক কাজে অভ্যস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম

এই প্রজন্মের বড় শক্তি হলো, নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা। ইউটিউব, অনলাইন কোর্স, পডকাস্ট কিংবা স্বেচ্ছাসেবী কাজ—সব জায়গায়ই তারা নতুন কিছু শিখছে। একাধিক কাজে অভ্যস্ত হচ্ছে। কেউ দিনভর অফিসে কাজ করে, রাতে অনলাইনে কনটেন্ট বানায়, কেউ আবার চাকরির পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন বা অনুবাদের কাজ করে।

রাজশাহীর এক তরুণ ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি দিনে ব্যাংকের কাজ করি, ছুটির দিনে ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর হিসেবে খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) কাজ করি।’ তিনি জানান, ভিডিও এডিটরের কাজটা শুধু বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য করি না। ব্যাংকের একঘেয়েমি কাজ থেকে মুক্তি পেতে ভিডিও এডিটরের কাজটা টনিকের মতো কাজ করে।

তাই জেন–জিদের কাছে খণ্ডকালীন কাজ শুধু বাড়তি আয়ের উপায় নয়, এর মাধ্যমে তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করছে, যা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার বদলের পথ খুলে দিচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে নেতৃত্বের ধারণা

একসময় মনে করা হতো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বা পরিচালক (ম্যানেজার বা ডিরেক্টর) হওয়াই সাফল্যের চূড়া। এখনকার তরুণেরা নেতৃত্বকে দেখেন ভিন্নভাবে। তাঁরা নির্দেশ দেওয়ার চেয়ে সহযোগিতা, নমনীয়তা আর ভারসাম্যের ওপর বেশি জোর দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ ব্যবস্থাপকেরা এখন দলীয় কাজ, পারস্পরিক আস্থা ও নমনীয় সময়কে অগ্রাধিকার দেন। কাজের সময় নয়, ফলাফলই তাঁদের কাছে মুখ্য। বেশির ভাগ তরুণ তিন থেকে চার বছর একই জায়গায় থাকেন না। কেউ ভাবতে পারেন, এটা অস্থিরতা। কিন্তু তাঁরা এটাকে দেখেন উন্নতির কৌশল হিসেবে। এক জায়গায় আটকে না থেকে তাঁরা নতুন অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন এবং নতুন দক্ষতা গড়ে তুলছেন। এতে তাঁরা শুধু ভালো কর্মী নন; বরং পেশাজীবনে বহুমাত্রিক দক্ষতা অর্জন করছেন।

ভবিষ্যতের কর্মজগৎ

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের এই সময়ে জেন–জিরা নিজেদের মতো করে পথ খুঁজছে। তারা হয়তো ঐতিহ্যগত চাকরির নিয়ম মানছে না, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রস্তুতি অনেক বেশি। তরুণ পেশাজীবী উদয় রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম হয়তো স্থায়ী কিছু খোঁজে না, কিন্তু পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে। তাই আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা শঙ্কিত নই।’

সম্ভবত এটাই আগামী দিনের কর্মজগতের নতুন বাস্তবতা, যেখানে সাফল্যের মাপকাঠি কেবল পদোন্নতি বা চাকরির দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা নয়; বরং পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে দ্রুত খাপ খাওয়ানো।