মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সাইনুসাইটিসের কারণে সৃষ্ট ব্যথা প্রায়ই অসহনীয় ও কষ্টদায়ক হয়। সাইনাস হলো মুখমণ্ডলের হাড়ের ভেতরের বায়ুপূর্ণ ছোট ছোট গহ্বর, যা সাধারণত বাতাস চলাচলের জন্য খোলা থাকে। যখন এই গহ্বরগুলো কোনো সংক্রমণ (ইনফেকশন) বা অ্যালার্জির কারণে ফুলে যায় এবং শ্লেষ্মা বা কফ জমে যায়, তখনই এর ভেতরে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ তীব্র মাথাব্যথা দেখা দেয়। এই ব্যথা দূর করার কিছু প্রমাণিত উপায় আছে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বেশ আরাম দিতে পারে।
সাইনুসাইটিসের মাথাব্যথার প্রকৃতি
সাইনুসাইটিসের মাথাব্যথা সাধারণত মুখমণ্ডল, বিশেষত কপাল, চোখের চারপাশ, গাল ও নাকের গোড়ায় অনুভূত হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা মাথা নিচু করলে এই ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। এই ব্যথা দূর করতে হলে সাইনাসের ভেতরের জমাটবাঁধা কফ বের করা ও প্রদাহ কমানোর দিকে মন দিতে হবে।
হার্ভার্ড হেলথলাইন এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইনাসের মাথাব্যথা উপশমের কিছু ঘরোয়া কার্যকর পদ্ধতি আছে:
১. আর্দ্রতা
বাষ্প বা গরম পানির ভাপ নেওয়া সাইনাসের কফ পাতলা করতে এবং চাপ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে পাত্রের একটু ওপরে মুখ রেখে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ভাপ নিন। দিনে কয়েকবার এটি করলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া কুসুম গরম পানিতে গোসল করলেও আরাম মিলতে পারে।
- হালকা গরম সেঁক
নাক, কপাল এবং গালের ওপর একটি গরম, ভেজা কাপড় দিয়ে হালকা চাপ দেওয়া যেতে পারে, এটি মাথার চাপ এবং ব্যথা উপশম করতে বেশ কার্যকর। - পর্যাপ্ত পানি খাওয়া
প্রচুর পরিমাণে পানি এবং অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে (যেমন গরম চা বা স্যুপ)। পর্যাপ্ত পানি খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয় এবং তা সহজে নিষ্কাশিত হতে পারে।

২. নাকের মাধ্যমে যত্ন
- স্যালাইন নেজাল স্প্রে
লবণপানি ব্যবহার করে নাক পরিষ্কার করুন, যা শ্লেষ্মা বের করে দিতে এবং সাইনাসের ফোলাভাব কমাতে কার্যকর।
- হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন
ঘরে বা কাজের জায়গায় একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাতাস আর্দ্র থাকে, যা সাইনাসের রাস্তাগুলো শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বাজারে বিভিন্ন নামে এবং দামে হিউমিডিফায়ার সহজেই পাওয়া যায়।
- মাথা উঁচু করে ঘুমানো
রাতে ঘুমানোর সময় বালিশ ব্যবহার করে মাথা উঁচু করে রাখুন। এটি শ্লেষ্মা নিষ্কাশনে সাহায্য করে এবং সাইনাসের চাপ কমায়।
৩. ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ
ব্যথানাশক প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনের মতো সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ মাথাব্যথা এবং সাইনাসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ডিকনজেস্ট্যান্ট
- এই ওষুধগুলো ফোলাভাব কমিয়ে সাইনাসের পথ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে নেজাল স্প্রে ডিকনজেস্ট্যান্টগুলো একটানা তিন দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়; কারণ, এর ফলে উল্টো ফলাফল আসতে পারে বা বেশি খারাপ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৪. কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
- যদি আপনার মাথাব্যথা কয়েক দিন পরও না কমে।
- তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। এর সঙ্গে জ্বর, দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন বা ঘাড়ে শক্ত ভাব দেখা যায়।
- এরই সঙ্গে আবার নাক থেকে হলুদ বা সবুজ শ্লেষা বের হয়।
- তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ, সাইনাসের সংক্রমণ (সাইনুসাইটিস) ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, ক্লিনিক্যাল স্ট্যাফ, স্নায়ুরোগ বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।
NEWS21 staff Musabbir khan 
























