ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ কেন্দ্রে নির্বাচন কর্মকর্তার সই ছাড়া অনেক ব্যালট বাক্সে জমা পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষক তৌহিদুল ইসলাম।
আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৪০০টি ব্যালট পেপারে সই ছিল না। এটি অনিয়ম।’ ব্যালট পেপারেও নির্বাচনী কর্মকর্তার স্বাক্ষরের ঘর রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের ভোটের দিনের নির্দেশিকাতেও ব্যালট পেপারে নির্বাচনী কর্মকর্তার স্বাক্ষর করার বিধি রয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৩৩৬ নম্বর কক্ষে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাউসার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুতে ব্যালটে সই করার নির্দেশনা ছিল না। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যালটে সই করা হচ্ছে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে এসব ব্যালটে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্বে থাকা কক্ষে ৫০টির মতো ব্যালট হতে পারে। অন্য কক্ষের বিষয়ে আমি জানি না।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৮০ জন এবং প্রকৌশল অনুষদ কেন্দ্রে ১৬ জনের মতো ভোটার সইবিহীন ব্যালটে ভোট দিয়েছেন। সই ছাড়া ব্যালটের তালিকা করতে বলা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ বলে অভিযোগ করেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভোটার গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমরা ৭৬ জন ভোটার দাবি জানিয়ে আসছিলাম, যাতে ব্রেইল পদ্ধতিতে আমাদের ভোট দিতে পারি। তবে কমিশন অন্য একজনকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের ব্যবস্থা করেছে। এতে আমার ভোট গোপন থাকছে না।’
আজ বুধবার দুপুরে চাকসু ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ জানান গোলাম কিবরিয়া। চাকসু ভবনের ভোট দিতে এসে পরিস্থিতি দেখার পর তিনি এসব কথা বলেন।
এই ভোটার বলেন, ‘অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভোট দিয়েছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। আমি এখনো ভোট দিইনি। অন্য একজনকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে ভোট দেব তা নিয়ে ভাবছি।’
নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ভোটের ব্যবস্থা করেছি। গোপন কক্ষে একজন সহায়তাকারী নিয়ে তাঁরা ভোট দিচ্ছেন। এত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সাড়ে চার ঘণ্টা শেষ হয়েছে বেলা ২টায়। এই সময়ে ভোট পড়েছে প্রায় ১১ হাজার, মোট ভোটের প্রায় ৪০ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনার জি এইচ হাবীব বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
আজ বুধবার সকাল ৯টায় ভোট শুরুর কথা ছিল। তবে শুরু হয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায়।
চাকসুতে এবার ভোটার প্রায় ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ১৫৬ জন। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৬ পদে লড়ছেন ৪১৫ প্রার্থী। একই সঙ্গে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন।
রেশমা আক্তারের কোলে ২০ মাস বয়সী শিশুসন্তান। শিশুকে রেখেই ভোট দিতে আসতে চেয়েছিলেন। তবে কান্নাকাটি করায় শিশুকে কোলে নিয়েই এসে দাঁড়ান ভোটারদের লাইনে।
দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন । এরপর ভোট দেওয়ার সুযোগ পান তিনি। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি বুথে ভোট দেন রেশমা আক্তার।
ভোট শেষে কক্ষ থেকে বেরিয়ে রেশমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা এগারোটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ভোট দিতে পেরেছি একটায়। সন্তানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়েছে। তবু ভোট দিতে পেরে আমি খুশি। আমার সঙ্গে আমার ২০ মাসের সন্তান রাফায়েত আবদুল্লাহও ইতিহাসের সাক্ষী হলো’।
রেশমা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী।