৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আনন্দ ও প্রত্যাশার বার্তা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, দীর্ঘ বিরতির পর গণতান্ত্রিক চর্চার এই প্রত্যাবর্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তবে দলীয় আধিপত্যের পরিবর্তে সহাবস্থান ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্বের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকে। একই সঙ্গে নির্বাচন করতে না পারার আক্ষেপও ছিল তাদের কণ্ঠে।
সাংবাদিকতা বিভাগের ১৯৯৭-৯৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুদ মিলাদ। তিনি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার হয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো অবস্থা। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্বাচন হচ্ছে, এটা ইতিবাচক। আশা করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
একই বিভাগের ২০০৩-২০০৪ সেশনের উত্তম দাশগুপ্ত। তিনি এসেছেন অনলাইন মাধ্যমের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় চাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচিত হবেন, তারা যেন দলীয় মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেন। প্রচারণায় যে সহাবস্থানের পরিবেশ ছিল, নির্বাচনের পরও তা বজায় থাকুক।’
১৯৯৮-৯৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্র নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ভোট দিতে, কিন্তু সেটা হয়নি। তবুও নির্বাচন হচ্ছে—এটা ভালো দিক। চাই সহাবস্থানের রাজনীতি টিকে থাকুক, যেন কেউ একক আধিপত্য কায়েম করতে না পারে।’
গণিত বিভাগের ২০০০-০১ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু। তিনি ভোট পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন অনেকটা কমবে। ভালো নেতৃত্ব এলে ক্যাম্পাসে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বণ্টন, নীতি-নৈতিকতা ও গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত হবে।’ তবে তাদের সময়ে নির্বাচন হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
ইতিহাস বিভাগের ২০০৪-০৫ সেশনের শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্র নেতা খোরশেদ আলম বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতিতে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দলীয়করণ, নিয়োগে অনিয়ম, আবাসন ও ক্যান্টিনে দুর্বৃত্তায়ন দেখা গেছে। আশা করি এবার জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করছেন, চাকসুর এই নির্বাচন কেবল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন সূচনা হতে পারে।