চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সিন্ডিকেটের দাপট
প্রতিদিন কোটি টাকার হাওয়া—নেপথ্যে তিন প্রভাবশালী কর্মকর্তা
চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া। সেবার নামে এখানে চলছে দালাল সিন্ডিকেটের অবাধ দৌরাত্ম্য। অফিসের ভেতরের তিন প্রভাবশালী কর্মকর্তা—উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান, সহকারি পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও হিসাবরক্ষক উত্তম—অভিযোগ উঠেছে, তারা দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট বাণিজ্য চালাচ্ছেন।
প্রতিদিন চাঁদপুর অফিসে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০টি পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ে। প্রত্যেক আবেদনের জন্য নির্ধারিত ঘুষ ১,৭০০ টাকা। হিসাব কষে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ আদায় হয়। এক সপ্তাহে এই অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকা। মাস শেষে তা গিয়ে ঠেকে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকায়।
এ বিপুল অঙ্কের টাকা দালালদের হাত ঘুরে ভাগ হয়ে যায় অফিসের ভেতরে থাকা সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে। অভিযোগ আছে, এই টাকা দিয়ে শুধু নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপনই নয়, তাদের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনদের নামে জমি, বাড়ি ও অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন তারা।
দালালদের দাপট
চাঁদপুর আঞ্চলিক অফিসের চারপাশেই দিনভর ভিড় লেগে থাকে দালালদের আস্তানায়। সাধারণ আবেদনকারীরা সরাসরি লাইনে দাঁড়ালেও তাদের নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। ফরমে সাংকেতিক সিল না থাকলে আবেদন জমা নেয় না কর্মচারীরা। অন্যদিকে দালালদের মাধ্যমে জমা পড়া ফরমগুলো একদম সহজে ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে দালালের দ্বারস্থ হতে হয়।
তিন কর্মকর্তার অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ
অভিযোগ অনুযায়ী—
• উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান অফিসের সার্বিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন।
• সহকারি পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম দালালদের দেখভাল ও মাঠপর্যায়ের সমন্বয় করেন।
• হিসাবরক্ষক উত্তম টাকা তোলার দায়িত্বে থেকে পুরো হিসাব ম্যানেজ করেন।
এই তিনজনের যোগসাজশ ছাড়া চাঁদপুর পাসপোর্ট অফিসে কোনো আবেদন এগোয় না। ফলে তারা এখন কার্যত পুরো অফিসকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
কোটি টাকার কারসাজি
সূত্র জানায়, ঘুষের টাকার একটি বড় অংশ ঢাকায় আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কাছেও নিয়মিত পাঠানো হয়। এছাড়া স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যরাও এই ভাগের অংশীদার। ফলে কোনো অনুসন্ধান শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা চাপা পড়ে যায়।
জনগণের ক্ষোভ
চাঁদপুরের সাধারণ মানুষ বলছেন, সরকারি ফি দিয়ে পাসপোর্ট করতে এসেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে দালালের হাতে। কেউ ঘুষ না দিলে তাকে দিনের পর দিন হয়রানি করা হয়। অথচ পাসপোর্ট অফিস একটি সেবা প্রতিষ্ঠান—কিন্তু এখানে সেবা নয়, চলছে প্রকাশ্যে বাণিজ্য।
কর্তৃপক্ষের নীরবতা
যদিও বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেন, দুর্নীতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সিন্ডিকেটের শক্তিশালী প্রভাব এবং টাকার লেনদেনে এসব তদন্ত অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
সব মিলিয়ে চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আজ দুর্নীতির সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেবার পরিবর্তে পাচ্ছেন হয়রানি, আর কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।