ঢাকা ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যৌতুক না পেয়ে গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

  • Meghla
  • আপডেট সময় : ১২:৩০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

দুই বছর আগে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন খালপাড় এলাকায় যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ের ওপর গরম তেল ঢেলে হত্যার দায়ে স্বামী মো. মিজান সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন, রায় ঘোষণার আগে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত মিজান পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার বাবুরহাট গ্রামের মৃত আওয়াল সরদারের ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোছা. মীম আক্তার রুপার সাথে ঘটনার প্রায় দশ বছর আগে মো. মিজান সরদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুক্তভোগী তার স্বামীর কাছ থেকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হন। এর আগে, আসামি মিজান তার শ্বশুরের কাছ থেকে বিশ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি এবং সাত লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান যৌতুক হিসেবে আদায় করে নেন।

২০২৩ সালের ৬ মে রাত ১০ টার দিকে আসামি মিজান সরদার আবার ভুক্তভোগী রুপার কাছে অতিরিক্ত যৌতুকের টাকা দাবি করলে সে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে মিজান তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই রাতে প্রায় ৩ টার দিকে যখন ভুক্তভোগী এবং তার সন্তানরা ঘরে ঘুমাচ্ছিল তখন মিজান সরদার একটি ফ্রাইং প্যানে গরম তেল তৈরি করে তার উপর ঢেলে দেয়। এতে গুরুতর দগ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী ব্যথায় চিৎকার করতে করতে বাথরুমে ছুটে যায় এবং শাওয়ার চালু করে। তার চিৎকার শুনে বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার এগিয়ে এসে ভুক্তভোগী ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়। যেখানে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৯ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২৫ মে ভুক্তভোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে ভুক্তভোগী ১৪ মে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দী দেন। একই আদালতে আসামি মিজান সরদার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সরোজিৎ কুমার ঘোষ একই বছরের ৩১ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১ (ক) এবং ৪ (২) (খ) ধারার অধীনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

যৌতুক না পেয়ে গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আপডেট সময় : ১২:৩০:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

দুই বছর আগে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন খালপাড় এলাকায় যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ের ওপর গরম তেল ঢেলে হত্যার দায়ে স্বামী মো. মিজান সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন, রায় ঘোষণার আগে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত মিজান পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার বাবুরহাট গ্রামের মৃত আওয়াল সরদারের ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মোছা. মীম আক্তার রুপার সাথে ঘটনার প্রায় দশ বছর আগে মো. মিজান সরদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুক্তভোগী তার স্বামীর কাছ থেকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হন। এর আগে, আসামি মিজান তার শ্বশুরের কাছ থেকে বিশ লাখ টাকা মূল্যের একটি জমি এবং সাত লাখ টাকা মূল্যের একটি দোকান যৌতুক হিসেবে আদায় করে নেন।

২০২৩ সালের ৬ মে রাত ১০ টার দিকে আসামি মিজান সরদার আবার ভুক্তভোগী রুপার কাছে অতিরিক্ত যৌতুকের টাকা দাবি করলে সে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে মিজান তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই রাতে প্রায় ৩ টার দিকে যখন ভুক্তভোগী এবং তার সন্তানরা ঘরে ঘুমাচ্ছিল তখন মিজান সরদার একটি ফ্রাইং প্যানে গরম তেল তৈরি করে তার উপর ঢেলে দেয়। এতে গুরুতর দগ্ধ হয়ে ভুক্তভোগী ব্যথায় চিৎকার করতে করতে বাথরুমে ছুটে যায় এবং শাওয়ার চালু করে। তার চিৎকার শুনে বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার এগিয়ে এসে ভুক্তভোগী ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায়। যেখানে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৯ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২৫ মে ভুক্তভোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে ভুক্তভোগী ১৪ মে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দী দেন। একই আদালতে আসামি মিজান সরদার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সরোজিৎ কুমার ঘোষ একই বছরের ৩১ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১ (ক) এবং ৪ (২) (খ) ধারার অধীনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।