ঢাকা ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজিরবিহীন ডাকাতি

  • Meghla
  • আপডেট সময় : ১২:১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

র‌্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট, ছাত্র ও সাংবাদিক পরিচয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরে ২০-২২ জনের একটি চক্র ধানমন্ডিতে ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্সের মালিকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ডাকাতরা নিজেদের প্রশাসনের লোক দাবি করে লুটপাট চালায়। বিষয়টি টের পেয়ে বাড়ির লোকজন ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় চার ডাকাতকে আটক করে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুজনকে আটক করা হয়। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি জানান,  র‌্যাব সদস্যদের জ্যাকেট পরে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও ছাত্র প্রতিনিধি সেজে অভিনব কৌশল নিয়ে বুধবার ভোর ৪টায় ২০-২২ জনের একটি ডাকাত দল ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হান্নান আজাদের বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় ওই ভবনের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়ও লুটপাট চালিয়ে ৩৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় তারা। ভুয়া অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে বাসার বাসিন্দারা ৯৯৯-এ ফোন দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কয়েকজন ডাকাত সদস্য মাইক্রোবাসে পালিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাশে নির্মাণাধীন ভবনের পাঁচজন শ্রমিক জীবন বাজি রেখে চার ডাকাতকে ধরে ফেলে। আটককৃতরা হলেন- ফরহাদ বিন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ও ওয়াকিল মাহমুদ (২৬)। পরে হাজারীবাগ থেকে ডাকাতিতে জড়িত আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সেই পাঁচ শ্রমিককে পুরস্কারের পাশাপশি পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে তারা ডাকাতি করে। ডাকাতিতে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে। ২৫ থেকে ৩০ জনের এ টিম কাজ করেছে ডাকাতির কাজে। তাদের মূল পরিচয় উদ্ঘাটন করে বিস্তারিত জানানো হবে। প্রাথমিকাভবে গ্রেপ্তার ৬ ডাকাত এলোপাতাড়ি তথ্য দিচ্ছে, তাদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, গত বছরের শেষের দিকে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলাও হয় তেজগাঁও থানায়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, দুটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা জব্দ করা হয়। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু বলেন, বুধবার ভোরে ২০-২২ জন ডাকাতের একটি দল এম এ হান্নান আজাদের বাসায় ঢোকে। তাদের কয়েকজনের গায়ে ‘র‌্যাব’ লেখা জ্যাকেট ছিল। অন্যরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছাত্র পরিচয় দেয়। বাড়ির মালিকের সন্দেহ হলে তিনি জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাসা ঘিরে ফেলে এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে গিয়ে পুলিশের তিনজন আহত হয়েছেন।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

নজিরবিহীন ডাকাতি

আপডেট সময় : ১২:১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

র‌্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট, ছাত্র ও সাংবাদিক পরিচয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোরে ২০-২২ জনের একটি চক্র ধানমন্ডিতে ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্সের মালিকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ডাকাতরা নিজেদের প্রশাসনের লোক দাবি করে লুটপাট চালায়। বিষয়টি টের পেয়ে বাড়ির লোকজন ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় চার ডাকাতকে আটক করে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুজনকে আটক করা হয়। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি জানান,  র‌্যাব সদস্যদের জ্যাকেট পরে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও ছাত্র প্রতিনিধি সেজে অভিনব কৌশল নিয়ে বুধবার ভোর ৪টায় ২০-২২ জনের একটি ডাকাত দল ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হান্নান আজাদের বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় ওই ভবনের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়ও লুটপাট চালিয়ে ৩৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় তারা। ভুয়া অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে বাসার বাসিন্দারা ৯৯৯-এ ফোন দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কয়েকজন ডাকাত সদস্য মাইক্রোবাসে পালিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাশে নির্মাণাধীন ভবনের পাঁচজন শ্রমিক জীবন বাজি রেখে চার ডাকাতকে ধরে ফেলে। আটককৃতরা হলেন- ফরহাদ বিন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩) ও ওয়াকিল মাহমুদ (২৬)। পরে হাজারীবাগ থেকে ডাকাতিতে জড়িত আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস। সাহসিকতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সেই পাঁচ শ্রমিককে পুরস্কারের পাশাপশি পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে তারা ডাকাতি করে। ডাকাতিতে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে। ২৫ থেকে ৩০ জনের এ টিম কাজ করেছে ডাকাতির কাজে। তাদের মূল পরিচয় উদ্ঘাটন করে বিস্তারিত জানানো হবে। প্রাথমিকাভবে গ্রেপ্তার ৬ ডাকাত এলোপাতাড়ি তথ্য দিচ্ছে, তাদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, গত বছরের শেষের দিকে অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছিল। এ ঘটনায় মামলাও হয় তেজগাঁও থানায়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, দুটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা জব্দ করা হয়। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু বলেন, বুধবার ভোরে ২০-২২ জন ডাকাতের একটি দল এম এ হান্নান আজাদের বাসায় ঢোকে। তাদের কয়েকজনের গায়ে ‘র‌্যাব’ লেখা জ্যাকেট ছিল। অন্যরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছাত্র পরিচয় দেয়। বাড়ির মালিকের সন্দেহ হলে তিনি জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাসা ঘিরে ফেলে এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে গিয়ে পুলিশের তিনজন আহত হয়েছেন।