ঢাকা ০৮:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশ খেলেছে ৬১ শতাংশ ডট বল জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড, দর্শকদের ছোঁয়ার সুযোগ সংসদের ২৫৫ পদে একটিও না পাওয়া ছাত্রদল, জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির ২৩৪ পদে জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত: আসিফ মাহমুদ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার জুলাই থেকে দ্রুততর হবে শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন, উৎস কার্গো ভিলেজে শৈলকূপায় জিয়া সাইবার ফোর্স এর আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সহকারী এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রনভীরের উদ্যোগে মসজিদ নির্মান সুন্দরগঞ্জে মালতোলা হিলফুল ফুজুল সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঘর উপহার গাজীপুরে বিএসটিআই ও র‍্যাবের যৌথ অভিযানে ৫ লক্ষ্য টাকা জরিমানা

জ্ঞান ফিরলে দেখি বদ্ধ কক্ষে লা.শে.র স্তূপে আটকে আছি

গত ৫ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় একদিকে ছাত্র-জনতা অন্যদিকে দুই থেকে আড়াইশো পুলিশের অবস্থান। হঠাৎই গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তখন অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আমারও ডান চোখে, মাথা ও শরীরে ছররা গুলি লাগে। আমি সড়কে লুটিয়ে পড়ি। ওই সময় পুলিশের একটি দল আমার কাছে এসে পেটাতে শুরু করে। এক চোখে গুলি লাগে, আরেক চোখে বুট (জুতা) দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।তিনি বলেন, ‘যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি একটি বদ্ধ কক্ষে লাশের স্তূপে আমি আটকে আছি। আমার শরীরের ওপর কারও মাথা, কারো হাত-পা ও দেহাংশ। এক চোখে গুলি লাগায় সেটি দিয়ে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। অন্য চোখে আবছা আলোয়ে লাশগুলো দেখতে পারছিলাম। তখন আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করি। তখন দুজন পুলিশ আমাকে টেনে বের করে লোকচক্ষুর আড়ালে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর আমার চিৎকারে একজন বৃদ্ধ লোক এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইবোনের মধ্যে শ্রাবণ বড়। ময়মনসিংহ নগরীর পুলিশ লাইন্সের জেল-রোড কাশর এলাকার মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে। আনন্দমোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। অভাবের তাড়নায় পড়াশোনার পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ।

শ্রাবণ শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে। কিন্তু ৫ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের হামলার শিকার হন তিনি। ছররা গুলি লাগে ডান চোখে, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে। এরপর আহত শ্রাবণের ওপর নির্বিচারে চলে পুলিশের লাঠিপেটা ও বুটের লাথি। পুলিশের ছররা গুলিতে হারিয়েছেন এক চোখ। অপর চোখটিও বুটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত। শরীরের গুলি বের করা হলেও চোখের ভেতরে দুটি ও মাথায় চারটি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন এখনও। গুলিবিদ্ধ চোখে দৃষ্টি নেই। সেই দৃষ্টি কখনও ফিরবে কিনা তাও জানা নেই। শ্রাবণের জীবনে এখন ঘোর অমানিশা।

বাবা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘৬ আগস্ট ভোরে ময়মনসিংহ থেকে গিয়ে ছেলেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু চিকিৎসকেরা অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৬ আগস্ট রাতেই চোখের টিস্যু সার্জারি করা হয়। কিন্তু গুলি বের করা যায়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চোখের গভীরে চলে গেছে গুলি। অস্ত্রোপচার করে বের করতে গেলে চোখ একেবারে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে আমার ধারণা ছেলেকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো গেলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

 

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ খেলেছে ৬১ শতাংশ ডট বল

জ্ঞান ফিরলে দেখি বদ্ধ কক্ষে লা.শে.র স্তূপে আটকে আছি

আপডেট সময় : ১০:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

গত ৫ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় একদিকে ছাত্র-জনতা অন্যদিকে দুই থেকে আড়াইশো পুলিশের অবস্থান। হঠাৎই গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। তখন অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আমারও ডান চোখে, মাথা ও শরীরে ছররা গুলি লাগে। আমি সড়কে লুটিয়ে পড়ি। ওই সময় পুলিশের একটি দল আমার কাছে এসে পেটাতে শুরু করে। এক চোখে গুলি লাগে, আরেক চোখে বুট (জুতা) দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।তিনি বলেন, ‘যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি একটি বদ্ধ কক্ষে লাশের স্তূপে আমি আটকে আছি। আমার শরীরের ওপর কারও মাথা, কারো হাত-পা ও দেহাংশ। এক চোখে গুলি লাগায় সেটি দিয়ে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। অন্য চোখে আবছা আলোয়ে লাশগুলো দেখতে পারছিলাম। তখন আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করি। তখন দুজন পুলিশ আমাকে টেনে বের করে লোকচক্ষুর আড়ালে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর আমার চিৎকারে একজন বৃদ্ধ লোক এসে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইবোনের মধ্যে শ্রাবণ বড়। ময়মনসিংহ নগরীর পুলিশ লাইন্সের জেল-রোড কাশর এলাকার মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে। আনন্দমোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। অভাবের তাড়নায় পড়াশোনার পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ।

শ্রাবণ শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে। কিন্তু ৫ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের হামলার শিকার হন তিনি। ছররা গুলি লাগে ডান চোখে, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে। এরপর আহত শ্রাবণের ওপর নির্বিচারে চলে পুলিশের লাঠিপেটা ও বুটের লাথি। পুলিশের ছররা গুলিতে হারিয়েছেন এক চোখ। অপর চোখটিও বুটের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত। শরীরের গুলি বের করা হলেও চোখের ভেতরে দুটি ও মাথায় চারটি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন এখনও। গুলিবিদ্ধ চোখে দৃষ্টি নেই। সেই দৃষ্টি কখনও ফিরবে কিনা তাও জানা নেই। শ্রাবণের জীবনে এখন ঘোর অমানিশা।

বাবা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘৬ আগস্ট ভোরে ময়মনসিংহ থেকে গিয়ে ছেলেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু চিকিৎসকেরা অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৬ আগস্ট রাতেই চোখের টিস্যু সার্জারি করা হয়। কিন্তু গুলি বের করা যায়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চোখের গভীরে চলে গেছে গুলি। অস্ত্রোপচার করে বের করতে গেলে চোখ একেবারে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে আমার ধারণা ছেলেকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো গেলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’