ঢাকা ০৮:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকাশ, নগদ ও রকেটে টাকা পাঠানোর ফি কত?

  • Musabbir Khan
  • আপডেট সময় : ০৪:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

বিকাশ, নগদ ও রকেটে টাকা পাঠানোর ফি কত?

বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থায় নতুন সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে আগামী নভেম্বর মাসে। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এম ক্যাশ, ট্যাপ হিসাবধারীরা একে অপরকে টাকা পাঠাতে পারবেন। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা।

এর পাশাপাশি এমএফএস হিসাব থেকে যেকোনো ব্যাংকেও টাকা পাঠানো যাবে। এখন এটি অসম্ভব নয়, তবে বেশ জটিল। গত সরকারের মেয়াদে চালু করা বিনিময় অ্যাপের মাধ্যমে এখনো এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএস হিসাবে টাকা পাঠানো যায়। এ জন্য উভয় গ্রাহককে বিনিময় অ্যাপে নিবন্ধন থাকতে হয়। নতুন নিয়মে টাকা পাঠাতে ঝামেলা পোহাতে হবে না।

একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, আপনি বিকাশের একজন গ্রাহক। নতুন সুবিধা চালু হওয়ার পর আপনি রকেট, নগদ, উপায়সহ যেকোনো এমএফএফ হিসাবধারীর কাছে সহজেই টাকা পাঠাতে পারবেন। ফলে ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে মুহূর্তেই টাকা চলে যাবে অন্য এমএফএস হিসাবধারীর কাছে।

নতুন নিয়মে শুধু এমএফএস প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে লেনদেন নয়, যেকোনো ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো (পিএসপি) নিজেদের মধ্যে এবং একে অপরের মধ্যে লেনদেন করতে পারবে। নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে এ সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সর্বোচ্চ মাশুল কত হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য লেনদেনের খরচ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন।

নতুন কী যুক্ত হলো

দেশে এখন ব্যাংকগুলোর অ্যাপস থেকে অন্য ব্যাংকে সহজেই টাকা পাঠানো যায়। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক তাদের অ্যাপস থেকে এমএফএস হিসাবে টাকা পাঠানোর সুযোগ রেখেছে। এ সেবা দিয়ে বেশির ভাগ ব্যাংক কোনো খরচ নেয় না।

এ ছাড়া ব্যাংকের অ্যাপ থেকে কিছু পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসাবেও টাকা পাঠানো যায়। পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) বা লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো এমন একটি সেবা মাধ্যম, যা ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড থেকে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অর্থ গ্রহণ করবে। এ মাধ্যম হয়ে বিক্রেতার হিসাবে চলে যাবে। পিএসপিগুলো ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করে।

এর বাইরে বিকাশ হিসাব থেকে কিছু ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। এটি মূলত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের জন্য। এতে এক হাজার টাকায় সর্বোচ্চ ১২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত মাশুল দিতে হয়।

এখন নতুন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সেবা চালু করেছে, তাতে সবাই সবাইকে টাকা পাঠাতে পারবে, যা গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করবে।

খরচ কত

নতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।

বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা। এ ধরনের টাকা লেনদেনে ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’ মডেলে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পক্ষই টাকা পাবে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টাকা পাঠানোর মাশুল যতটা কম রাখা যেত, তত ভালো হতো। অনেক দেশ ভর্তুকি দিয়ে ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করছে, বিনা মাশুলে অর্থ স্থানান্তর করার সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশও একই ধরনের উদ্যোগ নিলে নগদ টাকার ব্যবহার কমে আসত।

কী উপকার হবে

নতুন এ সেবা চালু হলে দেশের আর্থিক লেনদেনব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বিকাশ থেকে রকেট বা অন্যত্র টাকা পাঠানোর ব্যাপক চাহিদা আছে। অনেক সময় কেনাকাটা করতে গিয়ে কেউ বিকাশ বা রকেটে টাকা গ্রহণ করতে চান। তখন গ্রাহকেরা অর্থ স্থানান্তর করে লেনদেন করতে পারবেন।

এ ছাড়া এমএফএস হিসাব থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর চাহিদা আছে। অনেক সময় এমএফএস হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা জমা হলে সেই টাকা গ্রাহকেরা সহজেই ব্যাংকের হিসাবে নিতে পারবেন। এতে গ্রাহকেরা স্বস্তি পাবেন, যা নগদ লেনদেন কমিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

সাড়ে ১৪ কোটি হিসাবধারী, দৈনিক লেনদেন ৫ হাজার কোটি টাকা

বর্তমানে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এম ক্যাশ, ট্যাপ হিসাবধারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৬৪ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এমএফএসের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়। গত আগস্ট মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫১ কোটি ১২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ওই মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন বিকাশ, নগদের মতো এমএফএস হিসাবধারীরা।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিকাশ, নগদ ও রকেটে টাকা পাঠানোর ফি কত?

আপডেট সময় : ০৪:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থায় নতুন সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে আগামী নভেম্বর মাসে। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো, অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এম ক্যাশ, ট্যাপ হিসাবধারীরা একে অপরকে টাকা পাঠাতে পারবেন। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা।

এর পাশাপাশি এমএফএস হিসাব থেকে যেকোনো ব্যাংকেও টাকা পাঠানো যাবে। এখন এটি অসম্ভব নয়, তবে বেশ জটিল। গত সরকারের মেয়াদে চালু করা বিনিময় অ্যাপের মাধ্যমে এখনো এক এমএফএস থেকে অন্য এমএফএস হিসাবে টাকা পাঠানো যায়। এ জন্য উভয় গ্রাহককে বিনিময় অ্যাপে নিবন্ধন থাকতে হয়। নতুন নিয়মে টাকা পাঠাতে ঝামেলা পোহাতে হবে না।

একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, আপনি বিকাশের একজন গ্রাহক। নতুন সুবিধা চালু হওয়ার পর আপনি রকেট, নগদ, উপায়সহ যেকোনো এমএফএফ হিসাবধারীর কাছে সহজেই টাকা পাঠাতে পারবেন। ফলে ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে মুহূর্তেই টাকা চলে যাবে অন্য এমএফএস হিসাবধারীর কাছে।

নতুন নিয়মে শুধু এমএফএস প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে লেনদেন নয়, যেকোনো ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো (পিএসপি) নিজেদের মধ্যে এবং একে অপরের মধ্যে লেনদেন করতে পারবে। নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে এ সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সর্বোচ্চ মাশুল কত হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য লেনদেনের খরচ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন।

নতুন কী যুক্ত হলো

দেশে এখন ব্যাংকগুলোর অ্যাপস থেকে অন্য ব্যাংকে সহজেই টাকা পাঠানো যায়। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক তাদের অ্যাপস থেকে এমএফএস হিসাবে টাকা পাঠানোর সুযোগ রেখেছে। এ সেবা দিয়ে বেশির ভাগ ব্যাংক কোনো খরচ নেয় না।

এ ছাড়া ব্যাংকের অ্যাপ থেকে কিছু পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসাবেও টাকা পাঠানো যায়। পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) বা লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হলো এমন একটি সেবা মাধ্যম, যা ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড থেকে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অর্থ গ্রহণ করবে। এ মাধ্যম হয়ে বিক্রেতার হিসাবে চলে যাবে। পিএসপিগুলো ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করে।

এর বাইরে বিকাশ হিসাব থেকে কিছু ব্যাংকে টাকা পাঠানো যায়। এটি মূলত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের জন্য। এতে এক হাজার টাকায় সর্বোচ্চ ১২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত মাশুল দিতে হয়।

এখন নতুন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সেবা চালু করেছে, তাতে সবাই সবাইকে টাকা পাঠাতে পারবে, যা গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করবে।

খরচ কত

নতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।

বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা। এ ধরনের টাকা লেনদেনে ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’ মডেলে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পক্ষই টাকা পাবে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টাকা পাঠানোর মাশুল যতটা কম রাখা যেত, তত ভালো হতো। অনেক দেশ ভর্তুকি দিয়ে ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করছে, বিনা মাশুলে অর্থ স্থানান্তর করার সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশও একই ধরনের উদ্যোগ নিলে নগদ টাকার ব্যবহার কমে আসত।

কী উপকার হবে

নতুন এ সেবা চালু হলে দেশের আর্থিক লেনদেনব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বিকাশ থেকে রকেট বা অন্যত্র টাকা পাঠানোর ব্যাপক চাহিদা আছে। অনেক সময় কেনাকাটা করতে গিয়ে কেউ বিকাশ বা রকেটে টাকা গ্রহণ করতে চান। তখন গ্রাহকেরা অর্থ স্থানান্তর করে লেনদেন করতে পারবেন।

এ ছাড়া এমএফএস হিসাব থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর চাহিদা আছে। অনেক সময় এমএফএস হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা জমা হলে সেই টাকা গ্রাহকেরা সহজেই ব্যাংকের হিসাবে নিতে পারবেন। এতে গ্রাহকেরা স্বস্তি পাবেন, যা নগদ লেনদেন কমিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

সাড়ে ১৪ কোটি হিসাবধারী, দৈনিক লেনদেন ৫ হাজার কোটি টাকা

বর্তমানে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এম ক্যাশ, ট্যাপ হিসাবধারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৬৪ লাখ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এমএফএসের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়। গত আগস্ট মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫১ কোটি ১২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ওই মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন বিকাশ, নগদের মতো এমএফএস হিসাবধারীরা।