পাবলো আইমার তখন আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ। প্রতিভা চেনায় পাকা জহুরি আইমার তাই ১৫ বছর বয়সী ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোকে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে ডাকেন। ধীরে ধীরে মাস্তানতুয়োনোর ওপর চোখ পড়ে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের তৎকালীন কোচ হাভিয়ের মাচেরানোরও। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্তানতুয়োনোর ডাক পড়ে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলে।
আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক সেই দলের হয়ে ভালো খেলায় এ বছর স্বপ্নপূরণ হয় মাস্তানতুয়োনোর। আগস্টে রিয়াল মাদ্রিদ তাঁর সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তি করে। তার আগে মে মাসে ডাক পান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। ১৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার তারপর থেকেই আলোচনায়।
চলতি মৌসুমে রিয়ালের হয়ে এরই মধ্যে ৯ ম্যাচে ১ গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার হয়েও খেলেছেন ৩ ম্যাচ। সে পথে আর্জেন্টিনা দলের আক্রমণভাগে জুটি বেঁধেছেন লিওনেল মেসির সঙ্গে, পরে মেসির অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সিও পরতে হয়েছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মাঝ মাঠে মাস্তানতুয়োনো এই বয়সেই বড় ভরসার জায়গা। কিন্তু এই যে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এত দ্রুত সব স্বপ্নপূরণ হয়ে গেল—মাস্তানতুয়োনোর নিজের কেমন লাগে? কেমন লেগেছিল তাঁর মেসির ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামতে, যে জার্সি আর্জেন্টাইন ফুটবলে শুধু বিশেষ ফুটবলারদের জন্যই বরাদ্দ। মাস্তানতুয়োনোও কি তাহলে মেসির পথেই আছেন?
অন্তত মেসির অনুপস্থিতিতে তাঁর ওই জার্সিতে মাঠে নামা দেখে তা মনে হতেই পারে। কিন্তু মাস্তানতুয়োনো নিজে এত দ্রুতই এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ। ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অল্প বয়সেই তারকা হয়ে ওঠা এই ফুটবলার জানিয়েছেন কিছু অন্য গল্প—আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপ জয় কোথায় দেখেছেন, কেমন উদ্যাপন করেছেন, জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সি পরার অনুভূতি এবং অধিনায়ক মেসির সঙ্গে সম্পর্ক।
গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরের কাছে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলে হারের ম্যাচে ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন মাস্তানতুয়োনো। সেই জার্সি পরার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছেন, ‘ড্রেসিংরুমে গিয়ে ২১ নম্বর জার্সি খুঁজছিলাম। আগের ম্যাচে এই জার্সি পরেই খেলেছি। কিন্তু দেখলাম হুলিয়ানের (আলভারেজ) পাশেই আমার নাম—দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ভেবেছিলাম আমার সঙ্গে মজা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা সত্য ছিল এবং আমার জন্য অনন্য মুহূর্ত।’
মাস্তানতুয়োনোর জন্য ওই জার্সিটি শুধুই একটি সংখ্যা নয়, ‘লিওর ১০ নম্বর জার্সি এবং যে জার্সিটি ডিয়েগোও (ম্যারাডোনা) পরেছেন—এটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা ঘটনা। আমার প্রত্যাশায় এটা ছিল না। যখনই জার্সিটি দেখি গর্ব লাগে, এমন এক আবেগ ভর করে, যা ব্যাখ্যা করা কঠিন।’
মাস্তানতুয়োনো উঠে এসেছেন আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেট থেকে। জাতীয় দল এবং এই ক্লাবের পাঁড়ভক্তও তিনি। মেসিদের ২০২২ বিশ্বকাপ জয় দেখার স্মৃতিও ভাগ করে নিয়েছেন মাস্তানতুয়োনো। সে সময় তাঁর বয়স ১৫ বছর, ‘একই বাসায়, একই জার্সি (মেসির ১০ নম্বর) পরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা (বিশ্বকাপ ফাইনাল) দেখেছি। মুহূর্তটা খুবই আবেগের ছিল। ম্যাচ শেষে আমরা প্লাজায় গিয়ে উৎসব করি। ১৮ ডিসেম্বর—দিনটা আমি শরীরে ট্যাটু করিয়ে রেখেছি। এটা করেছি জাতীয় দল ও লিওর জন্য। সবাই বলেছে তাকে বিশ্বকাপ জিততে হবে এবং সে এটা জিতেছে দারুণভাবে।’
২০২৬ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয়। মাস্তানতুয়োনো স্বপ্ন দেখেন, এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে থাকবেন এবং মাঠে নামবেন, ‘এটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। ২০২৬ বিশ্বকাপে থাকতে আমি কঠোর পরিশ্রম করব। আমি ধাপে ধাপে এগোতে চাই। ১৮ বছর বয়সে এটা আসলে অবিশ্বাস্য এক স্বপ্ন। দলে আমি ভালোই আছি। বিশ্বকাপে খেলাটা আমার লক্ষ্য।’