হাবিব ওয়াহিদ। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক। সম্প্রতি কোক স্টুডিও বাংলার সংগীত আয়োজনে তাজিকিস্তানের কণ্ঠশিল্পী মেহেরনিগরি রুস্তমের সঙ্গে তাঁর গাওয়া ‘মহাজাদু’ গানটি দর্শক-শ্রোতার মাঝে সাড়া ফেলেছে। ফিউশনধর্মী এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ।
ফোক ফিউশন গান আগেও গেয়েছেন। তার পরও কি কখনও মনে হয়েছে, ‘মহাজাদু’ গানের ফিউশন করা চ্যালেঞ্জিং হবে?
কোক স্টুডিও বাংলা যেভাবে ‘মহাজাদু’ গানটি উপস্থাপন করতে চেয়েছে, তা শুনে যে কারও কাছেই কাজটি চ্যালেঞ্জিং মনে হওয়া স্বাভাবিক। দুই দেশের দুই শিল্পী আলাদা ভাষায় গাইবে, কিন্তু সেটি খণ্ডিত নয়, একটি গান হয়ে উঠতে হবে– এটা একেবারে সহজ নয়। তার পরও চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, সুরের ওপর কথা বসিয়ে একক গান হিসেবে দর্শক-শ্রোতার কাছে ‘মহাজাদু’ তুলে ধরতে চেয়েছি। এজন্য সংগীত আয়োজনে প্রচুর নিরীক্ষা চালাতে হয়েছে। গায়কিতেও ছিল পরিমিতি, যাতে গানে ভাষা কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
‘মহাজাদু’ গানের একটি অংশে আপনাকে ফারসি ভাষায় গাইতে দেখা গেল। ফারসি ভাষা কি আগে থেকে রপ্ত করা ছিল?
একদমই না, ফারসি ভাষায় আমার কোনো দখল নেই। বলতে পারেন, এটাও নিরীক্ষার একটা অংশ। মেহেরনিগরি রুস্তম তাজিকিস্তানের শিল্পী, যার বাংলা ভাষা একেবারেই জানা নেই, সে যদি বাংলায় গাইতে পারে, তাহলে আমি কেন ফারসিতে গাইতে পারবে না– এটাই ছিল আমার ভাবনা। তাই আমিও গানের একটি অংশ ফারসি ভাষায় গাওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রথম কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজনে অংশ নিলেন। এই ফিউশনধর্মী আয়োজন ‘মহাজাদু’ গানটিকেই কেন বেছে নেওয়া?
‘মহাজাদু’ বাউল শাহ খোয়াজ মিয়ার এক অনবদ্য সৃষ্টি। আমার বন্ধু কণ্ঠশিল্পী কায়া প্রথম এই গানটি শুনিয়েছিল। প্রথমবার শুনেই ভীষণ ভালো লেগে গিয়েছিল গানটি। ইচ্ছা ছিল নতুন সংগীতায়োজনে একটি রেকর্ড করার। কায়াকে নিয়ে প্রথম যখন ‘কৃষ্ণ’ অ্যালবামের কাজ শুরু করি, তখন ভেবেছিলাম অ্যালবামে ‘মহাজাদু’ গানটি রাখব। শেষমেশ আর হয়ে ওঠেনি। এরপর কায়ার সঙ্গে ‘মায়া’ অ্যালবামের কাজ করতে গিয়ে কীভাবে যেন এই গানটি আর রেকর্ড করা হয়নি। অবশেষে কোক স্টুডিও বাংলার জন্য গানটি ফিউশন করার সুযোগ হলো। সেসঙ্গে ‘মহাজাদু’ গেয়ে পূরণ হলো দুই যুগের অপূর্ণ ইচ্ছা।
প্রতিদিন সংগীত আয়োজনে ডুবে থাকেন। এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?
কী আর করব, নতুন সুরের অনুসন্ধান আর সংগীত নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে কেটে যাচ্ছে সময়। এভাবে যখন নতুন কোনো গান তৈরি হয়ে যাবে, তখন তা রেকর্ড করব।
এর মধ্যে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে নতুন কোনো গান আসবে?
শ্রোতারা এখন মহাজাদু গানটি শুনেছেন। তাই এ মুহূর্তে আমার চ্যানেলে নতুন কোনো গান প্রকাশ করব না। আমার চ্যানেলটি মূলত সেসব একনিষ্ঠ ভক্তদের জন্য, যারা প্রতিনিয়ত নতুন কিছুর অপেক্ষায় থাকেন। তাই যখন যে ধরনের কাজই করি না কেন, তা সাবস্ক্রাইবারদের জন্য শেয়ার করি। গান শুনে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন– এটাই আমার ভালো লাগা। গান প্রকাশের বিষয়ে ‘হিট’, ‘ফ্লপ’, ‘অ্যাভারেজ’– এই শব্দগুলো কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এটাও সত্যি যে, সংগীত আমার নেশা ও পেশা। তাই কাজের মধ্য দিয়ে শ্রোতার ভালোবাসা কুড়াতে চাই, তেমনি পরিশ্রমের জন্য রেভিনিউর প্রত্যাশা থাকে। তার পরও কখনও জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাতে চাই না। এজন্য শুরু থেকে নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি। যখন যেটি শ্রোতাদের কাছে শেয়ার করতে ইচ্ছা করছেন, সেটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করছি। এ কারণেই প্রায় প্রতি মাসেই আমার ভক্তরা নতুন কোনো না কোনো গান শোনার সুযোগ পাচ্ছেন।
আজকাল স্টেজ শোতে খুব একটা চোখে পড়ছে না, কারণ কী?
বর্ষা শুরু পর থেকে শীতের আগ পর্যন্ত স্টেজ শো কমই হয়। তা ছাড়া এখন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়োজকরা আউটডোর শো নিয়ে খুব একটা ভাবছেন বলে মনে হয় না। এর পরও কিছু ইনডোর করপোরেট শো হচ্ছে, যার দু-একটি আয়োজনে পারফর্মও করেছি। এর বাইরে শো নিয়ে তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। এখন বেশির ভাগ সময় স্টুডিওতে কাটছে।