ঢাকা ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে এক বছরে ১৩ হাজারটি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বিক্রি

  • sharmin sanjida
  • আপডেট সময় : ০৫:১৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

দেশে এক বছরে ১৩ হাজারটি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বিক্রি

দেশে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরুর এক বছরের মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে দেশে এই মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে ইফাদ মোটরস। প্রতিষ্ঠানটির এক সূত্র জানায়, অনলাইন ও অফলাইন বুকিং শুরুর প্রথম ১০ মিনিটে প্রায় ৩ হাজার মোটরসাইকেলের ক্রয়াদেশ পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে ১৩ হাজারের বেশি রয়্যাল এনফিল্ড বিক্রি হয়েছে।

দেশে প্রথম ৩৫০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল রয়্যাল এনফিল্ড। বর্তমানে হান্টার ৩৫০, মিটিয়র ৩৫০, ক্ল্যাসিক ৩৫০ ও বুলেট ৩৫০—এই চার মডেলে মোটরসাইকেলটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলের দাম মডেলভেদে ৩ লাখ ৭১ হাজার থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রয়্যাল এনফিল্ডের সংযোজন কারখানার কাজ শেষ হয় গত বছর অক্টোবর মাসে। পরে মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পরপর বাইকপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। ইফাদ মোটরস জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আট একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই সংযোজন কারখানা। বছরে ৩০ হাজার মোটরসাইকেল সংযোজনের সক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির। এই কারখানায় সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে ইফাদ মোটরস। ইঞ্জিন ছাড়া রয়্যাল এনফিল্ডের বাকি সব যন্ত্রাংশ দেশেই সংযোজন করা হয়। ভারতের বাইরে এটি রয়্যাল এনফিল্ডের ষষ্ঠ সংযোজন কারখানা। এর আগে নেপাল, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনায় সংযোজন কারখানা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ৪০ বছরের ইতিহাসে আমরা সব সময় ভিন্ন কিছু নিয়ে কাজ করেছি। অটোমোবাইল খাতে আমরা টায়ার থেকে শুরু করে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে লুব্রিকেন্ট, আর্থ মুভিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকুইপমেন্ট তৈরি করেছি। তবে বাকি রয়ে গিয়েছিল শুধু গাড়ি ও মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল কারখানাও গড়ে তুলেছি।’

তাসকিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বিশ্বে রয়্যাল এনফিল্ডের মতো লাইফস্টাইল মোটরসাইকেলের বাজার ৫ শতাংশের বেশি নয়। দেশে এ ধরনের মোটরসাইকেলের চাহিদা বছরে ১৮ থেকে ২০ হাজার। তাই বাংলাদেশে এই মোটরসাইকেলের বাজার খুব বড় হবে বা বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে—এমন প্রত্যাশাও আমাদের নেই। তা সত্ত্বেও গত এক বছরে আমরা যে সাড়া পেয়েছি, তাতে খুশি।

বাইকপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরুণদের কাছে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রতি রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। কারণ, এটির গতি ও আকর্ষণীয় লুক। তেমনই এক তরুণ বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বিন খুরশিদ। রয়্যাল এনফিল্ড ক্ল্যাসিক ৩৫০ মডেলের মোটরসাইকেল চালান তিনি। পাশাপাশি ‘রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাব বাংলাদেশ’ নামের একটি কমিউনিটি গ্রুপও গড়ে তুলেছেন। আবদুল্লাহ বিন খুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রয়্যাল এনফিল্ড তরুণদের খুব পছন্দের একটি মোটরসাইকেল। শহরের চেয়ে দূরের যাত্রায় এই মোটরসাইকেলে ভ্রমণ অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের।’

ইফাদ মোটরস সূত্রে জানা যায়, চারটি মডেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ক্ল্যাসিক ৩৫০ মডেলের। তবে শহরের রাস্তার জন্য বেশি জনপ্রিয় হান্টার ৩৫০ মডেলটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের সাত হাজারের বর্গফুটের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তিন হাজার বর্গফুটের সার্ভিস ও বিক্রয়োত্তর সেবাকেন্দ্র। দেশের মোট ১৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে এই মোটরসাইকেলের। নতুন আরও পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র চালুর কাজ চলছে।

২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ‘রয়্যাল এনফিল্ড ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ’ নামের একটি গ্রুপ খোলেন রফিকুন নবী। বর্তমানে গ্রুপটিতে ২ লাখ ৭৭ হাজার সদস্য রয়েছেন। রফিকুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, নকশা ও রাইডিং অভিজ্ঞতার জন্যই তরুণদের কাছে এটি বেশি জনপ্রিয়। তবে এই মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম ও জ্বালানি খরচ কিছুটা বেশি।

রয়্যাল এনফিল্ডের জ্বালানি খরচের বিষয়ে তেজগাঁও বিক্রয়কেন্দ্রের ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘৩৫০ সিসি ইঞ্জিন হওয়ায় এ ধরনের মোটরসাইকেলে জ্বালানি খরচ কিছুটা বেশি।

মোটরসাইকেলটি এতটাই জনপ্রিয় যে বাজারজাতের শুরুতে এটি তুমুল সাড়া ফেলেছিল দেশে। এ বিষয়ে ইফাদ মোটরসের বিপণন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক সাফকাত সাকিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে আসার ঘোষণার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় দেশে গুগলে তথ্য তালাশের তালিকায় প্রথম ছিল রয়্যাল এনফিল্ড।’

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে এক বছরে ১৩ হাজারটি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বিক্রি

আপডেট সময় : ০৫:১৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

দেশে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরুর এক বছরের মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে দেশে এই মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে ইফাদ মোটরস। প্রতিষ্ঠানটির এক সূত্র জানায়, অনলাইন ও অফলাইন বুকিং শুরুর প্রথম ১০ মিনিটে প্রায় ৩ হাজার মোটরসাইকেলের ক্রয়াদেশ পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে ১৩ হাজারের বেশি রয়্যাল এনফিল্ড বিক্রি হয়েছে।

দেশে প্রথম ৩৫০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল রয়্যাল এনফিল্ড। বর্তমানে হান্টার ৩৫০, মিটিয়র ৩৫০, ক্ল্যাসিক ৩৫০ ও বুলেট ৩৫০—এই চার মডেলে মোটরসাইকেলটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব মোটরসাইকেলের দাম মডেলভেদে ৩ লাখ ৭১ হাজার থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

রয়্যাল এনফিল্ডের সংযোজন কারখানার কাজ শেষ হয় গত বছর অক্টোবর মাসে। পরে মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পরপর বাইকপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। ইফাদ মোটরস জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আট একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই সংযোজন কারখানা। বছরে ৩০ হাজার মোটরসাইকেল সংযোজনের সক্ষমতা রয়েছে কারখানাটির। এই কারখানায় সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে ইফাদ মোটরস। ইঞ্জিন ছাড়া রয়্যাল এনফিল্ডের বাকি সব যন্ত্রাংশ দেশেই সংযোজন করা হয়। ভারতের বাইরে এটি রয়্যাল এনফিল্ডের ষষ্ঠ সংযোজন কারখানা। এর আগে নেপাল, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনায় সংযোজন কারখানা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ৪০ বছরের ইতিহাসে আমরা সব সময় ভিন্ন কিছু নিয়ে কাজ করেছি। অটোমোবাইল খাতে আমরা টায়ার থেকে শুরু করে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে লুব্রিকেন্ট, আর্থ মুভিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকুইপমেন্ট তৈরি করেছি। তবে বাকি রয়ে গিয়েছিল শুধু গাড়ি ও মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল কারখানাও গড়ে তুলেছি।’

তাসকিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বিশ্বে রয়্যাল এনফিল্ডের মতো লাইফস্টাইল মোটরসাইকেলের বাজার ৫ শতাংশের বেশি নয়। দেশে এ ধরনের মোটরসাইকেলের চাহিদা বছরে ১৮ থেকে ২০ হাজার। তাই বাংলাদেশে এই মোটরসাইকেলের বাজার খুব বড় হবে বা বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে—এমন প্রত্যাশাও আমাদের নেই। তা সত্ত্বেও গত এক বছরে আমরা যে সাড়া পেয়েছি, তাতে খুশি।

বাইকপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তরুণদের কাছে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রতি রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। কারণ, এটির গতি ও আকর্ষণীয় লুক। তেমনই এক তরুণ বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বিন খুরশিদ। রয়্যাল এনফিল্ড ক্ল্যাসিক ৩৫০ মডেলের মোটরসাইকেল চালান তিনি। পাশাপাশি ‘রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাব বাংলাদেশ’ নামের একটি কমিউনিটি গ্রুপও গড়ে তুলেছেন। আবদুল্লাহ বিন খুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রয়্যাল এনফিল্ড তরুণদের খুব পছন্দের একটি মোটরসাইকেল। শহরের চেয়ে দূরের যাত্রায় এই মোটরসাইকেলে ভ্রমণ অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের।’

ইফাদ মোটরস সূত্রে জানা যায়, চারটি মডেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ক্ল্যাসিক ৩৫০ মডেলের। তবে শহরের রাস্তার জন্য বেশি জনপ্রিয় হান্টার ৩৫০ মডেলটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের সাত হাজারের বর্গফুটের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তিন হাজার বর্গফুটের সার্ভিস ও বিক্রয়োত্তর সেবাকেন্দ্র। দেশের মোট ১৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে এই মোটরসাইকেলের। নতুন আরও পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র চালুর কাজ চলছে।

২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ‘রয়্যাল এনফিল্ড ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ’ নামের একটি গ্রুপ খোলেন রফিকুন নবী। বর্তমানে গ্রুপটিতে ২ লাখ ৭৭ হাজার সদস্য রয়েছেন। রফিকুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, নকশা ও রাইডিং অভিজ্ঞতার জন্যই তরুণদের কাছে এটি বেশি জনপ্রিয়। তবে এই মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম ও জ্বালানি খরচ কিছুটা বেশি।

রয়্যাল এনফিল্ডের জ্বালানি খরচের বিষয়ে তেজগাঁও বিক্রয়কেন্দ্রের ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘৩৫০ সিসি ইঞ্জিন হওয়ায় এ ধরনের মোটরসাইকেলে জ্বালানি খরচ কিছুটা বেশি।

মোটরসাইকেলটি এতটাই জনপ্রিয় যে বাজারজাতের শুরুতে এটি তুমুল সাড়া ফেলেছিল দেশে। এ বিষয়ে ইফাদ মোটরসের বিপণন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক সাফকাত সাকিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে আসার ঘোষণার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় দেশে গুগলে তথ্য তালাশের তালিকায় প্রথম ছিল রয়্যাল এনফিল্ড।’