ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশের পরও গাজায় বোমা হামলা

  • sharmin sanjida
  • আপডেট সময় : ০২:১৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গাজায় হামলা বন্ধ রাখতে ইসরায়েলকে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সে দাবি উপেক্ষা করে গতকাল শনিবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা সিটিসহ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সঙ্গে গোলাবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এতে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে হামাস জানায়, তারা সব জিম্মির মুক্তি দিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মত। তবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে গাজার একটি স্থানে বিমান হামলার জেরে ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ পরিকল্পনা নিয়ে মতামত জানাতে রোববার (আজ) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি। এর আগে শুক্রবার রাতেই হামাস এক বিবৃতিতে তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, যা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান সম্ভব।

বিবিসি লিখেছে, হামাসের বিবৃতির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘হামাসের বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা একটি স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত বের করে আনতে পারি।’ হামলা চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় এটা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক।’ 

ট্রাম্পের পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা এর অস্পষ্টতা। গাজার অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে টনি ব্লেয়ারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। হামাস চায় ফিলিস্তিনের কেউ গাজা শাসন করুক। তবে যে বিষয়টি নিয়ে তারা মূলত আলোচনা করতে চায় সেটা হলো, ইসরায়েলের সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার। এ নিয়ে প্রস্তাবে স্পষ্ট বার্তা নেই। বলা হয়েছে, পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তাদের সরানো হবে। অন্যদিকে হামাসকে নিরস্ত্র হতে বলা হচ্ছে। 

এ প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর টিমের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাব, যেন ইসরায়েলের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে যুদ্ধের অবসান ঘটে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্যে কাদের মুক্ত করা হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করছে ইসরায়েল। প্রস্তাবের পক্ষে হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এক্সে লেখেন, সব জিম্মির মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, এ পরিকল্পনা সংঘাতের মধ্যে শান্তি ফেরানোর সেরা সুযোগ। জার্মানি পুরোপুরি সমর্থন করে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর বলেন, এটি বড় অগ্রগতি।

নিহত ৬৭ হাজার ছাড়াল
ট্রাম্পের বারণ সত্ত্বেও গাজায় হামলা হয়েছে। আলজাজিরা জানায়, পশ্চিম গাজা সিটিতে ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টায় সব মিলিয়ে ৬৬ জন নিহত হন। আহত হন ২৬৫ জন। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আহত এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৩০ জন। কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।

অনাহারে আরও দুই মৃত্যু
গাজায় ইসরায়েলের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে আরও দুজন মারা গেছেন। আলজাজিরা জানায়, গাজায় অনাহার-অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা ৪৫৯-এ পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে ১৫৪ শিশু রয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের উদযাপন
ক্ষুধা-অনাহারে বিপর্যস্ত গাজা। বাবা-মায়ের চোখের সামনে প্রাণ যাচ্ছে সন্তানের। কোথাও হাড্ডিসার শিশুসন্তানের মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার থাকছে না মায়ের। ত্রাণকেন্দ্র যেন মৃত্যুফাঁদ; বেছে বেছে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। বোমায় প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। তাই যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রস্তাব যেন সুবাতাস নিয়ে এসেছে উপত্যকায়। আলজাজিরা জানায়, যুদ্ধ বন্ধের খবরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা উল্লাস করেছেন। রাস্তায় নেমে আনন্দ করতেও দেখা যায় অনেককে।

এটা মুসলিম দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাব নয়: পাকিস্তান 
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তা মুসলিম দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাব নয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। গত শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, কয়েকটি মুসলিম দেশ মিলে তারা যে খসড়া তৈরি করেছিলেন, ট্রাম্পের উপস্থাপন করা প্রস্তাব সেটি নয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তাবটি দিয়েছিল মুসলিম দেশগুলো।
আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দার বলেন, ‘আমি এটা পরিষ্কার করছি– যে ২০ দফা ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, সেটি আমাদের তৈরি করা প্রস্তাবের মতো নয়। কিছু পরিবর্তন সেখানে আনা হয়েছে।’ জানা যায়, ট্রাম্প ওই প্রস্তাব প্রকাশের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অভিযোগ আছে, নেতানিয়াহু হয়তো সেখানে পরিবর্তন এনেছিলেন।

কায়রোতে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শুরু কাল 
আলজাজিরা জানতে পেরেছে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য কারিগরি আলোচনা আগামীকাল সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে হবে। সূত্র অনুসারে, হামাসের আলোচক দল আজ রোববার কাতারের রাজধানী দোহা ত্যাগ করবে এবং আলোচনার জন্য কায়রো যাবে। একটি কাতারি প্রতিনিধি দলও চুক্তি নিশ্চিত করতে কায়রো ভ্রমণ করবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মৃত এবং জীবিত সব বন্দির প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলি আলোচকরা বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবেন। এসবের আগে গাজায় হামলা বাড়তে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

যা বললেন ইসরায়েলি বিশ্লেষক
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইসরায়েল কেবল তার ঐতিহ্যবাহী শত্রু ও সমালোচকদের কাছে নয়, বরং তার বন্ধুদের কাছেও দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। তেল আবিব থেকে আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘কেউই এটা বলবে না। আমার মনে হয়, শান্তির জন্য হামাসের জবাবের অপেক্ষা করার ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণ হলো, তিনি যখন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের দিকে তাকান, তখন তিনি দায়বদ্ধতা দেখতে পান। ট্রাম্পের ভাষায় বললে, তিনি একজন ব্যর্থ ব্যক্তিকে দেখেন।’ তিনি বলেন, “ইসরায়েল এটা প্রত্যাশা করেনি। কারণ তারা ‘গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল কার্যক্রমের অন্তহীন চক্রে’ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।”

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশের পরও গাজায় বোমা হামলা

আপডেট সময় : ০২:১৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে গাজায় হামলা বন্ধ রাখতে ইসরায়েলকে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সে দাবি উপেক্ষা করে গতকাল শনিবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা সিটিসহ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সঙ্গে গোলাবর্ষণের ঘটনাও ঘটে। এতে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে হামাস জানায়, তারা সব জিম্মির মুক্তি দিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মত। তবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে গাজার একটি স্থানে বিমান হামলার জেরে ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ পরিকল্পনা নিয়ে মতামত জানাতে রোববার (আজ) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি। এর আগে শুক্রবার রাতেই হামাস এক বিবৃতিতে তাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, যা আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান সম্ভব।

বিবিসি লিখেছে, হামাসের বিবৃতির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘হামাসের বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা একটি স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত বের করে আনতে পারি।’ হামলা চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় এটা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক।’ 

ট্রাম্পের পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা এর অস্পষ্টতা। গাজার অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে টনি ব্লেয়ারের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। হামাস চায় ফিলিস্তিনের কেউ গাজা শাসন করুক। তবে যে বিষয়টি নিয়ে তারা মূলত আলোচনা করতে চায় সেটা হলো, ইসরায়েলের সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার। এ নিয়ে প্রস্তাবে স্পষ্ট বার্তা নেই। বলা হয়েছে, পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তাদের সরানো হবে। অন্যদিকে হামাসকে নিরস্ত্র হতে বলা হচ্ছে। 

এ প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর টিমের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাব, যেন ইসরায়েলের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে যুদ্ধের অবসান ঘটে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্যে কাদের মুক্ত করা হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করছে ইসরায়েল। প্রস্তাবের পক্ষে হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এক্সে লেখেন, সব জিম্মির মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, এ পরিকল্পনা সংঘাতের মধ্যে শান্তি ফেরানোর সেরা সুযোগ। জার্মানি পুরোপুরি সমর্থন করে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর বলেন, এটি বড় অগ্রগতি।

নিহত ৬৭ হাজার ছাড়াল
ট্রাম্পের বারণ সত্ত্বেও গাজায় হামলা হয়েছে। আলজাজিরা জানায়, পশ্চিম গাজা সিটিতে ড্রোন হামলায় একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টায় সব মিলিয়ে ৬৬ জন নিহত হন। আহত হন ২৬৫ জন। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আহত এক লাখ ৬৯ হাজার ৪৩০ জন। কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।

অনাহারে আরও দুই মৃত্যু
গাজায় ইসরায়েলের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে আরও দুজন মারা গেছেন। আলজাজিরা জানায়, গাজায় অনাহার-অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা ৪৫৯-এ পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে ১৫৪ শিশু রয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের উদযাপন
ক্ষুধা-অনাহারে বিপর্যস্ত গাজা। বাবা-মায়ের চোখের সামনে প্রাণ যাচ্ছে সন্তানের। কোথাও হাড্ডিসার শিশুসন্তানের মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার থাকছে না মায়ের। ত্রাণকেন্দ্র যেন মৃত্যুফাঁদ; বেছে বেছে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। বোমায় প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। তাই যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রস্তাব যেন সুবাতাস নিয়ে এসেছে উপত্যকায়। আলজাজিরা জানায়, যুদ্ধ বন্ধের খবরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা উল্লাস করেছেন। রাস্তায় নেমে আনন্দ করতেও দেখা যায় অনেককে।

এটা মুসলিম দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাব নয়: পাকিস্তান 
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তা মুসলিম দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাব নয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। গত শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, কয়েকটি মুসলিম দেশ মিলে তারা যে খসড়া তৈরি করেছিলেন, ট্রাম্পের উপস্থাপন করা প্রস্তাব সেটি নয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তাবটি দিয়েছিল মুসলিম দেশগুলো।
আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দার বলেন, ‘আমি এটা পরিষ্কার করছি– যে ২০ দফা ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, সেটি আমাদের তৈরি করা প্রস্তাবের মতো নয়। কিছু পরিবর্তন সেখানে আনা হয়েছে।’ জানা যায়, ট্রাম্প ওই প্রস্তাব প্রকাশের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অভিযোগ আছে, নেতানিয়াহু হয়তো সেখানে পরিবর্তন এনেছিলেন।

কায়রোতে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শুরু কাল 
আলজাজিরা জানতে পেরেছে, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য কারিগরি আলোচনা আগামীকাল সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে হবে। সূত্র অনুসারে, হামাসের আলোচক দল আজ রোববার কাতারের রাজধানী দোহা ত্যাগ করবে এবং আলোচনার জন্য কায়রো যাবে। একটি কাতারি প্রতিনিধি দলও চুক্তি নিশ্চিত করতে কায়রো ভ্রমণ করবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মৃত এবং জীবিত সব বন্দির প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলি আলোচকরা বন্দিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবেন। এসবের আগে গাজায় হামলা বাড়তে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

যা বললেন ইসরায়েলি বিশ্লেষক
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইসরায়েল কেবল তার ঐতিহ্যবাহী শত্রু ও সমালোচকদের কাছে নয়, বরং তার বন্ধুদের কাছেও দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। তেল আবিব থেকে আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘কেউই এটা বলবে না। আমার মনে হয়, শান্তির জন্য হামাসের জবাবের অপেক্ষা করার ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণ হলো, তিনি যখন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের দিকে তাকান, তখন তিনি দায়বদ্ধতা দেখতে পান। ট্রাম্পের ভাষায় বললে, তিনি একজন ব্যর্থ ব্যক্তিকে দেখেন।’ তিনি বলেন, “ইসরায়েল এটা প্রত্যাশা করেনি। কারণ তারা ‘গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল কার্যক্রমের অন্তহীন চক্রে’ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।”