ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেবীর চরণে ১০৮ প্রদীপ ও পদ্মফুল মণ্ডপে বিদায়ের সুর

  • sharmin sanjida
  • আপডেট সময় : ০১:১৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

কাশফুলের দোলায় বাতাসে মিশে আছে ভক্তির সুর, আবার বাজছে বিদায়ের বেদনাময় বাঁশি। শরতের স্নিগ্ধতায় গত রোববার শুরু হওয়া দুর্গোৎসব এগিয়ে এলো শেষ প্রান্তে। গতকাল বুধবার ছিল মহানবমী, আজ বৃহস্পতিবার শুভ বিজয়া দশমী। পূজা, আরাধনা, আরতি ও ভক্তদের ঢল থেকে আজ দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন। মর্ত্যলোক ছেড়ে তিনি যাবেন কৈলাসে। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিসর্জন দেবেন প্রতিমা। ভাঙবে পাঁচ দিনের মিলনমেলা।

গতকাল সকাল থেকেই নবমীর তিথিতে ভক্তরা ভিড় জমান রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ দেশজুড়ে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে শুরু হয় সন্ধিপূজা। শাস্ত্রীয় নিয়মে অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট ধরে চলে এই পূজা। দেবীর চরণে নিবেদিত হয় ১০৮টি মাটির প্রদীপ আর ১০৮টি পদ্মফুল।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল ৯টায় পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং বেলা ১১টার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় দেবীদুর্গার মহাআরতি। পূজার ফাঁকে ঢাকঢোল, শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি আর কাঁসর ঘণ্টাধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। মহানবমীতেও আগের দিনের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপে মানুষের ঢল নেমেছিল। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি এবং দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেছেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নবমীতে এসেই পূজার পরিপূর্ণতা লাভ করে। একই সঙ্গে বাজে মায়ের বিদায়ের সুর। সপ্তমীতে পূজা দিলে সাত জনমের পাপমোচন হয়ে যায়। অষ্টমীতে অষ্টমঙ্গল লাভ করা হয়। নবমীতে পূর্ণপূজার পর দশমীতে দেবী অপরাজিতা হন।

মহানবমীতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। পূজা শেষে ছিল হোম, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ আরতি। দিনটিতে প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজামণ্ডপে সন্ধ্যায় ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আরতির ঢঙে যেন আলোর উজ্জ্বল মিছিল বয়ে যায়। দিনভর ছিল চণ্ডীপাঠ, কীর্তন বন্দনা আর ভক্তের ভিড়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে হবে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা এবং পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন। দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। বিকেল ৩টায় বের হবে রাজধানীতে বিজয়া শোভাযাত্রা। বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে বের হয়ে পলাশীর মোড়ে সমবেত হবে। বাদ্যযন্ত্র, মন্ত্রোচ্চারণ ও ভক্তদের প্রার্থনায় শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের দিকে। সেখানে বুড়িগঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। সরকারের পক্ষ থেকে এবার সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, দশমীতে বিহিত পূজার সঙ্গে রয়েছে সিঁদুর খেলা, দেবীকে মিষ্টি দান, শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জন।

দশমীতে একদিকে বিদায়, অন্যদিকে অপেক্ষা। ‘আনন্দময়ী মা’কে বিদায় জানানোর বেদনার সঙ্গে জেগে ওঠে নতুন আশার প্রতিশ্রুতি। আগামী শরতে আবার আসবেন দেবী। ঢাকঢোল, শঙ্খনাদের আবহে আজ দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেবেন ভক্তরা।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেবীর চরণে ১০৮ প্রদীপ ও পদ্মফুল মণ্ডপে বিদায়ের সুর

আপডেট সময় : ০১:১৫:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

কাশফুলের দোলায় বাতাসে মিশে আছে ভক্তির সুর, আবার বাজছে বিদায়ের বেদনাময় বাঁশি। শরতের স্নিগ্ধতায় গত রোববার শুরু হওয়া দুর্গোৎসব এগিয়ে এলো শেষ প্রান্তে। গতকাল বুধবার ছিল মহানবমী, আজ বৃহস্পতিবার শুভ বিজয়া দশমী। পূজা, আরাধনা, আরতি ও ভক্তদের ঢল থেকে আজ দেবী দুর্গা বিদায় নেবেন। মর্ত্যলোক ছেড়ে তিনি যাবেন কৈলাসে। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিসর্জন দেবেন প্রতিমা। ভাঙবে পাঁচ দিনের মিলনমেলা।

গতকাল সকাল থেকেই নবমীর তিথিতে ভক্তরা ভিড় জমান রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ দেশজুড়ে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে শুরু হয় সন্ধিপূজা। শাস্ত্রীয় নিয়মে অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট ধরে চলে এই পূজা। দেবীর চরণে নিবেদিত হয় ১০৮টি মাটির প্রদীপ আর ১০৮টি পদ্মফুল।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সকাল ৯টায় পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং বেলা ১১টার পর ভক্তরা অঞ্জলি দেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় দেবীদুর্গার মহাআরতি। পূজার ফাঁকে ঢাকঢোল, শঙ্খনাদ, উলুধ্বনি আর কাঁসর ঘণ্টাধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। মহানবমীতেও আগের দিনের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপে মানুষের ঢল নেমেছিল। মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি এবং দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেছেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নবমীতে এসেই পূজার পরিপূর্ণতা লাভ করে। একই সঙ্গে বাজে মায়ের বিদায়ের সুর। সপ্তমীতে পূজা দিলে সাত জনমের পাপমোচন হয়ে যায়। অষ্টমীতে অষ্টমঙ্গল লাভ করা হয়। নবমীতে পূর্ণপূজার পর দশমীতে দেবী অপরাজিতা হন।

মহানবমীতে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। পূজা শেষে ছিল হোম, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ আরতি। দিনটিতে প্রধান আকর্ষণ ছিল মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজামণ্ডপে সন্ধ্যায় ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আরতির ঢঙে যেন আলোর উজ্জ্বল মিছিল বয়ে যায়। দিনভর ছিল চণ্ডীপাঠ, কীর্তন বন্দনা আর ভক্তের ভিড়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে হবে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা এবং পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন। দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। বিকেল ৩টায় বের হবে রাজধানীতে বিজয়া শোভাযাত্রা। বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে বের হয়ে পলাশীর মোড়ে সমবেত হবে। বাদ্যযন্ত্র, মন্ত্রোচ্চারণ ও ভক্তদের প্রার্থনায় শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের দিকে। সেখানে বুড়িগঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। সরকারের পক্ষ থেকে এবার সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, দশমীতে বিহিত পূজার সঙ্গে রয়েছে সিঁদুর খেলা, দেবীকে মিষ্টি দান, শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জন।

দশমীতে একদিকে বিদায়, অন্যদিকে অপেক্ষা। ‘আনন্দময়ী মা’কে বিদায় জানানোর বেদনার সঙ্গে জেগে ওঠে নতুন আশার প্রতিশ্রুতি। আগামী শরতে আবার আসবেন দেবী। ঢাকঢোল, শঙ্খনাদের আবহে আজ দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেবেন ভক্তরা।