কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায় বাসা সাইদুর রহমানের। সপ্তাহখানেক আগে সদর থানার সামনে অবস্থিত মিশুক স্টোর থেকে ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কেনেন তিনি। এ জন্য তাঁকে গুনতে হয় এক হাজার ৩৫০ টাকা। অথচ এই গ্যাস সিলিন্ডারের সরকার নির্ধারিত দর এক হাজার ২৭০ টাকা। দোকানি তাঁর কাছ থেকে বাড়তি নিয়েছেন ৮০ টাকা। কোনো বাদ-প্রতিবাদে কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই সিলিন্ডার কিনতে হয় তাঁকে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরসহ উপজেলা পর্যায়েও গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। দোকানিদের ভাষ্য, প্রতি সিলিন্ডারের জন্য পরিবহন খরচ হচ্ছে তাদের ৮০ টাকা। এ জন্য ওই টাকাটা ক্রেতার কাছ থেকেই নিচ্ছেন। যদিও কোনো কোনো ক্রেতাকে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।
নিকলী পুরানবাজারের তিতুল এন্টারপ্রাইজ থেকে দুই সপ্তাহ আগে ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার কেনেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত সমীর কুমার আদিত্য। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকেও দোকানি এক হাজার ৩৫০ টাকা রেখেছেন। এর কমে কোনো দোকানেই সিলিন্ডার মেলে না। বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে কিশোরগঞ্জ শহরে তিতাস গ্যাসের অবস্থা নাজুক। সকাল ৬টার দিকে আর সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা গ্যাস এলেও মাঝের সময়ে টিমটিম করে জ্বলে চুলা। আধা ঘণ্টার রান্না দুই ঘণ্টায়ও শেষ হতে চায় না। গৌরাঙ্গবাজার এলাকার কলেজ শিক্ষক সায়মা হকের ভাষ্য, তিতাসের লাইনে ঠিকমতো গ্যাস আসে না। কখনও কখনও চুলা একেবারে নিভে যায়। বেলা ১১টায় ভাত বসালে ২টা বেজে যায়। পুরান থানার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল আলমের ভাষ্য, যে কারণে গ্যাস সংযোগ থাকার পরও অনেকে সিলিন্ডার কিনে রান্না করছেন। তাঁকে সকালে অফিসে যেতে হয়, বাচ্চাকে স্কুলে দিতে হয়। অধিকাংশ দিন সকালের নাশতা হোটেল থেকে কিনতে হয়।
সিলিন্ডারের জন্য বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ তারা। কিশোরগঞ্জ সদর থানার সামনে অবস্থিত মিশুক স্টোরে বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে জানা যায়, দোকানি ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার এক হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত এক হাজার ২৭০ টাকার চেয়ে বেশি দাম রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নাম জানাতে রাজি হননি তিনি। এই বিক্রেতার দাবি, সিলিন্ডার আনতে খরচ আছে ৮০ টাকা। যে কারণে সরকারি দামে বিক্রি করলে তাদের পোষায় না।
একই রকম মন্তব্য শহরের আখড়াবাজারের মেসার্স সিকদার ট্রেডার্সে কর্মরত ব্যক্তিদের। প্রতিষ্ঠানের কেউই তাদের নাম জানাতে রাজি হননি। তারাও দাবি করেন, পরিবহন খরচ যুক্ত করতে হচ্ছে। যে কারণে বাড়তি দাম রাখছেন।
কিশোরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান খান মনির জানান, তাঁর গৌরাঙ্গবাজার এলাকার বাসায় তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে। কিন্তু সরবরাহের অবস্থা নাজুক হওয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার কিনে রাখেন।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, ওই দামেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হবে। এর বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নেই।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ হাসান খান সমকালকে বলেন, বাড়তি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নেবেন।