জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
ভোট গণনা শেষ হলেও এবার অপেক্ষা করতে হবে ফল ঘোষণার জন্য।
এর আগে জাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান জানান, দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে গণনার কাজ শেষ হবে। এরপর ফল ঘোষণার প্রস্তুতি আমরা নেবো। আশা করছি, সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে।
তারও আগে সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুপুর দুইটা মধ্যে প্রকাশ করতে পারব বলে আশা করি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, উনি হয়তো গণনার কথা বলেছেন।
কমিশনের একজন সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে আমাদের কাছে কোনো লিখিত পদত্যাগপত্র আসেনি।
ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে একটি হলো ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করা। এটা তাদের অনেকের দাবি ছিলো। নির্বাচনে প্রায় ৬৫০ জনের মতো প্রার্থী রয়েছে। তাদের সব কিছু দেখে ভোট গণনা করতে হচ্ছে। এ কারণে ভোট গণনায় সময় লাগছে। এছাড়া গতকাল শুক্রবার আমাদের একজন সহকর্মী সিনেটের দরজায় ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে হার্ট এটাক করে মারা গেছেন। এ ঘটনা আমাকে মারাত্মকভাবে শোকাহত করেছে। এর প্রভাব ভোট গণনাতেও পড়েছিলো। এ কারণে ভোট গণনা কিছুক্ষণ স্থগিত ছিলো। এরপর আবার গণনা শুরু হয়, যা এখনও চলমান।
ফল কোথায় ঘোষণা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও স্থান সেভাবে ঠিক হয়নি। আমার মনে হয়, সিনেট কক্ষেই ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হলে অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের আগের দিন রাতে বাম সংগঠন ও ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা ওএমআর মেশিন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মালিক জামায়াত নেতা এমন অভিযোগ তুললে নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোট গণনায় ওএমআরের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি অর্থাৎ হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শিবিরের প্যানেলের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ওএমআর মেশিনে আর ব্যালট ছাপানোর প্রতিষ্ঠানকে বিএনপি নেতার বলে দাবি করে।
এদিকে ছাত্রসংগঠনগুলোর দোষারোপের প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে নেওয়া হয় এবং সব প্রস্তুতি শেষে রাত ১০টার পর শুরু হয় গণনা। তবে এর আগে ভোটের দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় ছাত্রদল নির্বাচন বর্জন করে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় বামসমর্থিত আরও চারটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
তবে জাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটির ৬৮ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও বাকি তিন প্যানেলের ১১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে নানা অভিযোগের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত ভোটে আছেন। বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষের আধাঘণ্টা আগে নানা অভিযোগ তুলে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ ওই ফোরামের আরও দুই শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ভোট বর্জন করেন।
শুক্রবার সকালে নির্বাচন কমিশন অফিসে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পর পুরো ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভোট গণনায় ধীরগতির জন্য শিক্ষক রাজনীতি আর গ্রুপিং কাজ করেছে বলে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছেন। দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিকেলে প্রায় তিনঘণ্টা ভোট গণনা বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যা সাতটায় হল সংসদের ভোট গণনা শেষে শুরু হয় কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা।
তবে এর দুইঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। এ সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ফিল্ড বলতে আমরা যা বুঝি নির্বাচনে সেটি ছিল না। আমি যাতে পদত্যাগ না করি সেজন্য গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমি অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। অনেকগুলো মারাত্মক ত্রুটি দেখেছি। এই ত্রুটিগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমিসহ নির্বাচন কমিশনের সকলে একমত পোষণ করলেও বিশেষ কিছু কারণে আমার যে মতামত তা গ্রহণে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন আমার মতামতের সুরাহা না করেই ভোট গণনা শুরু করে। তখন আমি আমার যে মত তা লিখিতভাবে জানিয়েছি। সময় খুব কম হওয়ায় আমার পক্ষে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমি নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।’
এদিকে ক্যাম্পাসে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিক জন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মধ্যে একাধিক গ্রুপিং আছে। নির্বাচন বর্জন করা তিন শিক্ষক আর পদত্যাগ করা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার উপাচার্যবিরোধী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। ভোট বানচাল করলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষেপে গিয়ে আন্দোলন করতে পারেন, এই সুযোগটা নিতে চান শিক্ষকদের একটি অংশ।’