ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুমার নামাজের গুরুত্ব

  • Meghla
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিন আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেখান থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়েছে। জুমার দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬২)

ইসলামের জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে একটি সূত্রে পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ। জুমার অর্থ হলো একত্র হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া।

যেহেতু এই দিনে মানুষ আল্লাহর বিধান পালনার্থে একত্র হয়, তাই এই দিনকে জুমার দিন বলা হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)
জুমার দিনের অধিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি (সা.) এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলা করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি জুমার সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ, আয়াত : ১০৯৮)

হাদিসবিশারদের মতে, এখানে ঈদ বলে খুশি ও আনন্দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

যেহেতু সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ এই দিনে মুসলমানরা একত্র হয়। পাশাপাশি যেহেতু এদিন প্রত্যেক মুসলমান জনসমাগমে যাবে, তাই এই দিনের কিছু আদব রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই দিনকে ‘‌গরিবের হজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তাবরানি)

উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানরা যাতে এই দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। কোনো অবস্থায়ই যেন এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হয়। হাদিস শরিফে জুমার দিনের বহু ফজিলত ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি মুমিন কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

জুমার নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামের দেওয়া বিধান ও আদবগুলো পালন করে বের হলে, প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হতে থাকে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমা‌র দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত্ সিয়াম (রোজা) পালন ও রাতভর সালাত (নামাজ) আদায়ের (সমান) সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

এর বিপরীতে যারা কোনো শরিয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তারা তো অফুরন্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেই, পাশাপাশি তাদের নাম গাফিলদের তালিকায় পড়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সিল মেরে দেবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৭)

নাউজুবিল্লাহ, একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (শরিয়ত সমর্থিত কোনো অজুহাত ছাড়া) পর পর তিন জুমা পড়া থেকে বিরত থাকে, তার নাম মুনাফিকদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (তাবরানি)

হাদিসটি সনদগতভাবে দুর্বল হলেও বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছাড়া যে জঘন্য অপরাধ, তা জুমার দিনের ফজিলত সংবলিত হাদিসগুলো দেখলে অনুভব করা যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত জুমার দিনের আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুমার নামাজের গুরুত্ব

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিন আদম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং সেখান থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়েছে। জুমার দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬২)

ইসলামের জুমার দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে একটি সূত্রে পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ। জুমার অর্থ হলো একত্র হওয়া, সংঘবদ্ধ হওয়া।

যেহেতু এই দিনে মানুষ আল্লাহর বিধান পালনার্থে একত্র হয়, তাই এই দিনকে জুমার দিন বলা হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯)
জুমার দিনের অধিক গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবীজি (সা.) এই দিনকে ঈদের দিনের সঙ্গে তুলা করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি জুমার সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ, আয়াত : ১০৯৮)

হাদিসবিশারদের মতে, এখানে ঈদ বলে খুশি ও আনন্দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

যেহেতু সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ এই দিনে মুসলমানরা একত্র হয়। পাশাপাশি যেহেতু এদিন প্রত্যেক মুসলমান জনসমাগমে যাবে, তাই এই দিনের কিছু আদব রক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই দিনকে ‘‌গরিবের হজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (তাবরানি)

উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানরা যাতে এই দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে এবং এই দিনের পবিত্রতা রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। কোনো অবস্থায়ই যেন এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হয়। হাদিস শরিফে জুমার দিনের বহু ফজিলত ও আমলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী সময়ের (সগিরা গুনাহের) জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি মুমিন কবিরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

জুমার নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামের দেওয়া বিধান ও আদবগুলো পালন করে বের হলে, প্রতি কদমে কদমে গুনাহ মাফ হতে থাকে। আওস ইবনে আওস আস-সাক্বাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমা‌র দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত্ সিয়াম (রোজা) পালন ও রাতভর সালাত (নামাজ) আদায়ের (সমান) সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

এর বিপরীতে যারা কোনো শরিয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে, তারা তো অফুরন্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেই, পাশাপাশি তাদের নাম গাফিলদের তালিকায় পড়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সিল মেরে দেবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৭)

নাউজুবিল্লাহ, একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে! উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা ওজরে (শরিয়ত সমর্থিত কোনো অজুহাত ছাড়া) পর পর তিন জুমা পড়া থেকে বিরত থাকে, তার নাম মুনাফিকদের খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (তাবরানি)

হাদিসটি সনদগতভাবে দুর্বল হলেও বিনা ওজরে জুমার নামাজ ছাড়া যে জঘন্য অপরাধ, তা জুমার দিনের ফজিলত সংবলিত হাদিসগুলো দেখলে অনুভব করা যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত জুমার দিনের আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।