ঢাকা ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্ধকার বস্তু ও শক্তির সন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

  • NUSRAT JAHAN
  • আপডেট সময় : ০৫:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) ইউক্লিড মিশন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রথম বড় ধরনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টেলিস্কোপটি ২৬ মিলিয়ন গ্যালাক্সির ছবি ধারণ করেছে, যা ১০ বিলিয়ন বছরের মহাজাগতিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছে।

এই পর্যবেক্ষণ মহাবিশ্বের গঠন এবং গ্যালাক্সিগুলোর বিবর্তন সম্পর্কে গবেষকদের অমূল্য তথ্য দিয়েছে। প্রথম ধাপে তৈরি করা ক্যাটালগে ৩ লাখ ৮০ হাজার গ্যালাক্সির বিশদ বিবরণ সংকলন করা হয়েছে, যেখানে কিছু গ্যালাক্সিকে তাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সির সঙ্গে মিশে যেতে দেখা গেছে।

অপরদিকে, নতুন কিছু ছবিতে দেখা গেছে ডার্ক ম্যাটারে আবৃত বৃহদাকার গ্যালাক্সিগুলো চারপাশের স্থানকাল (স্পেস-টাইম) বাঁকিয়ে দূরের গ্যালাক্সির আলোকে বিকৃত করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই বিরল দৃশ্য ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি বুঝতে অন্যতম বড় সূত্র হতে পারে।

১৯১২ সালে আইনস্টাইন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বৃহদাকার গ্যালাক্সির মতো বিশাল বস্তু মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র তৈরি করে স্থানকালকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এই ঘটনাকে বলা হয় মহাকর্ষীয় লেন্সিং, যেখানে গ্যালাক্সির পেছনের আলোকরশ্মি বিকৃত হয়ে উজ্জ্বল আর্ক (আধচক্রাকার রেখা) তৈরি করে।

ইউক্লিড মাত্র এক সপ্তাহে ৫০০টি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় লেন্সিংয়ের ঘটনা ধারণ করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে স্থানকাল বিকৃত হতে দেখা গেছে। এই উজ্জ্বল আর্কগুলোর সূক্ষ্ম পরিমাপের মাধ্যমে গবেষকরা নির্ধারণ করতে পারবেন একটি গ্যালাক্সির চারপাশে কতটা ডার্ক ম্যাটার রয়েছে এবং এটি কতটা ঘনভাবে জমাট বেঁধেছে।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মাত্র ৫% সাধারণ পদার্থ দিয়ে গঠিত। বাকি ২৫% ডার্ক ম্যাটার এবং ৭০% ডার্ক এনার্জি, যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করছে।

গবেষকরা আশা করছেন, ইউক্লিডের পর্যবেক্ষণ থেকে ডার্ক এনার্জির প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। আগামী ছয় বছরে ১.৫ বিলিয়ন গ্যালাক্সির ছবি সংগ্রহ করবে ইউক্লিড, যা মহাবিশ্বের বিস্তৃতি ও ডার্ক এনার্জির রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রফেসর স্টিফেন সার্জেন্ট বলেছেন, এই পর্যবেক্ষণ শুধু একধরনের আবিষ্কার নয়, এটি এক নতুন যুগের সূচনা। সামনে আরও অসংখ্য চমকপ্রদ তথ্য উন্মোচিত হবে, যা আমাদের মহাবিশ্বকে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করবে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

অন্ধকার বস্তু ও শক্তির সন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন

আপডেট সময় : ০৫:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) ইউক্লিড মিশন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রথম বড় ধরনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, টেলিস্কোপটি ২৬ মিলিয়ন গ্যালাক্সির ছবি ধারণ করেছে, যা ১০ বিলিয়ন বছরের মহাজাগতিক ইতিহাসকে তুলে ধরেছে।

এই পর্যবেক্ষণ মহাবিশ্বের গঠন এবং গ্যালাক্সিগুলোর বিবর্তন সম্পর্কে গবেষকদের অমূল্য তথ্য দিয়েছে। প্রথম ধাপে তৈরি করা ক্যাটালগে ৩ লাখ ৮০ হাজার গ্যালাক্সির বিশদ বিবরণ সংকলন করা হয়েছে, যেখানে কিছু গ্যালাক্সিকে তাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সির সঙ্গে মিশে যেতে দেখা গেছে।

অপরদিকে, নতুন কিছু ছবিতে দেখা গেছে ডার্ক ম্যাটারে আবৃত বৃহদাকার গ্যালাক্সিগুলো চারপাশের স্থানকাল (স্পেস-টাইম) বাঁকিয়ে দূরের গ্যালাক্সির আলোকে বিকৃত করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই বিরল দৃশ্য ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি বুঝতে অন্যতম বড় সূত্র হতে পারে।

১৯১২ সালে আইনস্টাইন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বৃহদাকার গ্যালাক্সির মতো বিশাল বস্তু মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র তৈরি করে স্থানকালকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এই ঘটনাকে বলা হয় মহাকর্ষীয় লেন্সিং, যেখানে গ্যালাক্সির পেছনের আলোকরশ্মি বিকৃত হয়ে উজ্জ্বল আর্ক (আধচক্রাকার রেখা) তৈরি করে।

ইউক্লিড মাত্র এক সপ্তাহে ৫০০টি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় লেন্সিংয়ের ঘটনা ধারণ করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে স্থানকাল বিকৃত হতে দেখা গেছে। এই উজ্জ্বল আর্কগুলোর সূক্ষ্ম পরিমাপের মাধ্যমে গবেষকরা নির্ধারণ করতে পারবেন একটি গ্যালাক্সির চারপাশে কতটা ডার্ক ম্যাটার রয়েছে এবং এটি কতটা ঘনভাবে জমাট বেঁধেছে।

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের মাত্র ৫% সাধারণ পদার্থ দিয়ে গঠিত। বাকি ২৫% ডার্ক ম্যাটার এবং ৭০% ডার্ক এনার্জি, যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করছে।

গবেষকরা আশা করছেন, ইউক্লিডের পর্যবেক্ষণ থেকে ডার্ক এনার্জির প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। আগামী ছয় বছরে ১.৫ বিলিয়ন গ্যালাক্সির ছবি সংগ্রহ করবে ইউক্লিড, যা মহাবিশ্বের বিস্তৃতি ও ডার্ক এনার্জির রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রফেসর স্টিফেন সার্জেন্ট বলেছেন, এই পর্যবেক্ষণ শুধু একধরনের আবিষ্কার নয়, এটি এক নতুন যুগের সূচনা। সামনে আরও অসংখ্য চমকপ্রদ তথ্য উন্মোচিত হবে, যা আমাদের মহাবিশ্বকে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করবে।