ঢাকা ১২:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউজিসির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল চান ইডেনের ছাত্রীরা

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর সাতটি কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলের ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। এটিকে বাস্তবতা বিবর্জিত, নারী শিক্ষার সংকোচন নামে অভিহিত করেছেন তারা। পাশাপাশি ইডেন কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিরোধিতা করে তারা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলন গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে চলে গেছে এবং তাদের দ্বারা অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা।

আজ সোমবার ইডেন কলেজের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে একদল ছাত্রী এসব কথা জানান। তারা অধ্যাদেশটি বাতিল করে কলেজগুলোর সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শিক্ষা কমিশন অথবা রিভিউ কমিটির মাধ্যমে বাস্তবসম্মত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন কলেজের ছাত্রী মরিয়ম। এ সময় কলেজের ছাত্রী মারিয়া হক শৈলী, হাফসা মেহজাবিন ও শারমিন ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৈষম্যদূরীকরণ ও উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নেদর লক্ষ্যে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একটি সামষ্টিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু এই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ একপর্যায়ে গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে চলে যায়। তাদের অতি উগ্রতা, অশোভন আচরণ এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিটি ক্যাম্পাসে অরাজকতার আগুন জ্বালিয়ে চলেছে। তাদের মতের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য আসলে সাধারণ ছাত্র, নারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

তারা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সম্প্রীতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ খসড়া অধ্যাদেশ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

নতুন রিভিউ কমিটির দাবি জানিয়ে আরও বলা হয়, সাত কলেজ প্রতিটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, সাধারণ শিক্ষক, অ্যালামনাই এবং শিক্ষার্থীদের সরাসরি আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সাত দিনের সময় বেধে প্রহসনমূলক ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সময় উপযোগী টেকসই ও গণতান্ত্রিক অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করতে হবে।

ইডেনে সহশিক্ষার বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সহশিক্ষার বিরুদ্ধে নই, তবে ইডেন মহিলা কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি একটি অতি প্রাচীন কলেজ যা নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমরা কোনোভাবেই চাই না এখানে সহশিক্ষা চালু হোক। কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা চাই সাত কলেজের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মডেল অনুসরণ করা হোক। যেখানে সকল কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত ১৬ জন শিক্ষক ও গবেষণা বাজেট থাকবে। সকল কলেজে ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ সর্বক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিবহন, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব, আবাসন সুবিধা, উন্নত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ফ্রি ওয়াইফাই ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা ইডেন কলেজের সম্পত্তির মালিকানা বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তরের অস্বীকৃতি জানান। তারা বলেন, নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য একজন দানবীর ইডেন মহিলা কলেজের জমি দান করেছিলেন। এটি স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি কলেজের নামে সংরক্ষিত থাকবে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসব সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করা যাবে না। নারী শিক্ষার সংকোচন অগ্রহণযোগ্য। ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ বহু বছর ধরে মেয়েদের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের ইঙ্গিত স্পষ্ট এটি সম্পূর্ণ অন্যায্য।

তারা আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি সকল অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। আমরা কোনো অরাজকতা চাই না। নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করে বাস্তবসম্মত সমাধানের পদক্ষেপ নিন। আমাদের রাজপথে ফেলে দেবেন না।

আন্দোলনের মুখে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব করা হয়। তবে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশায় কলেজগুলোর ঐতিহ্য বিনষ্ট হওয়া, একাদশ শ্রেণির পাঠদান, শিক্ষা ক্যাডার নিয়ে সংকট সৃষ্টিসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউজিসির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল চান ইডেনের ছাত্রীরা

আপডেট সময় : ০৬:১৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজধানীর সাতটি কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলের ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। এটিকে বাস্তবতা বিবর্জিত, নারী শিক্ষার সংকোচন নামে অভিহিত করেছেন তারা। পাশাপাশি ইডেন কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিরোধিতা করে তারা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলন গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে চলে গেছে এবং তাদের দ্বারা অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা।

আজ সোমবার ইডেন কলেজের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনে একদল ছাত্রী এসব কথা জানান। তারা অধ্যাদেশটি বাতিল করে কলেজগুলোর সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শিক্ষা কমিশন অথবা রিভিউ কমিটির মাধ্যমে বাস্তবসম্মত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন কলেজের ছাত্রী মরিয়ম। এ সময় কলেজের ছাত্রী মারিয়া হক শৈলী, হাফসা মেহজাবিন ও শারমিন ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৈষম্যদূরীকরণ ও উচ্চশিক্ষার আধুনিকায়নেদর লক্ষ্যে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একটি সামষ্টিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু এই আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ একপর্যায়ে গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে চলে যায়। তাদের অতি উগ্রতা, অশোভন আচরণ এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিটি ক্যাম্পাসে অরাজকতার আগুন জ্বালিয়ে চলেছে। তাদের মতের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য আসলে সাধারণ ছাত্র, নারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকেরা বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

তারা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সম্প্রীতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ খসড়া অধ্যাদেশ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

নতুন রিভিউ কমিটির দাবি জানিয়ে আরও বলা হয়, সাত কলেজ প্রতিটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, সাধারণ শিক্ষক, অ্যালামনাই এবং শিক্ষার্থীদের সরাসরি আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সাত দিনের সময় বেধে প্রহসনমূলক ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সময় উপযোগী টেকসই ও গণতান্ত্রিক অধ্যাদেশ প্রণয়নের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করতে হবে।

ইডেনে সহশিক্ষার বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা সহশিক্ষার বিরুদ্ধে নই, তবে ইডেন মহিলা কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি একটি অতি প্রাচীন কলেজ যা নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমরা কোনোভাবেই চাই না এখানে সহশিক্ষা চালু হোক। কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা চাই সাত কলেজের জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মডেল অনুসরণ করা হোক। যেখানে সকল কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত ১৬ জন শিক্ষক ও গবেষণা বাজেট থাকবে। সকল কলেজে ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে ফলাফল প্রকাশ সর্বক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিবহন, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব, আবাসন সুবিধা, উন্নত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ফ্রি ওয়াইফাই ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা ইডেন কলেজের সম্পত্তির মালিকানা বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তরের অস্বীকৃতি জানান। তারা বলেন, নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য একজন দানবীর ইডেন মহিলা কলেজের জমি দান করেছিলেন। এটি স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি কলেজের নামে সংরক্ষিত থাকবে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসব সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করা যাবে না। নারী শিক্ষার সংকোচন অগ্রহণযোগ্য। ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ বহু বছর ধরে মেয়েদের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের ইঙ্গিত স্পষ্ট এটি সম্পূর্ণ অন্যায্য।

তারা আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি সকল অংশীজনের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। আমরা কোনো অরাজকতা চাই না। নতুন শিক্ষা কমিশন বা নতুন রিভিউ কমিটি গঠন করে বাস্তবসম্মত সমাধানের পদক্ষেপ নিন। আমাদের রাজপথে ফেলে দেবেন না।

আন্দোলনের মুখে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব করা হয়। তবে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশায় কলেজগুলোর ঐতিহ্য বিনষ্ট হওয়া, একাদশ শ্রেণির পাঠদান, শিক্ষা ক্যাডার নিয়ে সংকট সৃষ্টিসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।