ঢাকা ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘তুমি তো সেই যাবেই চলে…

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

এক।
আহা ক্লেশ
নিরন্তর সম্পর্ক যথা প্রগাঢ় তীব্রতম শ্লেষ!

কিংবা যখন সিসিফাসের পাথর বয়ে নিয়ে 
দিবসের শেষভাগে পাহাড়ের অগ্রচূড়া দেখো 
তোমার আনত চোখে পায়ের আঙুলগুলো 
পাহাড়ের পাথুরে গায়ে কপালের ঘামে ভিজে ওঠে
সেই কালে দৈবাদেশ বা মালিকের হুংকারে 
পাথর গড়িয়ে পড়ে নির্জন উপত্যকার মাঝে। 
আহা ক্লেশ! 
সকল সম্পদ শুধু কণা কণা অবিরাম দ্বেষ! 
তুমি তবে যাও, বিদায়ের সুরলিপি করো
আমি তবু রয়ে যাবো এইখানে বসে আজীবন 
যত ভাবে যত শব্দে যত বর্ণে পারি 
লিখে যাবো এপিটাফ, অশেষ অক্লেশ।      
দুই।
আত্মহত্যাকে ভীরুতার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছিল কোন কালে তা আমি অত নিশ্চিত নই। কিন্তু সম্ভবত উপযোগবাদিতা আর মানবতাবাদ দুয়েরই এখানে মারাত্মক [কু]প্রভাব আছে। জীবন একটাই, তা উপভোগ করতে হবে– এই ধরনের দর্শনচর্চার থেকে এসব ভাবনাচিন্তার জন্ম হয়ে থাকতে পারে। মনুষ্যজীবন মহত্তর– এই ধরনের প্রচারণা মানবতাবাদ আর ধর্মবাদ উভয়েরই পছন্দের চিন্তা। ফলে এখানে এক পক্ষের হয়ে আরেক পক্ষকে নিন্দামন্দ করা কাণ্ডজ্ঞানের পরিচায়ক হবে না। আমি তা করতে চাই না। আমার চেনাজানারা জানেন, এখানকার পাঠকদের জানবার কথা নয় যদিও, তবুও আমি যে আত্মহত্যার নিন্দুক নই তা এতক্ষণে স্পষ্ট হবার কথা। এসব চিন্তাভাবনা প্রকাশের বিশাল বিপদ আছে। প্রথম বিপদ হলো আত্মহত্যাকে নিন্দা না-করার সরল অর্থ অনেকে করেন যেন বা আমি আত্মহত্যাকে উৎসাহিত করছি। কোনো কিছুকে নিন্দা না করার মানেই বন্দনা হয় কীভাবে! এভাবে যাঁরা ভাবেন তাঁদের সাথে অধিক আলাপ করার মানে হয় না। দ্বিতীয় বিপদটা আরও বড়। কেবল ঈশ্বরের আইনেই আত্মহত্যা মহাপাপ নয়, রাষ্ট্রের আইনেও আত্মহত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে আত্মহত্যা সফলভাবে সাধন করতে পারেন যাঁরা তাঁরা রাষ্ট্রের শাস্তি ভোগ করবার উপায় পান না (আশঙ্কা করা যায় যে, ঈশ্বরের হাতে পিটানি খাবেন), কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টায় বিফল হন যাঁরা তাঁদের কারও কারও কপালে এই রাষ্ট্রপ্রদত্ত শাস্তি জুটেছে। যেহেতু আত্মহত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই আত্মহত্যার সমর্থকদেরও দণ্ড দেবার চেষ্টা সমাজের লোকজন করে থাকেন। সেটা অত সহজ নয়। তবে, যদি কোনো চিন্তক কোনো বিশেষ আত্মহত্যাকারীকে ‘প্ররোচনা’ দিয়েছেন প্রমাণ করা যায় তবে নির্ঘাত শাস্তি। এখন আইনের প্যাঁচ যাঁরা ভাল বোঝেন, তাঁরা এটাও বুঝবেন সাধারণ দার্শনিক আত্মহনন-সমর্থককে পেঁচায়ে ‘প্ররোচনাকারী’ বা ‘উস্কানিদাতা’ প্রমাণ করা যেতে পারে। এসব আলাপ করা আমার জন্য তাই নিরাপদ লাগেনি কখনও। আমি আইনের ব্যাপারে ভীরুই বলতে পারেন। কিন্তু বলতেই হচ্ছে কারণ আত্মহত্যাকে ভীরুতার সাথে সম্পর্কিত করে দেখানোতে আমি একদম শান্তি পাইনি জীবনে। আমি নিজের জীবন দিয়েই ভালোমতো নিশ্চিত হয়েছিলাম যে ভীরুতার সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক স্থাপন এনসিপির সাথে সিরাজ শিকদারের সম্পর্ক স্থাপনের মতোই হবে। ভীরুতা যদি আত্মহত্যার প্রেষণা হয়, আমি যে মাত্রার ভীরু তাতে কয়েকবার আত্মহত্যা করা হয়ে যেত আমার।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘তুমি তো সেই যাবেই চলে…

আপডেট সময় : ০৪:৫১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এক।
আহা ক্লেশ
নিরন্তর সম্পর্ক যথা প্রগাঢ় তীব্রতম শ্লেষ!

কিংবা যখন সিসিফাসের পাথর বয়ে নিয়ে 
দিবসের শেষভাগে পাহাড়ের অগ্রচূড়া দেখো 
তোমার আনত চোখে পায়ের আঙুলগুলো 
পাহাড়ের পাথুরে গায়ে কপালের ঘামে ভিজে ওঠে
সেই কালে দৈবাদেশ বা মালিকের হুংকারে 
পাথর গড়িয়ে পড়ে নির্জন উপত্যকার মাঝে। 
আহা ক্লেশ! 
সকল সম্পদ শুধু কণা কণা অবিরাম দ্বেষ! 
তুমি তবে যাও, বিদায়ের সুরলিপি করো
আমি তবু রয়ে যাবো এইখানে বসে আজীবন 
যত ভাবে যত শব্দে যত বর্ণে পারি 
লিখে যাবো এপিটাফ, অশেষ অক্লেশ।      
দুই।
আত্মহত্যাকে ভীরুতার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছিল কোন কালে তা আমি অত নিশ্চিত নই। কিন্তু সম্ভবত উপযোগবাদিতা আর মানবতাবাদ দুয়েরই এখানে মারাত্মক [কু]প্রভাব আছে। জীবন একটাই, তা উপভোগ করতে হবে– এই ধরনের দর্শনচর্চার থেকে এসব ভাবনাচিন্তার জন্ম হয়ে থাকতে পারে। মনুষ্যজীবন মহত্তর– এই ধরনের প্রচারণা মানবতাবাদ আর ধর্মবাদ উভয়েরই পছন্দের চিন্তা। ফলে এখানে এক পক্ষের হয়ে আরেক পক্ষকে নিন্দামন্দ করা কাণ্ডজ্ঞানের পরিচায়ক হবে না। আমি তা করতে চাই না। আমার চেনাজানারা জানেন, এখানকার পাঠকদের জানবার কথা নয় যদিও, তবুও আমি যে আত্মহত্যার নিন্দুক নই তা এতক্ষণে স্পষ্ট হবার কথা। এসব চিন্তাভাবনা প্রকাশের বিশাল বিপদ আছে। প্রথম বিপদ হলো আত্মহত্যাকে নিন্দা না-করার সরল অর্থ অনেকে করেন যেন বা আমি আত্মহত্যাকে উৎসাহিত করছি। কোনো কিছুকে নিন্দা না করার মানেই বন্দনা হয় কীভাবে! এভাবে যাঁরা ভাবেন তাঁদের সাথে অধিক আলাপ করার মানে হয় না। দ্বিতীয় বিপদটা আরও বড়। কেবল ঈশ্বরের আইনেই আত্মহত্যা মহাপাপ নয়, রাষ্ট্রের আইনেও আত্মহত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে আত্মহত্যা সফলভাবে সাধন করতে পারেন যাঁরা তাঁরা রাষ্ট্রের শাস্তি ভোগ করবার উপায় পান না (আশঙ্কা করা যায় যে, ঈশ্বরের হাতে পিটানি খাবেন), কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টায় বিফল হন যাঁরা তাঁদের কারও কারও কপালে এই রাষ্ট্রপ্রদত্ত শাস্তি জুটেছে। যেহেতু আত্মহত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই আত্মহত্যার সমর্থকদেরও দণ্ড দেবার চেষ্টা সমাজের লোকজন করে থাকেন। সেটা অত সহজ নয়। তবে, যদি কোনো চিন্তক কোনো বিশেষ আত্মহত্যাকারীকে ‘প্ররোচনা’ দিয়েছেন প্রমাণ করা যায় তবে নির্ঘাত শাস্তি। এখন আইনের প্যাঁচ যাঁরা ভাল বোঝেন, তাঁরা এটাও বুঝবেন সাধারণ দার্শনিক আত্মহনন-সমর্থককে পেঁচায়ে ‘প্ররোচনাকারী’ বা ‘উস্কানিদাতা’ প্রমাণ করা যেতে পারে। এসব আলাপ করা আমার জন্য তাই নিরাপদ লাগেনি কখনও। আমি আইনের ব্যাপারে ভীরুই বলতে পারেন। কিন্তু বলতেই হচ্ছে কারণ আত্মহত্যাকে ভীরুতার সাথে সম্পর্কিত করে দেখানোতে আমি একদম শান্তি পাইনি জীবনে। আমি নিজের জীবন দিয়েই ভালোমতো নিশ্চিত হয়েছিলাম যে ভীরুতার সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক স্থাপন এনসিপির সাথে সিরাজ শিকদারের সম্পর্ক স্থাপনের মতোই হবে। ভীরুতা যদি আত্মহত্যার প্রেষণা হয়, আমি যে মাত্রার ভীরু তাতে কয়েকবার আত্মহত্যা করা হয়ে যেত আমার।