ঢাকা ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মুমিন-হৃদয়ের বসন্ত পবিত্র রমজান

  • meghla
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

প্রচণ্ড খরার পর বৃষ্টি যেমন জমিনের বুকে প্রাণস্পন্দন নিয়ে আসে তেমনি ১১টি মাস ঘুরে রমজান আসে মুমিনের হৃদয়ের প্রাণস্পন্দন হয়ে। অবারিত রহমত, বরকত আর ক্ষমার বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় মাহে রমজান। হাদিসে এই রমজান মাসকে মুমিনের বসন্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়, কবরের আজাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এ মাস যে কারণে সবচেয়ে বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ তা হচ্ছে এই মাসেই মানবজাতির হেদায়েতের জন্য পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। এ মাসেই রয়েছে হাজার রাতের চেয়ে সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর।

এই যে এত এত মাহাত্ম্য নিয়ে রমজান মাস আমাদের মাঝে এসেছে আমরা কি আসলেই একে কাজে লাগাতে পারছি? নিজেদের শোধরে নেওয়ার যে সুযোগ আমাদের কাছে এসেছে, নিজের গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে নেওয়ার যে অপার সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে, সে সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে আমরা পারছি কি?

হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি শবেকদরের রাতে ইমান ও একিন সহকারে ইবাদত করে তারও সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি-৩৮)।

তাই রোজা রাখতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কেবল না খেয়ে থাকাই রোজা নয় বরং এর সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের গুনাহ থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা, গীবত বা পরচর্চা করা, অন্যের ওপর অন্যায় জুলুম করা হলে সে রোজা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে এসেছে, ‘রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি-১৯০৩)

রোজাকে প্রশিক্ষণের মাসও বলা হয়েছে। এই পূর্ণ এক মাস ব্যক্তি নিজেকে সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে নিতে পারে। এই প্রশিক্ষণ কেবল এই এক মাসের জন্যই নয় বরং এই এক মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাকি ১১ মাসও যেন সে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী চলতে পারে তার জন্য। রমজান আমাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়? প্রথমত রমজান আমাদের তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। মানুষ চাইলেই লুকিয়ে খাবার খেতে পারে। কিন্তু সে কেবল আল্লাহর ভয়েই খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং অন্যান্য পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

এ ছাড়াও রোজার মাধ্যমে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সারা দিন না খেয়ে থাকা এবং এর পাশাপাশি সব পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা ধৈর্যের ব্যাপার। দীর্ঘ একটি মাস এভাবে নিজেকে সব ধরনের খারাপ কাজ, সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে মানুষের ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। অশ্লীল কথাবর্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা। অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সঙ্গে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো, আমি রোজাদার। (ইবনে খোযায়মা-১৯৯৬)

অপর একটি হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ  বুখারি-১৯০৪, মুসলিম-১১৫১ )

আর সবাই যখন ব্যক্তিগত জায়গা থেকে নিজেকে শোধরে নিতে পারবে সমাজের চিত্র তখন আপনা-আপনি বদলে যাবে। কারণ ব্যক্তি নিয়েই সমাজ আর সমাজের সেই ব্যক্তিরা যদি ঠিক হয় তাহলে সমাজও ঠিক থাকবে। তাই ব্যক্তিগত জীবন গঠন, নৈতিক মান উন্নয়ন, সমাজের উন্নয়ন এর জন্য রমজান মাস এক মোক্ষম সুযোগ।

আবার এ রোজার মাধ্যমে শুধু ইহকালীন কল্যাণই লাভ হয় না বরং পরকালীন মুক্তির অন্যতম এক মাধ্যম এই রোজা। উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল,  যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের  ঢালের মতো (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৩৯)।

অপর একটি হাদিসে রসুল (স.) বলেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে,  যখন সে আনন্দিত হবে। এক . যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের  কারণে আনন্দ পায়। দুই . যখন সে তার রবের  সঙ্গে মিলিত হবে তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুরে বিএসটিআই ও র‍্যাবের যৌথ অভিযানে ৫ লক্ষ্য টাকা জরিমানা

মুমিন-হৃদয়ের বসন্ত পবিত্র রমজান

আপডেট সময় : ১১:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

প্রচণ্ড খরার পর বৃষ্টি যেমন জমিনের বুকে প্রাণস্পন্দন নিয়ে আসে তেমনি ১১টি মাস ঘুরে রমজান আসে মুমিনের হৃদয়ের প্রাণস্পন্দন হয়ে। অবারিত রহমত, বরকত আর ক্ষমার বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় মাহে রমজান। হাদিসে এই রমজান মাসকে মুমিনের বসন্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়, কবরের আজাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এ মাস যে কারণে সবচেয়ে বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ তা হচ্ছে এই মাসেই মানবজাতির হেদায়েতের জন্য পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। এ মাসেই রয়েছে হাজার রাতের চেয়ে সর্বোত্তম রাত লাইলাতুল কদর।

এই যে এত এত মাহাত্ম্য নিয়ে রমজান মাস আমাদের মাঝে এসেছে আমরা কি আসলেই একে কাজে লাগাতে পারছি? নিজেদের শোধরে নেওয়ার যে সুযোগ আমাদের কাছে এসেছে, নিজের গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে নেওয়ার যে অপার সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে, সে সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে আমরা পারছি কি?

হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের বিশ্বাসে রমজানের রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি রমজানের রাত্রি জাগরণ করে ইবাদতে লিপ্ত থাকে তারও পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি শবেকদরের রাতে ইমান ও একিন সহকারে ইবাদত করে তারও সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি-৩৮)।

তাই রোজা রাখতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কেবল না খেয়ে থাকাই রোজা নয় বরং এর সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের গুনাহ থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা, গীবত বা পরচর্চা করা, অন্যের ওপর অন্যায় জুলুম করা হলে সে রোজা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে এসেছে, ‘রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি-১৯০৩)

রোজাকে প্রশিক্ষণের মাসও বলা হয়েছে। এই পূর্ণ এক মাস ব্যক্তি নিজেকে সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে নিতে পারে। এই প্রশিক্ষণ কেবল এই এক মাসের জন্যই নয় বরং এই এক মাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাকি ১১ মাসও যেন সে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী চলতে পারে তার জন্য। রমজান আমাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়? প্রথমত রমজান আমাদের তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। মানুষ চাইলেই লুকিয়ে খাবার খেতে পারে। কিন্তু সে কেবল আল্লাহর ভয়েই খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং অন্যান্য পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

এ ছাড়াও রোজার মাধ্যমে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সারা দিন না খেয়ে থাকা এবং এর পাশাপাশি সব পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা ধৈর্যের ব্যাপার। দীর্ঘ একটি মাস এভাবে নিজেকে সব ধরনের খারাপ কাজ, সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে মানুষের ধৈর্যের প্রশিক্ষণ হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। অশ্লীল কথাবর্তা ও অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা। অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সঙ্গে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো, আমি রোজাদার। (ইবনে খোযায়মা-১৯৯৬)

অপর একটি হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল ও চেঁচামেচি না করে। কেউ তাকে গালমন্দ করলে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ  বুখারি-১৯০৪, মুসলিম-১১৫১ )

আর সবাই যখন ব্যক্তিগত জায়গা থেকে নিজেকে শোধরে নিতে পারবে সমাজের চিত্র তখন আপনা-আপনি বদলে যাবে। কারণ ব্যক্তি নিয়েই সমাজ আর সমাজের সেই ব্যক্তিরা যদি ঠিক হয় তাহলে সমাজও ঠিক থাকবে। তাই ব্যক্তিগত জীবন গঠন, নৈতিক মান উন্নয়ন, সমাজের উন্নয়ন এর জন্য রমজান মাস এক মোক্ষম সুযোগ।

আবার এ রোজার মাধ্যমে শুধু ইহকালীন কল্যাণই লাভ হয় না বরং পরকালীন মুক্তির অন্যতম এক মাধ্যম এই রোজা। উসমান ইবনে আবিল আস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল,  যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের  ঢালের মতো (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৬৩৯)।

অপর একটি হাদিসে রসুল (স.) বলেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে,  যখন সে আনন্দিত হবে। এক . যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের  কারণে আনন্দ পায়। দুই . যখন সে তার রবের  সঙ্গে মিলিত হবে তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।