জীবনের গল্প অনেক সময় সিনেমার চেয়েও নাটকীয় হয়। তেমনই এক গল্প অভিনেত্রী লতিকার—যিনি তিব্বতের এক অনাথ আশ্রমে বড় হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুম্বাইয়ের আলো-ঝলমলে চলচ্চিত্রজগতে। রাজ কাপুর আর দিলীপ কুমারের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর জীবন যেন ঠিক সিনেমার মতোই।
শুরুর জীবন
লতিকার জন্ম তিব্বতে, কিন্তু বেড়ে ওঠা দার্জিলিংয়ে। তাঁর আসল নাম ছিল হাঙ্গু লামু। বাবা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান, আর মা ছিলেন তিব্বতীয়। অল্প বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। পরে মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। ছোট্ট হাঙ্গুকে স্কটিশ মিশনারিদের পরিচালিত এক অনাথ আশ্রমে রেখে যান। সেখানেই তাঁর শৈশব কাটে, সেখানেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন।
জীবনের কষ্ট-অভাব সত্ত্বেও বাইরের পৃথিবীকে জানার কৌতূহল ছিল প্রবল। পরে সৎবাবার বদলির সুবাদে পরিবার চলে আসে মুম্বাইয়ে—যে শহর একদিন লতিকার ভাগ্য বদলে দেয়।
সিনেমায় আসা
অভিনয় যে একদিন তাঁর পেশা হবে, তা লতিকা কখনো ভাবেননি। কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য পরিকল্পনা করেছিল। একদিন তাঁর প্রতিবেশী, যিনি ছিলেন কত্থক নৃত্যশিল্পী, তাঁকে উৎসাহ দেন চলচ্চিত্রে চেষ্টা করতে। তাঁর পরামর্শেই লতিকা যান মিনার্ভা স্টুডিওতে, যেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কিংবদন্তি অভিনেতা ও পরিচালক সোহরাব মদির।
সোহরাব মদি তাঁর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে শুধু অভিনয়ের সুযোগই দেননি, নতুন নামও দেন—লতিকা। তাঁর বিশ্বাস ছিল, এই নাম দর্শকের মনে দাগ কাটবে।
খ্যাতির শিখরে
১৯৪৪ সালে সোহরাব মদির পরিচালনায় ‘পরখ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে পা রাখেন লতিকা। সংবেদনশীল চোখ ও স্বাভাবিক অভিনয়ে তিনি দ্রুতই দর্শকের মন জয় করেন। পরে রাজ কাপুর ও দিলীপ কুমারের মতো তারকাদের সঙ্গে কাজ করে বলিউডের স্বর্ণযুগের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
বিশেষ করে ১৯৪৮ সালের ‘গোপীনাথ’ ছবিতে রাজ কাপুরের বিপরীতে লতিকার অভিনয় প্রশংসা কুড়ায় সমালোচক ও দর্শক দুই মহলেই। মহেশ কৌল পরিচালিত এই ছবিই তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

হঠাৎ বিদায়
ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকতেই লতিকা হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে যান। কারণ—ভালোবাসা। জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা গোপীর প্রেমে পড়েন তিনি এবং তাঁকে বিয়ে করার পর স্বেচ্ছায় দূরে সরে যান চলচ্চিত্রজগৎ থেকে।
সিনেমার চেয়েও সিনেমাটিক জীবন
শৈশবে পরিত্যক্তা এক অনাথ মেয়ে থেকে একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা—লতিকার জীবন এককথায় প্রেরণার গল্প। লতিকা ছিলেন এক অনাথ শিশু, যিনি পরে বলিউড তারকা হন; আর শেষে এক নারী, যিনি খ্যাতির চেয়ে ভালোবাসাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
ইন্ডিয়াডটকম অবলম্বনে
NEWS21 staff Musabbir khan 























