দেশের অন্যতম বৃহৎ বিনোদনকেন্দ্র গাজীপুর সাফারি পার্কে এখন নেমে এসেছে ধ্বংসের ছায়া। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় দুর্বৃত্তদের হামলা ও লুটপাটে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এই পার্ক আজও সংস্কারের মুখ দেখেনি। প্রাণীর অযত্ন, বেহাল রাস্তা, বন্ধ বেষ্টনী আর ভগ্নপ্রায় অবকাঠামোর কারণে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৯০৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় এটি একসময় রাজধানীবাসীর কাছে ছিল সাপ্তাহিক বিনোদনের অন্যতম পছন্দের স্থান। পার্কটিতে এশিয়ান ও আফ্রিকান সিংহ-বাঘের অভয়ারণ্য, হরিণ চত্বর, পাখিশালা, প্রাণী জাদুঘরসহ নানা আকর্ষণীয় এলাকা ছিল।
কিন্তু ৫ আগস্টের ঘটনায় মূল ফটক, শেখ মুজিবের মুরাল, প্রাণী জাদুঘর, পাখিশালা, পার্ক অফিস, খাদ্যের দোকান, সিসি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও দুটি জিপ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
হামলার তিন মাস ১১ দিন পর দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি খোলা হলেও আজও দশটিরও বেশি বেষ্টনী বন্ধ রয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রাণী দেখতে পারছেন না।
ভেতরের কোর সাফারির চার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে তিন কিলোমিটারেই কাদা, জল ও খানাখন্দ। গভীর গর্তের কারণে বিশেষ সাফারি বাসে ভ্রমণ করতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন পর্যটকরা।
দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রাণীর খাঁচা ও বেষ্টনীগুলো অবহেলায় পড়ে আছে।হরিণের চত্বরে খাবারের অভাব,ঘোড়াগুলো শরীরে চর্বি হারিয়ে শুকিয়ে গেছে,অজগর সাপ অব্যবস্থাপনায়,পাখিশালার অর্ধেক খাঁচা খালি,কার্প মাছের পুকুরে ঘোলা পানি ও কচুরিপানা।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক আব্দুর রহিম বলেন,“এর আগেও সাফারি পার্কে এসেছিলাম, তখন পরিবেশটা চমৎকার ছিল। এবারে এসে হতাশ হয়েছি। আগে জানলে বাচ্চাদের আনতাম না।”
সাভার থেকে আসা হেলাল মিয়া বলেন,“এত টাকা খরচ করে এসে প্রত্যাশার মতো কিছুই পাইনি। প্রাণী দেখা গেলেও আগের মতো আনন্দ নেই, শিশুদের জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থাও নেই।”
সাফারি পার্ককে ঘিরে গড়ে ওঠা আশেপাশের দোকান, রিসোর্ট ও হোটেলগুলোতেও এখন ধস নেমেছে। দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন,“৫ আগস্টের হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য কিছু বেষ্টনী বন্ধ রয়েছে। বাজেট অনুমোদন হলে মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।”
তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া মেলেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে,“দ্রুত সংস্কার ও প্রাণীর যত্নে ব্যবস্থা না নিলে গাজীপুর সাফারি পার্কের জনপ্রিয়তা ধসে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্থানীয় অর্থনীতি, পর্যটন খাত এবং পার্কের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ।”