ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সদরপুরে মা-ইলিশ রক্ষায় অভিযান: ৭ জেলেকে কারাদণ্ড, ৫ হাজার মিটার জাল জব্দ সদরপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে টিভিসি ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন মুক্তির আগে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরায়েল রাজধানীতে ধানের শীষে ভোট চাইলেন যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজ হল্যান্ড-মেসির গোল উৎসবের রাতে পেনাল্টি মিসে ম্লান রোনালদো ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে যা করতে হবে বাংলাদেশকে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে ৬ আরব দেশ আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে ২৩ সেনা নিহত: পাকিস্তান ঝিনাইদহ সীমান্তে ১৪ জনকে আটক করেছে বিজিবি

নিজ ঠিকানায় গাজার বাসিন্দারা: বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপ, ধুলায় মিশেছে স্মৃতি

  • sharmin sanjida
  • আপডেট সময় : ০১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ফিরেছেন আপন ঠিকানায়। কেউ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন, কেউ স্বস্তি পাচ্ছেন নিজের ঘর এখনও টিকে আছে দেখে। যুদ্ধবিরতির সুযোগে রাজা সালমি অনেক পথ হাঁটার পর বাড়ি ফেরেন।

তিনি বলছেন, ‘আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটলাম। প্রতিটি পদক্ষেপে ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। বাড়ি অক্ষত অবস্থায় পাব তো!’ তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। আল-রিমাল এলাকায় পৌঁছে তিনি দেখেন, তাঁর বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

রাজা সালমি এএফপিকে বলেন, ‘বাড়িটি আর নেই। শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। আমি দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম। সব স্মৃতি এখন ধুলায় মিশে গেছে।’ এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি টেকসই হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি এ সপ্তাহান্তে ইসরায়েল ও মিসর সফরের পরিকল্পনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তবে হামাস টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে গাজায় নতুন প্রশাসন মানবে না বলে জানিয়েছে। যুদ্ধোত্তর শাসন ব্যবস্থা ও নিরস্ত্রীকরণে তারা ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। 

আল-রান্তিসি হাসপাতালে শিশু ও ক্যান্সার রোগীর ওয়ার্ডগুলো বিধ্বস্ত। সেখানে উল্টে যাওয়া লোহার খাট, ভাঙা ছাদ ও ছড়িয়ে থাকা চিকিৎসা সরঞ্জামে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফিরে আসা বাসিন্দা সাহের আবু আল-আত্তা বলেন, ‘আমি জানি না কী বলব। ছবিগুলোই যথেষ্ট বলছে– ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস।’ তাঁর প্রত্যাশা ত্রাণ সংস্থাগুলো তাদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে।

গত শুক্রবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং গাজার বেশ কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এতে ক্লান্ত ও ক্ষয়িষ্ণু মানুষজন দীর্ঘ সারি বেঁধে উপকূলীয় সড়ক ধরে উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শনিবার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা নগরীতে ফেরেন। শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট ফেরত আসা মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে জীবিত ও মৃত মিলিয়ে বাকি ৪৭ জনকে ফেরত দেবে। পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে গাজায় আটক এক জিম্মির দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দি এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আটক এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। তবে প্রকাশিত বন্দি তালিকায় হামাসের দাবি করা শীর্ষ কোনো নেতার নাম নেই।

শুক্রবার সকাল ৯টা জিএমটি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কিছু এলাকা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শুরু হয়, যা আগামীকাল সোমবার সকালে শেষ হবে। হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতিকে ‘ইসরায়েলের তথাকথিত বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনার পরাজয়’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষা হয় এবং তাদের কষ্টের অবসান ঘটে।’

জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রথম ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য এক লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) গাজা সমন্বয়কারী জেকব গ্রেঞ্জার বলেন, গাজায় এখনও সবচেয়ে মৌলিক জিনিসগুলোর তীব্র অভাব রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং আশ্রয়স্থল নেই। প্রায় ২০ লাখ মানুষ কনকনে শীতে মাথার ওপরে পাচ্ছেন না ছাদ।

গাজা এখন ভূতুড়ে শহর
নিজেদের বাড়িঘরে ফেরার পথে শিশু, পুরুষ ও নারীরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে চলছেন। কেউ খুঁজছেন নিজেদের ঘর, কেউ ধসে পড়া কংক্রিটের স্ল্যাব ও গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এড়িয়ে চলছেন। অনেকে যানবাহনে ফিরছেন, তবে বেশির ভাগই কাঁধে ব্যাগ বেঁধে হেঁটেই ফিরছেন।

২৮ বছর বয়সী সামি মুসা একাই পরিবারের বাড়ি দেখতে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। যদিও কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে তা মেরামত করতে পারব। গাজা নগরীর ধ্বংস দেখে আমরা হতবাক।’ মুসা বলেন, ‘শহরটিকে একটি ভূতুড়ে শহরের মতো লাগছিল। সেখানে লাশের গন্ধ এখনও বাতাসে ভাসছে।’ তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলব।’

দুই বছরে ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৬৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় ব্যাপকভাবে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা আশাবাদী যুদ্ধবিরতি তাদেরকে অবশেষে ওই অঞ্চলের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার সুযোগ করে দেবে। তবে এই আশার মাঝেও সতর্কতা ছিল প্রবল।

সহায়তা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে ইসরায়েল হয়তো এখনও খাদ্য প্রবেশে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করবে। ৩৪ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত বাবা মারওয়ান আল-মাধুনের মনে একটাই প্রশ্ন, ত্রাণের ট্রাকগুলো কবে পৌঁছাবে। বাড়ি ফেরার পথে তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চারা সবচেয়ে খুশি এই ভেবে যে, অবশেষে মাংস আর মুরগি আসছে। কারণ দুই বছর ধরে তারা এসব খাবার থেকে বঞ্চিত।’

জাতিসংঘের মতে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার হুমকিতে রয়েছে গাজায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা ত্রাণবাহী চালান বাড়াতে প্রস্তুত, তবে অনেক কিছুই এখনও অনিশ্চিত। এখনও বড় সমস্যা হলো প্রবেশাধিকার।

গাজায় বিদেশি প্রশাসন প্রত্যাখ্যান হামাসের
হামাস ও তাদের জোটযুক্ত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো আবারও জোর দিয়ে বলেছে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সময় প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ ও পিএফএলপি হামাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেছে। তারা মনে করেন, গাজায় বৃহৎ মাত্রার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি সোমবার, বললেন ট্রাম্প
গাজায় হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকরা আগামীকাল সোমবার ঘরে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ২০ জন জীবিত ও ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহ হস্তান্তর করা হবে। ট্রাম্প শুক্রবার রাতে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। হামাস ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুরে মা-ইলিশ রক্ষায় অভিযান: ৭ জেলেকে কারাদণ্ড, ৫ হাজার মিটার জাল জব্দ

নিজ ঠিকানায় গাজার বাসিন্দারা: বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপ, ধুলায় মিশেছে স্মৃতি

আপডেট সময় : ০১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ফিরেছেন আপন ঠিকানায়। কেউ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন, কেউ স্বস্তি পাচ্ছেন নিজের ঘর এখনও টিকে আছে দেখে। যুদ্ধবিরতির সুযোগে রাজা সালমি অনেক পথ হাঁটার পর বাড়ি ফেরেন।

তিনি বলছেন, ‘আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটলাম। প্রতিটি পদক্ষেপে ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। বাড়ি অক্ষত অবস্থায় পাব তো!’ তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। আল-রিমাল এলাকায় পৌঁছে তিনি দেখেন, তাঁর বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

রাজা সালমি এএফপিকে বলেন, ‘বাড়িটি আর নেই। শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। আমি দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম। সব স্মৃতি এখন ধুলায় মিশে গেছে।’ এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি টেকসই হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি এ সপ্তাহান্তে ইসরায়েল ও মিসর সফরের পরিকল্পনার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তবে হামাস টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে গাজায় নতুন প্রশাসন মানবে না বলে জানিয়েছে। যুদ্ধোত্তর শাসন ব্যবস্থা ও নিরস্ত্রীকরণে তারা ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। 

আল-রান্তিসি হাসপাতালে শিশু ও ক্যান্সার রোগীর ওয়ার্ডগুলো বিধ্বস্ত। সেখানে উল্টে যাওয়া লোহার খাট, ভাঙা ছাদ ও ছড়িয়ে থাকা চিকিৎসা সরঞ্জামে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফিরে আসা বাসিন্দা সাহের আবু আল-আত্তা বলেন, ‘আমি জানি না কী বলব। ছবিগুলোই যথেষ্ট বলছে– ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস।’ তাঁর প্রত্যাশা ত্রাণ সংস্থাগুলো তাদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে।

গত শুক্রবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং গাজার বেশ কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এতে ক্লান্ত ও ক্ষয়িষ্ণু মানুষজন দীর্ঘ সারি বেঁধে উপকূলীয় সড়ক ধরে উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শনিবার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা নগরীতে ফেরেন। শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট ফেরত আসা মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে জীবিত ও মৃত মিলিয়ে বাকি ৪৭ জনকে ফেরত দেবে। পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে গাজায় আটক এক জিম্মির দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দি এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আটক এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। তবে প্রকাশিত বন্দি তালিকায় হামাসের দাবি করা শীর্ষ কোনো নেতার নাম নেই।

শুক্রবার সকাল ৯টা জিএমটি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কিছু এলাকা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শুরু হয়, যা আগামীকাল সোমবার সকালে শেষ হবে। হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতিকে ‘ইসরায়েলের তথাকথিত বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনার পরাজয়’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষা হয় এবং তাদের কষ্টের অবসান ঘটে।’

জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রথম ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য এক লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) গাজা সমন্বয়কারী জেকব গ্রেঞ্জার বলেন, গাজায় এখনও সবচেয়ে মৌলিক জিনিসগুলোর তীব্র অভাব রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং আশ্রয়স্থল নেই। প্রায় ২০ লাখ মানুষ কনকনে শীতে মাথার ওপরে পাচ্ছেন না ছাদ।

গাজা এখন ভূতুড়ে শহর
নিজেদের বাড়িঘরে ফেরার পথে শিশু, পুরুষ ও নারীরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে চলছেন। কেউ খুঁজছেন নিজেদের ঘর, কেউ ধসে পড়া কংক্রিটের স্ল্যাব ও গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এড়িয়ে চলছেন। অনেকে যানবাহনে ফিরছেন, তবে বেশির ভাগই কাঁধে ব্যাগ বেঁধে হেঁটেই ফিরছেন।

২৮ বছর বয়সী সামি মুসা একাই পরিবারের বাড়ি দেখতে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। যদিও কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে তা মেরামত করতে পারব। গাজা নগরীর ধ্বংস দেখে আমরা হতবাক।’ মুসা বলেন, ‘শহরটিকে একটি ভূতুড়ে শহরের মতো লাগছিল। সেখানে লাশের গন্ধ এখনও বাতাসে ভাসছে।’ তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলব।’

দুই বছরে ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ৬৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তৎপরতা শুরু
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় ব্যাপকভাবে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা আশাবাদী যুদ্ধবিরতি তাদেরকে অবশেষে ওই অঞ্চলের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার সুযোগ করে দেবে। তবে এই আশার মাঝেও সতর্কতা ছিল প্রবল।

সহায়তা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে ইসরায়েল হয়তো এখনও খাদ্য প্রবেশে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করবে। ৩৪ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত বাবা মারওয়ান আল-মাধুনের মনে একটাই প্রশ্ন, ত্রাণের ট্রাকগুলো কবে পৌঁছাবে। বাড়ি ফেরার পথে তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চারা সবচেয়ে খুশি এই ভেবে যে, অবশেষে মাংস আর মুরগি আসছে। কারণ দুই বছর ধরে তারা এসব খাবার থেকে বঞ্চিত।’

জাতিসংঘের মতে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার হুমকিতে রয়েছে গাজায়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা ত্রাণবাহী চালান বাড়াতে প্রস্তুত, তবে অনেক কিছুই এখনও অনিশ্চিত। এখনও বড় সমস্যা হলো প্রবেশাধিকার।

গাজায় বিদেশি প্রশাসন প্রত্যাখ্যান হামাসের
হামাস ও তাদের জোটযুক্ত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো আবারও জোর দিয়ে বলেছে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সময় প্রকাশ করা হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ ও পিএফএলপি হামাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেছে। তারা মনে করেন, গাজায় বৃহৎ মাত্রার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি সোমবার, বললেন ট্রাম্প
গাজায় হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকরা আগামীকাল সোমবার ঘরে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ২০ জন জীবিত ও ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহ হস্তান্তর করা হবে। ট্রাম্প শুক্রবার রাতে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। হামাস ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।