ঝিমিয়ে থাকা কোটালীপাড়া পৌর মার্কেটে এখন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে ক্রেতা ও দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ৬ বছর আগে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌর মার্কেটে লোক সমাগম ঘটাতে ব্যর্থ হলেও বর্তমানে সহ¯্রাধিক রঙিন ছাতা বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। মাত্র ১৫ দিন আগেও সন্ধ্যা হতে না হতেই যা ভুতুরে অবস্থা ছিল তা এখন রঙ্গিন আলোয় আলোকিত।
আগে শুধু বৃষ্টি বা রোদের তাপ থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো ছাতা। এখন বৃষ্টি বা রোদের তাপ থেকে রক্ষার পাশাপাশি সাজসজ্জার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে ছাতা। আর এই ছাতা দিয়ে সাজসজ্জার কাজ করে দৃষ্টিনন্দন করা একটি মার্কেটে বেড়েছে ক্রেতা ও দর্শণার্থীদের ভিড়।
দূরদুরান্ত থেকে এই মার্কেটে ক্রেতারা আসছে তাদের পছন্দ মতো পণ্য ক্রয়ের জন্য। কেউবা আবার আসছে পরিবার নিয়ে ঘুরে ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে।
প্রতিদিনই এমন চিত্র দেখা যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পৌর মার্কেটে। সম্প্রতি এই মার্কেটের বর্ধিত অংশে সহস্রাধিক রঙ্গিন ছাতা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ক্রেতাদের ভিড় বাড়াতে মার্কেটটিকে এই অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
ক’দিন আগেও ক্রেতা শুণ্যতায় মার্কেটটির শত শত দোকান ছিল বন্ধ। এখন সেসব দোকান চালুর পরও শতাধিক নতুন দোকান নির্মাণ করেও বিক্রেতাদের চাহিদামত দোকন বরাদ্দ দিতে হিমশিম খাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
কোটালীপাড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব ভক্ত জানান, গত ৬ বছর আগে কোটালীপাড়া পৌরসভা থেকে ঘাঘর বাজারের উত্তর পাশে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক পৌর মার্কেট গড়ে তোলা হয়। সঠিক পরিকল্পনার অভাবের কারনে মার্কেটের বেচাঁকেনা জমে ওঠেনি।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার স্যার পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি এই মার্কেটি সু-সজ্জিতকরণ ও ক্রেতা সাধারণদের ভিড় বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এরই অংশ হিসেবে প্রায় সহ¯্রাধিক নানা রংয়ের ছাতা দিয়ে মার্কেটের পাশের সড়কগুলো অপরূপ সাজে সাজানো হয়। এই সজ্জিত করণের পর মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম বাড়তে থাকে। অনেকে আবার পরিবার নিয়ে দর্শনীয় এই মার্কেটিতে ঘুরতে আসেন। এখান থেকে তারা ছবি বা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তারাশী গ্রামের স্কুল ছাত্রী তুষ্টি বলেন, আমি আমার বাবা মায়ের সাথে এই মার্কেটে ঘুরতে এসেছি। মার্কেটটি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।
গোপালগঞ্জ বেতারের উপস্থাপক ও আবৃত্তিকার নাজমুল দাড়িয়া বলেন, রঙ্গিন ছাতা দিয়ে সজ্জিত এই মার্কেটের বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি। এরপর বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। দৃষ্টিনন্দন এই মার্কেট দেখে আমরা অভিভ‚ত। এটাকে কোনভাবেই বাংলাদেশের কোন মার্কেট মনে হচ্ছে না। এটিকে ভিয়েতনাম বা বিশে^র উন্নত কোন দেশের মার্কেট বলে মনে হচ্ছে।
মার্কেটে ঘুরতে আসা গৃহিনী নুসরাত জাহান বলেন, আমি আমার সন্তানদের নিয়ে মার্কেটে ঘুরতে এসেছিলাম। এখানে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য পছন্দ হওয়ায় কিনে নিলাম। মার্কেটে পছন্দনীয় সামগ্রী পেয়ে ও দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লাগছে।
মিরাজ নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আগে এখানে খুব একটা কেউ কেনাকাটা করতে আসতো না। যার কারনে বরাদ্দ নেওয়া ৮০ শতাংশ দোকান বন্ধ থাকতো। পৌরসভার নতুন প্রশাসক ১ মাসের মধ্যেই পাল্টি দিয়েছেন এই মার্কেটের চিত্র। আমি নতুন দোকান নিয়েছি এখানে। ক্রমেই বেচাকেনা বাড়ছে।
গার্মেন্টসের দোকান আর এস এক্সক্লুসিভ এর বিক্রেতা জনি বিশ্বাস বলেন, আগে যেখানে সারাদিন ১ হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারতাম না এখন প্রতিদিন ২০ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। ৬ বছর ধরে এখানে দোকান দিয়ে লোকসান গুনেছি। গত কয়েকদিন ধরে লাভের মুখ দেখছি।
পৌর মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির বিন সামসুদ্দিন বলেন, কতৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাবে এতোদিন মার্কেটটি আলোর মুখ দেখেনি। অনেক ব্যবসায়ী এখানে দোকান নিয়ে সর্বসান্ত হয়েছিল। বর্তমান পৌর প্রশাসক শাহীনুর আক্তারের পরিকল্পনায় আলোর মুখ দেখেছে মার্কেটটি। আমরা ব্যবসায়ীরাও তাকে ধন্যবাদ জানাই।
কোটালীপাড়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তার বলেন, মার্কেটটি নির্মাণের পরে ক্রেতাসাধারণ না আসায় প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থায় গোপালঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্যারের নির্দেশনায় আমরা মার্কেটিকে রঙ্গিন ছাতাসহ নানা উপকরণ দিয়ে সজ্জিতকরণ করা হয়। যেখানে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মার্কেট স্থবির ছিল সেখানে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রঙ্গিন ছাতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন সড়ক, একটি শিশু পার্ক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৮৭ টি দোকান নির্মাণের ফলে পাল্টে যায় পুরো চিত্র। আগে ৮০ শতাংশ দোকান বন্ধ থাকলেও এখন ব্যাপক চাহিদার কারনে নতুন ব্যবসায়ীদের চাহিদামত দোকান বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এখন এই মার্কেটটিকে দেখতে ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা আসছেন। মার্কেটটিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম বাড়াতে আগামীতে আমরা আরো নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।