লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ও খামারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৪ মাস পর মামলা দায়ের করা হয়। যার ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল ২ নভেম্বর একজন সাংবাদিকসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলমগীর বাদশা, আওয়ামী লীগ সমর্থক চিনিপাড়া গ্রামের রতন মিয়া, এবং পাশ্ববর্তী মোস্তফি এলাকার শ্রমিক লীগ কর্মী মমিদুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদে সরকারিভাবে বরাদ্দ আসা ভিজিএফ টিআর কাবিখা প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ভাগ দাবি করে ইউনিয়ন পরিষদে লোকজন পাঠাতেন জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব। সরকারি বরাদ্দের অংশের ভাগ না পেয়ে বিপ্লবসহ আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পরিকল্পনা করেন। বিপ্লবের হুকুমে অভিযুক্তরা গত ২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ মন্ডলের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ি লুটপাট করে দুটি পিকআপ ভ্যানে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এতে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালপত্র লুট হয়।
পরে লুটপাট হওয়া মালামাল ফেরত দেওয়ার কথা বলে পুনরায় চাঁদা দাবি করা হয় বাদীর কাছে। এতে রাজি না হলে এর দুই দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুনরায় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডলের মাহি পোল্ট্রি ফার্মে হামলা চালিয়ে ৫ হাজার মুরগিসহ প্রায় ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকার পণ্য লুট করে। এতেও থেমে থাকেনি লুটপাটকারীরা। এর চার দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের দুই একর জমির পুকুরে জাল ফেলে প্রায় সাত লাখ ৮০ হাজার টাকার মাছ লুটপাট করেন অভিযুক্তরা।
তিন দফায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য লুটপাট করে অভিযুক্তরা। এসব ঘটনার বিচার দাবি করে ঘটনার প্রায় ১৪ মাস পরে গত ২ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লবকে প্রধান করে ৫৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ। এ মামলায় ৪৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের সদস্য দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল “লালমনি টাইমস” এর নির্বাহী সম্পাদক রাসেল হককে। এছাড়া সব অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ওই মামলায় সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ২ নভেম্বর রাতে এজাহারনামীয় দুজন এবং অজ্ঞাতনামা একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।
অভিযুক্ত সাংবাদিক রাসেল হক বলেন, ‘যে ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটি একটি হয়রানি উদ্দেশ্যে করা মামলা। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের সাবেক সভাপতি মোফাকখারুল ইসলাম মজনু মন্তব্য করেন, ‘যদি সাংবাদিককে হয়রানি করা হয়, তবে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। যেভাবে একজনের নামে ইচ্ছে মতো মামলা দেওয়া হচ্ছে, তা শুধু হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের জানান, ‘ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্টে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।