সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের নামে-বেনামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা ইউনিট।
আরো পড়ুন: ছদ্মবেশ ধরেও রক্ষা পেলেন না ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের তিনটি শাখায় তার ২৪টি এফডিআরের অনুকূলে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৮ টাকার স্থিতি পাওয়া গেছে। দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকেও তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি অবসরে যাওয়া কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদার তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে টাকা তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিএফআইইউ এবং দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট জানতে পেরে তাদের নামে এফডিআরের অনুকূলে থাকা ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৮ টাকার স্থিতি আটকে দিয়েছে। এছাড়া তাদের নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের (১৭ অক্টোবর) মধ্যে বিএফআইইউ এবং দুদক থেকে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে এরইমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রঞ্জিত কুমার তালুকদারের স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের নামেই শুধু বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৩টি শাখায় ২৪টি এফডিআর হিসাবের অনুকূলে মোট ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮১৮ টাকার স্থিতি পেয়েছে। এছাড়া তাদের নামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ধামরাই ব্রাঞ্চে আরও কয়েক কোটি টাকার স্থিতি রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু দুদকের গোয়েন্দাদের গোপন অনুসন্ধানে হিসাব নম্বর ও স্থিতির পরিমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় দুদক প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ঝুমুর মজুমদারের ছোট ভাই অমিত মজুমদার পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডে কর্মরত আছেন। এই পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন শাখায় রঞ্জিত কুমার তালুকদার এবং ঝুমুর মজুমদারের নামে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। রঞ্জিত কুমার তালুকদারের শ্যালিকা কাকলী মজুমদার কমার্স ব্যাংকের প্রধান শাখায় কর্মরত। কাকলী মজুমদারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন শাখায় টাকা জমা রাখেন তিনি। রঞ্জিত কুমার তালুকদারের শাশুড়ি কল্যাণী মজুমদারের নামেও প্রায় দেড় কোটি টাকার এফডিআরের তথ্য পাওয়া গেছে। তার শাশুড়ি কল্যাণী মজুমদারের কোনও আয়ের উৎস না থাকলেও তিনি কীভাবে এত টাকার এফডিআর করলেন, সেই অনুসন্ধানও চালাবে দুদক।
কল্যাণী মজুমদারের নামে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে একটি বাড়ি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। কল্যাণী মজুমদারের স্বামী একজন স্বল্প বেতনভুক্ত শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার বেতন ভাতা দিয়ে এত সম্পদ করা সম্ভব নয়। শাশুড়ির নামে অর্জিত সম্পদ মূলত রঞ্জিত কুমার তালুকদারের অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার একটা অপচেষ্টা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। রঞ্জিত কুমার তালুকদারের স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের ভাইয়ের স্ত্রী রুমা মজুমদারের ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পারেন গোয়েন্দারা, যা রঞ্জিত কুমার তালুকদারের টাকা বলে মনে করেন তারা। এছাড়া রঞ্জিত কুমার তালুকদার এবং তার স্ত্রীর নামে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে এবং সাভারে ৩টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু দুদকের গোপন অনুসন্ধানে তাদের নামে বাড়ি ও ক্রয়কৃত জমির বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন করার জন্যই দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে।
জানা যায়, সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর ক্যাডার) কর কমিশনার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। রঞ্জিত কুমার তালুকদারের স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের নামে থাকা বেশিরভাগ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রকৃতপক্ষে রঞ্জিত কুমার তালুকদারের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ।