সামছুল আলম দাদন মুন্সী। পরিচয় নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি। নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকায় রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে যখন যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ান বিএনপির এই নেতা।
অভিযোগ উঠেছে, তার ইশারায় ওয়াপদা বাজার হাটটি মূলফৎগঞ্জে সরানো হয়। এমনকি হাট মিলিয়ে দোকানের ভিটি বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় কয়েক কোটি টাকা। সেই টাকা আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খান বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাদারীপুরের পতিতালয়ের দালাল নামে পরিচিত এই বিএনপি নেতা শুরু করেন সুরেশ্বর মাছের আড়ৎ খোলা বন্ধের বাণিজ্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি দাবি করেন মোটা অঙ্কের চাঁদা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলেই মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাদন মুন্সী। শুধু মিথ্যা মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি নড়িয়ার মডেল থানাটিও তার হাতের মুঠোয় রেখেছেন জিম্মি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলার চার্জশীট থেকে আসামীর নাম বাদ দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে তার। এ যেন এক মামলা বানিজ্য। ছেলে সিয়ামকে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম। যাকে তাকে মারধর, হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে সিয়াম। প্রতিদিন ছেলেকে দিয়ে নদী পথেও তোলেন লাখ লাখ টাকার চাঁদা।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, রাজনৈতিক পরিচয়ে অপকর্মের সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দাদন মুন্সী। গ্রাম্য সালিশে বসলে ঘুষ নেন দুপক্ষ থেকে।যে পক্ষ ঘুষ বেশি দেন তার পক্ষেই রায় দেন মুন্সী বাড়ির এই নেতা। দীর্ঘ দিনের ত্যাগী তৃণমূল বিএনপি নেতাদেরকে রেখেছেন তিনি কোনঠাসা করে। কাউকেই মাথা নাড়িয়ে উঠতে দেন না তিনি। বহুবছর কমিটিতে থাকা সদস্যদের বাদ দিয়ে বিত্তশালীসহ আ’লীগের সমর্থকদের কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে রেখে আশ্রয় দেওয়ার ও অভিযোগ উঠেছে বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এই নেতার বিরুদ্ধে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে যে, পদ্মা নদীতে বিশাল আকারের ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে দেদারসে তোলা হচ্ছে বালু। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক বালুর জাহাজ লোড করে বিক্রিও করেন বিএনপির এই নেতা। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে আজহার শিকারী, পচু খা, ফিরোজ খা ও মোস্তফা খা।
নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রতিদিন লাখ লাখ টাহার বালু তুইল্যা আবার পাইকারী দামে বেচেন এহানকার বিএনপির নেতা দাদন মুন্সী। ড্রেজার দেখভাল করে আজহার শীকারি। আমরা আইছি তো কন্ট্রাক্টে। দিন হিসাব কইরা টাহা পাই’
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নড়িয়া থানার এক পুলিশের কর্মকর্তা জানান, ‘পুলিশ সবই জানে। কিন্তু ওসি স্যার তো ম্যানেজড। গোড়ায় টাকা দিলে সব অবৈধই বৈধ। আর দাদন মুন্সী যেমনে বলে থানার সবাই তো তেমনেই চলে।’
দাদন মুন্সীর বিরুদ্ধে ভয়ে গনমাধ্যমে কথা বলতে চান না কেউ। তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলেন, ‘পয়সাওয়ালা কাউকে দেখলেই দাদন মুন্সী ডাইকা নিয়া চাঁদা চান। আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাইছিলো। পরে আমি দিতে অস্বীকার করলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাকে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে আমি আইনের দ্বারস্থ হই। কিন্তু পুলিশ আমাকে বললো, অল্পতে ভেজাল মিটাইয়া ফেলেন। পরে নিরুপায় হইয়া আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে দাদন মুন্সী আমাকে আর ডিস্টার্ব করে না। আমার মতো অনেক মানুষের কাছ থেকে তিনি জোর পূর্বক টাকা দাবি করে নিয়েছেন। আমি তার অপকর্মের বিরুদ্ধে শাস্তি চাই।’
পাহাড় সমান অপকর্মে জড়ান এই দাদন মুন্সী
◼ মূলফৎগঞ্জে হাটের দোকান বরাদ্দের নামে হাতিয়ে নেন দুই কোটি টাকা, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারাও পান এটাকার ভাগ।
◼ ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি পদ বিক্রি করেন ২ লাখে সা:সম্পাদক পদের জন্য নেন ১ লাখ।
◼ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অবহেলিত বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে আ’লীগের সমর্থকদের আশ্রয় দিচ্ছেন তিনি।
◼ চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন।
◼ মোটা অঙ্কের টাকায় চার্জশীট থেকে বাদ দেন নাম।
◼ দিনদুপুরে প্রকাশ্যে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেন।
◼ ছেলেকে দিয়ে চালান সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
◼ ঘুষ ছাড়া গ্রাম্য বিচার করেন না তিনি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চেয়ে দাদন মুন্সীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।