সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের ঘটনা বেড়েছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়। সে সুযোগেই এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ পাচার হচ্ছে বলে খবর মিলেছে।
একই সঙ্গে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে রসুন। এর বিপরীতে পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ ও চিনি। তবে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছেন।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সীমান্ত এলাকা বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ১৯ লাখ ভারতীয় রুপিসহ হৃদয় মিয়া নামে এক তরুণকে আটক করে বিজিবি।গতকাল শুক্রবার তাঁকে দোয়ারাবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রসুন পাচারের টাকা নিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে ফেরার সময় হৃদয়কে আটক করে বিজিবি। হৃদয় বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অন্তত ৮০০ বস্তা রসুন নিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে দেশীয় রসুন এখন প্রতি কেজি ২০০ টাকা। চায়না রসুন বিক্রি হয় ২০৪ টাকা কেজিতে। কোনোভাবে এসব রসুন ভারতীয় সীমানার ডালিয়া-কাসিন্দা নিয়ে গেলেই কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। এ জন্যই রসুন পাচার বাড়ছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, চট্টগ্রাম, সিলেট, ছাতক হয়ে সীমান্তের বাংলাবাজার পর্যন্ত পিকআপ বা ট্রাকে আসছে চায়না রসুন। পাচারকারীরা এসব রসুন বাংলাবাজার থেকে অটোরিকশায় করে মৌলারপাড় পৌঁছায়। এ ছাড়া পাচারের আরেকটি রুট বাংলাবাজার থেকে বোগলা। এর পর চিলাই নদীর রাবারড্যাম হয়ে অটোরিকশায় পুরোনো বাঁশতলা। শেষে চৌধুরীপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে মৌলারপাড় নিয়ে পাচারের মালপত্র জমা করা হয়।
সূত্র বলছে, মৌলারপাড় এলাকা রীতিমতো চোরাচালানের বন্দর হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ শ্রমিক এপার থেকে রসুন, ইলিশ, শিং, শুকনো সুপারি বহন করে পাচারকারীদের সহায়তা করছে। বিনিময়ে ওপার থেকে আসছে চিনি-পেঁয়াজ। এসব মালপত্র বহনকারী শ্রমিকদের কাছে দাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র থাকে সবসময়।
অপরিচিত কাউকে দেখলেই মারমুখী হয়ে ওঠে তারা। শ্রমিকদের সর্দারদের কাছে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও। মাঝে মাঝে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কও সৃষ্টি করে তারা। ভারতের কাসিন্দা ও ডালিয়া বস্তিতে রসুনের বস্তা পৌঁছে দিচ্ছে এসব শ্রমিক। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ পিলারের অংশটুকু ছেঁড়া থাকায় সেদিক দিয়ে মালপত্র ঢোকানো হচ্ছে। তা ছাড়া সীমান্ত সড়কের কালভার্টের ভেতর দিয়েও একটু কষ্ট করলেই ভারতে ঢোকা যাচ্ছে মালপত্র নিয়ে।