আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্য। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য আবশ্যক। আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই তাঁর আনুগত্য আর তা অমান্য করা গুনাহ ও অবাধ্যতা। প্রকৃত মুমিন সর্বদা তার রবের অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।
কারণ তার অন্তরে আছে আল্লাহভীতি। যার অন্তরে আল্লাহভীতি আছে সে তার প্রতিপালকের অবাধ্যতা ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয় না। একাকী হোক বা দলবদ্ধ, ঘরে কিংবা বাইরে, জনসম্মখে বা আড়ালে সে গুনাহে জড়ায় না। কখনো কোনো গুনাহ হয়ে গেলে অনুতপ্ত হয়।
কালবিলম্ব না করে তার রবের কাছে তাওবা করে ফেলে। নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে। এটাই প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। হাদিস শরিফে তাওবাকারী মুমিনের প্রশংসা করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক আদম সন্তান গুনাহগার আর গুনাহগারদের মধ্যে উত্তম হলো তাওবাকারী। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫১)
গুনাহ হয়ে যাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। গুনাহের প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা, পরিবেশের তাড়না মানুষকে বিভিন্ন পাপ কাজে জড়িয়ে ফেলে। তবে তাওবা করতে দেরি করাই আশ্চর্যের বিষয়।
মানুষ ঈমানি দুর্বলতা, আল্লাহভীতির অভাব এবং পরকালীন জবাবদিহির ব্যাপারে অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে নিজেদের পাপ তুচ্ছজ্ঞান করে। অবাধে করে গুনাহের কাজ। অথচ ছোট গুনাহের ব্যাপারেও নবীজি (সা.) সতর্ক করে গেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘তোমরা এমন সব কাজ করো, যা তোমাদের দৃষ্টিতে সূক্ষ্ম, কিন্তু আমরা নবীর যুগে এগুলোকে ধ্বংসাত্মক মনে করতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৯২)
হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, সাহাবায়ে কিরাম ছোট ছোট গুনাহকেও ভয় করতেন। কিন্তু বর্তমান আমরা গুনাহকে কোনো অপরাধ মনে করি না। অথচ প্রকৃত মুমিন তো গুনাহকে পাহাড়সম মনে করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘মুমিন তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পাহাড়ের নিচে বসে আছে, আর সে আশঙ্কা করছে পাহাড়টি তার ওপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকের ডগায় বসে চলে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ ওই লোকদের মতো, যারা কোনো খোলা মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত তারা এ পরিমাণ লাকড়ি সংগ্রহ করল, যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো সম্পন্ন হলো। নিশ্চয়ই (তাওবা ছাড়া) ছোট ছোট গুনাহ যখন জমে যাবে, তখন তাদের ধ্বংস করে ফেলবে।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে, অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৮০৮)
পাপ ছোট হোক বা বড়—শেষ পরিণাম জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সব পাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।