মাদকসহ আটকের পর অর্থের বিনিময়ে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তিন মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গত ২১ জুন ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ ছয়জন মাদক কারবারিকে জয়পুরহাট জেলার শিমুলতলী মোড় এলাকা থেকে আটক করে জয়পুরহাট গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। আটকের পর ঘটনাস্থল থেকেই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়া আটকের কয়েক ঘন্টা পর অপর তিন মাদক কারবারির নিকট থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জানা যায়, গত ২১ জুন দুপুরে জয়পুরহাট গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল আলী ইমাম সম্রাটের নেতৃত্বে ৫-৭ জন পুলিশের একটি দল জয়পুরহাটের শিমুলতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ ছয়জনকে আটক করে। আটক ওই ছয় মাদক কারবারির মধ্যে বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপনের ভাই রতনও ছিলো। আটক অপর ব্যক্তিরা হলেন, মো: শুভ হোসেন, অমিত হোসেন, মো: মিন্টু হোসেন তবে আটকের পর পরই ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রতনসহ তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটকের পর পরই ঘটনাস্থল থেকেই ছাড়া পেয়েছে,চকতাল গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদ এর ছেলে মো: রতন হোসেন, চকবোয়ালী গ্রামের মো: আশরাফ হোসেন এর ছেলে মো: মোস্তফা শাহারিয়ার এবং নন্দাহার গ্রামের, সুমন হোসেন। পরে আটককৃত আসামী ৩জনকে গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল, আলী ইমাম সম্রাট এর আত্মীয় মাদক কারবারি সাজুর মাধ্যমে ৪লাখ ৮০হাজার টাকা লেনদেন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
আটককৃত অমিত হোসেন,মিন্টু হোসেন বলেন, পাঁচবিবি থেকে মোস্তফা শাহারিয়ার ৪০ বোতল ফেনসিডিল এবং এক বোতল বিদেশী মদ নিয়ে আশার পথে শিমুলতলী এলাকায় আটক করেন। আটকের পরে আমাদের তিন জনকে ডিবি অফিসে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে মারধর করে এবং বলেন টাকা দিয়ে ছেড়ে দিবে। আলী ইমামের শশুর সাজু সাড়ে ৫লাখ টাকা দাবী করে। পরে ৪লাখ ৮০হাজার টাকা চুক্তি করে ৪লাখ ৫০হাজার টাকা দিলে আমাদের ৩জনকে ছেড়ে দিয়েছে। আবার বাঁকী ৩০হাজার টাকা ২২জুন তাদের অফিসের সাইডে গিয়ে ডিবি অফিসারকে দিতে হয়েছে। এগুলো কথা বাহিরে ফাঁস করলে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাড়ী থেকে তুলে যাবার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
ঝাড়ঘড়িয়া গ্রামের মাদক কারবারি আবুল কালাম আজাদ (সাজু) বলেন, আলী ইমাম আমার সম্পকে জামাই তার সাথে কথা হয়। কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বলেন ২১ জুন শুক্রবারের লেনদেন এর বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। জামাই কি করেছে জামাই জানে। তবে আমি মাদক কারবারি নয়, মাদক ব্যবসা করিনা বলেও জানান।
এবিষয়ে মোস্তফা শাহারিয়া বলেন, আমার মাদক কারবারির বিষয়টি সঠিক নয়। আমি কোনো প্রকার মাদক ব্যবসায়ীর সাথে জরিত নয়। সেদিন আমাকে আটক করেনি। আমি আগেই চলে এসেছি। তবে ৩ জনকে ডিবি আটক করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে এটি সঠিক।
এবিষয়ে জয়পুরহাট গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেব,আলী ইমাম এর সাথে আটককৃত আসামীদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন,সেই দিন কোনো মাদক কারবারিকে আটক করা হয়নি। আর টাকা নেওয়ার তো কোন প্রশ্নই আসেনা।
জয়পুরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ, শাহেদ আল মামুন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মাদক কারবারিকে মাদকসহ আটক করার পরে ছেরে দেওয়ার সুযোগ নেই। ৪লাখ ৮০হাজার টাকা নিয়ে আসামী ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তিনি অস্বীকার বলেন আমার জানা নেই।
এবিষয়ে জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম এর সাথে কথা বললে তিনি সাথে সাথে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (ডিবি) কে তাদের বিরুদ্ধে সত্যতা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিদের্শ প্রদান করেন। এমন ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের চাকরি খেয়ে ফেলাবো বললেন, জয়পুরহাট পুলিশ সুপার।